‘জনগণের নির্বাচিত সরকার ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়’

বাংলাদেশের বাইরে নিজের কোনো ঠিকানা নেই, বাংলাদেশই তার প্রথম ও শেষ ঠিকানা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সোমবার (২৩ সে‌প্টেম্বর) বিকেলে কিশোরগঞ্জের বিএনপির জনসমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেছেন, দল মত নির্বিশেষে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এই দেশের স্বার্থে, দেশের মানুষের স্বার্থে। বিএনপি বিভক্তি চায় না। আমরা চাই জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে। আমরা দলের পক্ষ থেকে ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। আমরা চাই সকলকে নিয়ে সরকার গঠন করতে। বিগত ১৭ বছরে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় যে সকল রাজনৈতিক দল আমাদের সঙ্গে ছিল, যে সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ আমাদের সঙ্গে ছিলেন এবং এখনো আছেন, আমরা চাই, সকলকে নিয়েই এ দেশকে পুনর্গঠন করতে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এবং স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্য এবং আহতদের আর্থিক সহযোগিতা প্রদান উপলক্ষ্যে বিকালে কিশোরগঞ্জ পুরাতন স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি বক্তৃতায় তারেক রহমান এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশের প্রতিটি পরিবারকে খাদ্য নিরাপত্তা ‘স্বপ্ন প্রকল্প ফ্যামিলি কার্ড’ প্রদান করা হবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, পরিবারের মা বা গৃহিণীর নামে ‘স্বপ্ন প্রকল্প ফ্যামিলি কার্ড’ প্রদান করা হবে। রাষ্ট্রের পক্ষে সকল নাগরিক পর্যায়ক্রমে কার্ডটি পাবে। প্রাথমিকভাবে গ্রাম-জেলা পর্যায়ের সুবিধা বঞ্চিতরা এর আওতায় আসবেন। পরিবারের সদস্য সংখ্যা সর্বোচ্চ ৪ জন এই বিবেচনায় এটা বিতরণ করা হবে। এলাকার সকলেই এর প্রাপক বিধায় কোনো প্রকার দলীয় বা স্থানীয় প্রভাবে কাউকে বঞ্চিত করার সুযোগ থাকবে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীর একটি অংশ এই কার্ডের মাধ্যমে বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। প্রাথমিকভাবে গ্রামের সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য এর প্রবর্তন হলেও পরবর্তীতে সকলেই এর প্রাপক হবেন।

তিনি বলেন, আজ আমরা মুক্ত ও ভয়হীন পরিবেশে কথা বলছি। এই যে শঙ্কামুক্ত পরিবেশে আমরা একত্রিত হয়েছি, এই সময়টার জন্য বিগত ১৭ বছর এ দেশের মানুষকে অপেক্ষা করতে হয়েছে। দীর্ঘ ১৭ বছর এই দেশের মানুষকে আত্মত্যাগ করতে হয়েছে, সংগ্রাম করতে হয়েছে, প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হয়েছে। কিশোরগঞ্জ জেলাতে আমরা ১৭ জন মানুষকে হারিয়েছি, যারা আত্মত্যাগ করেছেন এই দেশের মানুষের অধিকারের জন্য। ১৬ জন মানুষ শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যারা ভয় পাননি, পিছিয়ে যাননি দেশের মানুষের অধিকারের কথা বলার ক্ষেত্রে। সারা বাংলাদেশে এ রকম হাজারো মানুষ আছেন, হাজারো শহীদ পরিবার আছে, যারা আত্মত্যাগ করেছেন। বিগত ১৭ বছর বিশেষ করে গত জুলাই-আগস্ট মাসে শুধু ঢাকা শহরে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এর বাইরে বহু মানুষ যারা বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

বিএনপিরই শুধু ৫০ থেকে ৬০ লাখের মতো নেতাকর্মী বিগত স্বৈরাচারের সময় বিভিন্নভাবে নির্যাতিত ও অত্যাচারিত হয়েছেন উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, বিএনপি’র বাইরেও বহু আরও রাজনৈতিক দল আছে, যারা একইভাবে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের মতো অত্যাচারিত হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন। এই যে এত মানুষ শহীদ হয়েছেন, এত মানুষ আত্মত্যাগ করেছেন, এত মানুষ নির্যাতিত হয়েছেন, কেন এই মানুষগুলো অত্যাচারিত হলেন, আত্মত্যাগ করলেন। কারণ একটাই, এই মানুষগুলো বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করতে চেয়েছিল। এ রকম একটি মুক্ত পরিবেশের নিশ্চয়তা নিশ্চিত করতে চেয়েছিল। কিন্তু আমরা দেখেছি স্বৈরাচার দাবিয়ে রাখতে চেয়েছিল বাংলাদেশের মানুষকে। এই বাংলাদেশের মানুষ দেখিয়ে দিয়েছে গুলির সামনে বুক পেতে দিতে রাজি তারপরেও স্বৈরাচারকে মেনে নিতে রাজি না।

কেন্দ্রীয় বিএনপি’র ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সভাপতি মো. শরীফুল আলমের সভাপতিত্বে গণসমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। এতে অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এডভোকেট ফজলুর রহমান, কেন্দ্রীয় বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, ময়মনসিংহ বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট শাহ ওয়ারেস আলী মামুন, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের আহ্বায়ক ইশতিয়াক আজিজ উলফাৎ, জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, সহ-সভাপতি রেজাউল করিম খান চুন্নু, এডভোকেট মো. জালাল উদ্দিন, এডভোকেট শরীফুল ইসলাম, ইসমাইল হোসেন মধু ও রুহুল আমিন আকিল, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী ইসরাইল মিয়া ও আমিনুল ইসলাম আশফাকসহ বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতারা বক্তব্য রাখেন।

আরও পড়ুন...