মহিউদ্দিন আল আজাদ,চাঁদপুর প্রতিনিধি: চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে শিক্ষার্থীদের সাথে ১ মাস পূর্বে ঘটে যাওয়া এক তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার গভীর রাত পর্যন্ত পৌরসভাধীন টোরাগড় গ্রাম ও মকিমাবাদ সর্দার বাড়ীর লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা।
এ ঘটনায় চাঁদপুরের প্রধান ব্যবসায়ীক প্রাণকেন্দ্র হাজীগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে কয়েকটি দোকান ভাংচুর করা হয়। জ¦ালিয়ে দেয়া হয় কয়েকটি মোটরসাইকেল, ভাংচুর করা হয় জেলা পরিষদ মার্কেট, কয়েকটি সিএনজি। পরে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাজার পরিস্থিতি সাবেক রাখতে শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে টোরাগড় গ্রামের নেতৃ স্থানীয়দের নিয়ে বৈঠকে করে থানা পুলিশ। পরে বিকেলে মকিমাবাদ সর্দার বাড়ীর লোকজনের সাথে বৈঠক করা হয়। বৈঠক চলাবস্থায় হাজীগঞ্জ বাজারে আবারো মিছিল করে এক পক্ষ এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সংঘর্ষ চলে রাত ১২টা পর্যন্ত। এক পর্যায়ে সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
এ সময় সংঘর্ষে হাজীগঞ্জ বাজারে ৮/১০জন নিহত হওয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ দিকে রাত সাড়ে ১২টার সময় হাজীগঞ্জ বাজার পরিদর্শন করেন নবাগত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন ও নবাগত পুলিশ সুাপর (এসপি) মুহম্মদ আব্দুর রকিব।
বৈঠক সূত্রে জানাযায়, বৈঠক চলাকালীন সময়ে মাগরিবের আযান দিলে নামাজ পড়তে যায় মুরব্বিরা, এরই মধ্যে হাজীগঞ্জ বাজারে আবারো উভয় পক্ষে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এটি বিপদজনক সংঘর্ষে রুপ নেয়। মূহুর্তে হাজীগঞ্জ বাজারে কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে গুজব ছড়িয়ে পড়ে।
সদ্য বিলুপ্ত হওয়া হাজীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটির আহবায়ক ফয়সাল জানান, আমাদের বাড়ীর সাথে টোরাগড় এলাকার যে সংঘর্ষ বা মারামারির ঘটনা ঘটেছে এটি রাজনৈতিক বিষয় নয়, মাস খানেক পূর্বে আমাদের বাড়ীর মনিরের ছেলে মুন্না (১৮) হাজীগঞ্জ সরকারি মডেল পাইলট হাইস্কুল এন্ড কলেজে পরীক্ষা দিতে গেলে সেখানে টোরাগড় গ্রামের কয়েকটা ছেলে তাকে মাধরধর করে, গত বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপরে ওই ছেলেরা হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ সংলগ্ন পাবালিক টয়লেটে গেলে তাদের সাথে মুন্নার কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে তাদের পকেটে থাকা টেস্টার দিয়ে মুন্নার পায়ে আঘাত করলে তার পা থেকে রক্ত বের হয়, এ নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত। পরে বিষয়টি কেউ কেউ বলে মুন্নাকে চুরি দিয়ে কোপ দিয়েছে এতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে টোরাগড় এলাকার কয়েজন কিশোর হকার্স মার্কেটে গেলে তাদেরকে সেখানে আটকিয়ে মারধর করা হয়। এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে টোরাগড় থেকে একদল কিশোর গ্রুপ হাজীগঞ্জ বাজারে এসে আকতার প্রকাশ ভান্ডারি আকাশকে মারধর করে, এতেই শুরু হয় সংঘর্ষ।
ফয়সাল আরো জানান, বিষয়টি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগতদ্বন্দ্ব। এর সাথে রাজনৈতিক বিন্দুমাত্র লেশ নেই। অনেকে এ ঘটনাটিকে রাজনৈতিক রং দেয়ার চেষ্টা করছে।
হাজীগঞ্জ পৌর যবদলের (সদ্য বিলুপ্ত কমিটির) সদস্য সচিব বিল্লাল হোসেন পাটওয়ারী বলেন, টোরাগড় ও সর্দার বাড়ীর লোকজনের সাথে যে, মারামারি, এর সাথে রাজনৈতিক কোন সম্পর্ক নেই। এটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত বিষয়। কিশোরদের ঝামেলা।
হাজীগঞ্জ উপজেলা যুবদলের (সদ্য বিলুপ্ত কমিটির) যুগ্ম আহবায়ক হুমায়ুন কবির সুমন বলেন, টোরাগড় গ্রাম এবং সর্দার বাড়ীর সাথে গত ২ দিন ধরে যে সংঘর্ষ চলছে তা কিশোর গ্যাংদের আভ্যন্তরিন বিষয়। এ নিয়ে রাজনীতি করার কোন সুযোগ নেই। আর হাজীগঞ্জে বিএনপি এক ও অভিন্ন। হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি বিএনপি ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হকের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ।
হাজীগঞ্জ উপজেলা যুবদলের (সদ্য বিলুপ্ত কমিটির) আহবায়ক আকতার হোসেন দুলাল বলেন, বিষয়টি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব। এর সাথে রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই। সর্দার বাড়ীর মনিরের ছেলে মুন্নার সাথে টোরাগড় এলাকার কারো পূর্ব বিরোধের জের ধরে সর্দার বাড়ী আর টোরাগড় এলাকার কিশোর গ্যাংদের মাঝে সংঘর্ষ বাঁধে এ ঘটনাকে। রাজনৈতিক ভাবে উপস্থাপন করার সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, জেলা বিএনপি সাধারণত আমাদের বিরুদ্ধে। এজন্য কমিটি নিয়ে নাড়াছাড়া হচ্ছে। হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ লায়ন ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হকের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছি এবং থাকবো। কোন ষড়যন্ত্রই আমাদের বিভক্ত করতে পারবেনা।
হাজীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির (সদ্য বিলুপ্ত কমিটির) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলহাজ¦ ইমাম হোসেন বলেন, হাজীগঞ্জ বাজারে গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার যে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। এটা কিশোরগ্যাংদের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব। আমরা যদ্দুর সম্ভব সবার সন্তানকে বুঝানোর চেষ্টা করেছি, যা ঘটেছে এখানেই শেষ। কেউ যেনো আর বাড়াবাড়ি না করে। এর পরেও কেউ শুনেতো আবার কেউ শোনেনা। আমি আমার সন্তানকে শাসন করতে পারবো, আপনার সন্তানকে শাসন করতে পারবোনা। তবে যে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে, এটা কোন রাজনৈতিক ইস্যু নয়। তবুও অনেকে এটাকে রাজনৈতিকভাবে দেখছে। বিষয়টি ঠিক নয়।
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এ বর্ষিয়ান নেতা বলেন, আমি রাজনীতিতে পদের লোভী নয়। আল্লাহ যেভাবে রাখছে ভালো আছি। কমিটি ভাংবে আবার আসবে এটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।
গত বৃস্পতি ও শুক্রবার হাজীগঞ্জে বিএনপির অধ্যুশাষিত এলাকা টোরাগড় ও বিএনপি সমর্থিত মকিমাবাদ সর্দার বাড়ীর লোকজনের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়াসহ ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এরই মাঝে শুক্রবার রাতে হাজীগঞ্জ উপজেলা ও পৌর বিএনপি, উপজেলা ও পৌর যুবদলের সকল ইউনিট, উপজেলা ও পৌর ছাত্রদলের সকল ইউনিটের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। বিষয়টি অনেকে গত ২ দিন ধরে হাজীগঞ্জ বাজারে যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে এর জেরে বিলুপ্ত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন।