’ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত শিক্ষার্থীরা যাতে ক্যাম্পাসে ঢুকতে না পারেন, সেই ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) প্রথম দিনের মতো ক্লাস বর্জন কর্মসূচি পালন করেন তারা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার কথাও জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদল তাদের দাবিগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে এসেছেন।
আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের কারণে অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে বুয়েট। এরপর চলতি বছরের শুরুতে আবারও ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি ওঠে। সেসময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা রাতে বুয়েটে প্রবেশ করেন এবং রাজনীতি চালুর দাবি তোলেন। এ নিয়ে প্রায় দেড় মাস বুয়েটে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ছিল।
তাছাড়া সবশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং শিক্ষকদের সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম বাতিলের আন্দোলনে জুলাই থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দেশের অন্যতম শীর্ষ এ বিদ্যাপিঠের শিক্ষার্থীরা সেশনজটের মুখে পড়েছেন। ঠিক সেই সময়ে আবারও সৃষ্ট সংকট সমাধানে প্রশাসনের তৎপরতা কম বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
যার সত্যতা মিলেছে নতুন উপাচার্যের বক্তব্যেও। বিষয়টি নিয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বা হবে, এমন প্রশ্নে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামানের ভাষ্য, এসব যা হচ্ছে, তা দেখার দায়িত্ব আমার নয়।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নতুন উপাচার্য নিয়োগের পর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত তাদের কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই। হল থেকে এখনো ছাত্রলীগের নেতাদের বহিষ্কার করা হয়নি।
আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ১৯তম ব্যাচের দুজন শিক্ষার্থী জানান, হল ও ক্যাম্পাস খোলার পর থেকে ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছেন। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাতে দুজন শিক্ষার্থী হলে উঠতে চেয়েছেন। এতে সেখানে এক ধরনের অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। এ পরিস্থিতিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন তারা।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, বুয়েটের অধ্যাদেশের ১৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া কোনো ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হওয়া যাবে না এবং কোনো কার্যক্রম চালানো যাবে না। কিন্তু এসবের সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দ্রুত তদন্ত কমিটির দৃশ্যমান পদক্ষেপ উপস্থাপন করতে হবে। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
গত ১২ সেপ্টেম্বর বুয়েটের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বিশ্ববিদ্যালয়টির পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম বদরুজ্জামান। জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, ‘তারা কী দাবি জানিয়েছে, বলছে; সেগুলো আমার দেখার বিষয় নয়। এটা যার কাজ, তিনি দেখবেন হয়তো।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী হিসেবে এবং শিক্ষার্থীরা যেহেতু আপনার কাছে লিখিতভাবে দাবিগুলো জানিয়েছেন, সেক্ষেত্রে এ নিয়ে আপনার কোনো পদক্ষেপ বা মতামত না থাকা দায়িত্বে অবহেলা কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি তেমনটা মনে করি না। ছাত্র উপদেষ্টা কাজ করবে। এসব দেখার কাজ আমার না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান আমি ঠিক এটা আমি কিছু জানি না। কী হবে, সেটাও বলতে পারবো না।’
পরে বিষয়টি নিয়ে বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল আমিন সিদ্দিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি জানান, এখনো বিষয়টির সুরাহা হয়নি। কবে হবে, সেটাও তিনি জানেন না।