কক্সবাজারে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা চলতি মৌসুমে একদিনে সর্বোচ্চ। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে আজ শুক্রবার ১২টা পর্যন্ত এ বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ অবস্থান করায় দেশের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
এদিকে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে কক্সবাজারে পৃথক পাহাড় ধসের ঘটনায় ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নে টানা বর্ষণের ফলে পাহাড় ধসের ঘটনায় দুই মেয়ে ও তাদের মায়ের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভারি বর্ষণে পাহাড় ধসের ঘটনায় একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিভীষণ কান্তি দাশ এ মৃত্যুর ঘটনা নিশ্চিত করেছেন।
ভারি বৃষ্টিপাতে শহরের ৯০ শতাংশ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। মূল সড়ক এবং সৈকতের রাস্তাসহ প্রায় ৩৫টি উপসড়ক ডুবে গিয়ে শত শত দোকানের মালামাল নষ্ট হয়েছে। হাজারো বাড়িঘর পানির নিচে তলিয়ে গিয়ে শহরের আট লাখ বাসিন্দার জীবন স্থবির হয়ে গেছে। সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় মানুষের চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। হোটেল-মোটেল জোনের ১৮টি রাস্তা জলাবদ্ধতায় বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে কয়েক হাজার পর্যটক আটকা পড়েছেন।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার জানান, ভারি বর্ষণ হলেই হোটেল-মোটেল জোনে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়, যা পর্যটকদের দুর্ভোগ বাড়ায় এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব সৃষ্টি করে। পাহাড় কাটার ফলে নালা ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির পানি দ্রুত সাগর বা নদীতে নামতে পারে না, যার ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।
শহরের বাসিন্দা, ৮০ বছর বয়সী সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালক মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, গত ৫০ বছরে আমি এমন ভারি বৃষ্টি দেখিনি। কক্সবাজারে এমন জলাবদ্ধতাও দেখিনি।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে পৌরসভার মেয়রসহ অধিকাংশ কাউন্সিল আত্মগোপনে আছেন, যার ফলে নালা-নর্দমা ময়লা-আবর্জনায় পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। এদিকে ভারি বর্ষণ এবং পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানি নালা দিয়ে নেমে যেতে পারছে না বলেই শহরজুড়ে এমন জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। সড়কের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
স্থানীয়দের মতে, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট থেকে শুরু হওয়া ভারি বর্ষণ শুক্রবার দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত অব্যাহত ছিল, যা গত ৫০ বছরে কেউ দেখেনি। এর ফলে শহরের ১২টিরও বেশি পাহাড়ে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে এবং বেশ কয়েকটি স্থানে ভূমিধস হয়েছে।
টানা ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে পুরো কক্সবাজার শহর ডুবে গেছে। স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে কলাতলী সৈকত সড়কসহ শহরের অনেক অংশ পানিতে তলিয়ে যায়। কলাতলী এলাকার ৫০০-এর বেশি হোটেল ও গেস্টহাউসের ১৮টি অভ্যন্তরীণ রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে যায়, ফলে হাজার হাজার পর্যটক হোটেলে আটকা পড়েন।
শহরের প্রধান সড়কসহ বাজারঘাটা, বড়বাজার, এন্ডারসন সড়ক, টেকপাড়া, বার্মিজ মার্কেট, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, গোলদিঘিরপাড়, তারাবনিয়াছড়া, এবং রুমালিয়ারছড়ার শত শত দোকান ও বাড়িঘর পানিতে ডুবে গেছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিভীষণ কান্তি দাশ জানান, শুক্রবার সকালে ঝিলংজা এলাকায় নিহত তিনজনের পরিবারকে ৭৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরতদের সরিয়ে আনছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চারটি টিম কাজ করছে।