ভারতের মণিপুরে মিয়ানমার থেকে ‘ঢুকেছে ৯০০ যোদ্ধা’

ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় মণিপুরে প্রতিবেশী মিয়ানমার থেকে সম্ভাব্য ৯০০ সন্দেহভাজন কুকি যোদ্ধার অনুপ্রবেশ ঘটেছে, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এমন প্রতিবেদনের পর জাতিগত দাঙ্গাকবলিত রাজ্যটিতে উচ্চ সতর্কাবস্থা জারি করা হয়েছে।

শুক্রবার ভারতের ঊর্ধ্বতন এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা এমনটি জানিয়েছে বলে খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের। রয়টার্স জানায়, কুকি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বকারী একটি সংগঠন ওই নিরাপত্তা কর্মকর্তার অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং তার পদত্যাগ দাবি করেছে।

মণিপুরের নিরাপত্তা উপদেষ্টা কুলদিপ সিং সাংবাদিকদের বলেছেন, যোদ্ধাদের নিয়ে ওই তথ্য বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে।

২০২৩ সালের মে থেকে মণিপুরে সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই ও সংখ্যালঘু কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে দাঙ্গা চলছে। অর্থনৈতিক সুবিধা ও কোটা নিয়ে বিরোধ থেকে এ দাঙ্গার সূত্রপাত হয়।

কুলদিপ সিং বলেছেন, “সীমান্ত পুলিশকে সতর্ক করা হয়েছে আর চিরুনি অভিযান চালানো হচ্ছে।” তিনি জানান, কুকি সম্প্রদায়ের আবাস মণিপুরের পাহাড়ি জেলাগুলোতে সতর্ক নজর রাখা হচ্ছে।

মণিপুরের কুকি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্বকারী প্রধান সংগঠন কুকি স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন (কেএসও) রাজ্যটিতে কুকি যোদ্ধাদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে, এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।

ওই নিরাপত্তা কর্মকর্তা কুকি সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়ে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছে কেএসও।

এক বিবৃতিতে কেএসও বলেছে, “আমরা আর তার নেতৃত্বের অধীনে নিরাপদ বোধ করছি না। আমরা তার পদত্যাগ চাই।” মণিপুরের দক্ষিণাঞ্চলে বসবাসকারী কুকি জনগোষ্ঠী মিয়ানমারের চিন জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে জাতিগতভাবে সম্পর্কিত।

সম্প্রতি মণিপুরে ড্রোনযোগে বেশ কয়েকটি হামলা হয়েছে। কুকি যোদ্ধারা এসব হামলা চালিয়েছেন বলে কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন। তাদের এ অভিযোগের পরই ‘কুকি যোদ্ধাদের’ কথিত অনুপ্রবেশের গোয়েন্দা তথ্য সামনে এল। কিন্তু ওই ড্রোন হামলা তাদের সম্প্রদায়ের লোকজন চালায়নি বলে দাবি কুকি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের।

ওই ড্রোন হামলার প্রতিবাদে মেইতেই জনগোষ্ঠীর প্রতিবাদকারীরা রাজ্যের রাজধানী ইম্ফলে বিশাল সমাবেশ করে ‘কুকি যোদ্ধাদের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছিল।

অশান্তি থামানোর চেষ্টা সত্ত্বেও রাজ্যজুড়ে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ অব্যাহত আছে। চলতি মাসের প্রথমদিকে হওয়া সর্বশেষ সংঘর্ষে ১১ জনের মৃত্যু হয়। গত বছরের মে মাস থেকে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় ৩২ লাখ জনসংখ্যার মণিপুরের ৬০ হাজারেরও বেশি বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

মণিপুরের মেইতেই জনগোষ্ঠী প্রধানত উপত্যকাগুলোতে বসবাস করে আর কুকিরা বাস করে পাহাড়ে। মূলত একটি ‘বসতিহীন ভূখণ্ড’ দিয়ে দুই জনগোষ্ঠীর আবাসভূমিকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে যেটি কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনী নজরদারি করে।

আরও পড়ুন...