শেখ হাসিনা পালালেও দেশের সংকট কাটেনি: মির্জা ফখরুল

শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও এখনো বাংলাদেশের সংকট কাটেনি বলেনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গাজীপুরের কাপাসিয়ায় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হান্নান শাহ্ স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে আয়োজিত এক স্মরণসভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যে সরকার এসেছে, এটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকারের প্রধান নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষ তাকে ভালোবাসে।’

‘বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র বিশ্বাস করে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘মানুষ বিশ্বাস করে, একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে একটি পার্লামেন্ট গঠন করতে হবে। সেই পার্লামেন্টের মাধ্যমে দেশ পরিচালিত হবে। তারাও কমিটেড। আমরা বিশ্বাস করি তাদের কথায়। যত দ্রুত সম্ভব তারা নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দীর্ঘ ১৭-১৮ বছর ধরে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী সরকার ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্য বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। গণতন্ত্রের সব প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা বলতে কিছুই ছিল না। জাতীয় সংসদ নির্বাচন বলুন, উপজেলা নির্বাচন বলুন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন কিছু হয়নি।’

তারা তাদের প্রার্থীদের নির্বাচিত করতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করেছে। ব্যবহার করেছে পুলিশ প্রশাসনকে। শুধু তাই নয় ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কুক্ষিগত করে রেখেছে। গত ১৮ বছর বাংলাদেশে দুর্নীতির নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে,’ যোগ করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকার সারা জীবন ক্ষমতায় থাকবে বলে মানুষকে নিপীড়ন নির্যাতন করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। আজকে খবরের কাগজ খুললেই দেখবেন আওয়ামী লোকজন কত টাকা চুরি করেছে, কত টাকা বিদেশে পাঠিয়েছে, তার ফিরিস্তি দেখতে পাবেন। একটার পর একটা মন্ত্রী ধরা পড়ছে।’

‘আল্লাহর কী বিধান, যারা একদিন খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছিল, তারাই আজ দুর্নীতির দায়ে, চুরির দায়ে পুলিশ গ্রেপ্তার করে থানায় পাঠিয়েছে,’ বলেন তিনি।

‘শেখ হাসিনা বড় গলায় বলেছিলেন, আমি শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে, আমি পালাতে জানি না, সেই শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার উত্তাল তরঙ্গে অতি দ্রুত গণভবন থেকে হেলিকপ্টারে পালিয়ে গেছে,’ যোগ করেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘গত ১৭ বছরে আমাদের প্রায় এক হাজার লোককে গুম করে ফেলেছে। হাজার হাজার লোককে গুলি হত্যা করা হয়েছে। ৬০ লাখ লোককে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে, লোকজন জেলে গেছে। রাতে ঘুমাতে পারেনি। কোর্টে যায়, হাজিরা দেয়, পুলিশ টাকা চায়, টাকা না দিতে পারলে ধরে নিয়ে যায়, মামলা দেয়।’

পরে তিনি হান্নান শাহের সঙ্গে জেলে থাকার স্মৃতি তুলে ধরে বলেন, ‘হান্নান শাহ ছিলেন সত্যিকার গণতান্ত্রিক মানুষ। সেনাবাহিনীর পোশাক ছিল। ব্রিগেডিয়ার ছিলেন। মনের দিক দিয়ে ছিলেন গণতান্ত্রিক। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার জন্য তিনি অত্যন্ত পরিশ্রম করেছেন।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ পালাইছে, কিন্তু তারা ষড়যন্ত্র করছে। তারা গাজীপুরে পোশাক কারখানায় যড়যন্ত্র করছে। তারা পোশাক কারখানা বন্ধ করেছে। আমাদের শ্রমিক ও মালিক ভাইয়েরা আলোচনা করে পোশাক কারখানা খুলেছে।’

হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘পূজা আসছে। এসব কেন্দ্র করে তারা অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করতে পারে। আমি হিন্দু ভাইদের বলব, আমরা আপনাদের পাশে আছি। পূজার ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিতে পারি, দেশের সব মানুষ আপনাদের পাশে থাকবে।’

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত নেতা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও ঢাকা বিভাগীয় সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম ফজলুল হক মিলন।

আরও পড়ুন...