সুপরিকল্পিতভাবে দেশের জাতীয় ঐক্য বিনষ্টের ষড়যন্ত্র চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার বিপ্লবে এ বিজয় অর্জিত হয়েছে। এ বিজয়কে ধরে রাখতে হবে, যাতে সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যায়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জাতীয়ভাবে যে ঐক্য গড়ে উঠেছে, সেটা সুপরিকল্পিতভাবে বিনষ্টের ষড়যন্ত্র চলছে।’
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। প্রায় এক দশক পর দেশে ফেরায় সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীকে সংবর্ধনা দিতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতীয় প্রেস ক্লাব, বিএফইউজে, ডিইউজে, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি ও ঢাকা সাংবাদিক সমবায় সমিতি।
অনুষ্ঠানে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে আমাদের যে ঐক্য সৃষ্টি হয়েছিল, সে ঐক্য যেন আমরা অটুট রাখতে পারি। আজকে সুপরিকল্পিতভাবে সেই ঐক্য বিনষ্ট করার চক্রান্ত চলছে। এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়ে গত ১৫ বছরে অনেকেই নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। অনেকেই দেশছাড়া হয়ে দীর্ঘদিন নির্বাসনে থেকেছেন। তবে দেশপ্রেমিক জনতা দেশের বাইরে থেকেও গণতন্ত্র রক্ষায় সংগ্রাম করে গেছে।’
এ সময় সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর ভূয়সী প্রশংসা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তিনি গণতন্ত্রের সত্যিকারের নায়ক। আমরা যখন কথা বলতে পারিনি, তখন মুশফিক আমেরিকা এবং ইউরোপে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করেছেন। এমন সন্তান বাংলার ঘরে ঘরে জন্ম নেওয়া দরকার।’
অনুষ্ঠানে মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, ‘স্বৈরাচার মুক্ত করে দেশের মানুষ এখন মুক্ত বাতাসে বসবাস করছে। নতুন করে স্বাধীনতা আনতে ছাত্র-জনতা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। তবে, বেশ আগে থেকেই কিন্তু বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলন করে আসছে। একটা পর্যায়ে যার সমাপ্তি করেছে ছাত্র-জনতা।’
তিনি বলেন, ‘এখনো ষড়যন্ত্র কিন্তু থেকে নেই। তাই আমাদের ঐক্য ধরে রাখতে হবে। কারণ স্বৈরাচারের দোসররা এখনো বসে নেই। তাই এ আন্দোলনে কার ভূমিকা কম বা বেশি ছিল তা নিয়ে আমাদের তর্ক করার সময় এখন নয়। দেশটাকে নিয়ে কেউ যেন আর ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। আমরা একটি কার্যকর রাষ্ট্র ও গণতন্ত্র চাই। যা দেশের মানুষের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।’
প্রতিবেশী দেশ ভারতকে উদ্দেশ্যে করে মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, ‘দেশটি আমাদের নিকট প্রতিবেশী। আমরা চাই ভারত বিশেষ কোনো দল বা গোষ্ঠী বা ব্যক্তির প্রতি সম্পর্ক না করে দেশের মানুষের চাওয়াকে প্রধান্য দেবে। যেটি তারা করে আসছে বেশ আগে থেকে। আমি এরই মধ্যে ভারতের কয়েকজন দায়িত্বশীল পর্যায়ের মানুষের কাছে আবদেন করেছি- তারা যেন এ দেশের সব দল বা মানুষের প্রতি সমআচরণ করেন।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন নোবেলজয়ী। যে কারণে আমরা গর্বিত। এই সরকারের সব উপদেষ্টা তাদের নিজস্ব সেক্টরে অত্যন্ত দক্ষ ও পরিচিত। আমরা আশা করছি জনগণের পালস বুঝে তারা কাজ করবেন।’
অনুষ্ঠানে সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীকে ফুলেল সংবর্ধনা দেন সাংবাদিক নেতারা। এছাড়া বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন ও ব্যক্তি পর্যায় থেকেও তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। জাস্টনিউজবিডি ডটকমের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক খালিদ হোসেন, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সাঈদ খান ও নিজস্ব প্রতিবেদক মোহাম্মদ মোস্তফার নেতৃত্বে সম্পাদক মুশফিকুল ফজল আনসারীকে সংবর্ধনা জানানো হয়।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন- সরকারি কর্মকর্তা সমিতির নেতা ড. নেয়ামত উল্যাহ, বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব অ্যাডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রমাণিক, মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভুঁইয়া, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি এম আব্দুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাবেক সভাপতি এলাহী নেওয়াজ খান সাজু, কবি আব্দুল হাই সিকদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম প্রমুখ।
শেখ হাসিনা সরকারের কঠোর সমালোচনার জন্য পরিচিত সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী প্রায় এক দশক নির্বাসনে থাকার পর বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে ফিরেছেন।