মনোমালিন্যের জেরে গুলশানে জোড়া খুন করে রুমন

রাজধানীর গুলশানে জোড়া খুনের ঘটনায় রুমন (২৭) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

এর আগে মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) রাতে র‍্যাব-১ ও র‍্যাব-৭ এর যৌথ আভিযানে চট্টগ্রাম মহানগরীর হালিশহর এলাকাকা থেকে রুমনকে গ্রেফতার করা হয়।

র‍্যাব জানায়, চায়ের দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে অল্প বেতন ও কাজ-কর্ম নিয়ে মো. রফিকুল ইসলাম সিকদার মালিকের সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটায় রুমন।

বুধবার (২ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশান-২ এলাকার একটি চায়ের দোকানের ভেতরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে কুপানো ও গলা কাটা অবস্থায় দুই জন ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় ২৮ সেপ্টেম্বর ভিকটিম রফিকুল ইসলামের ছেলে বাদি হয়ে গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। যার মামলা নং-২১। নৃশংস এই হত্যাকান্ডের ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হলে ব্যাপক আলোচিত হয়। ওই হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটনে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র‍্যাব গোয়েন্দা নজদারী বৃদ্ধি করে।

এরই ধারাবাহিকতায় ১ অক্টোবর রাতে র‍্যাব-১ ও র‍্যাব-৭ এর যৌথ আভিযানিক দল চট্টগ্রাম মহানগরীর হালিশহর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে উক্ত হত্যাকান্ডের মূল আসামি রুমন (২৭) কে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত উক্ত হত্যাকান্ডের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায় যে, ভিকটিম মো. রফিকুল ইসলাম সিকদার (৬২) এর নিজ জেলা বরিশাল। তিনি রাজধানীর গুলশান-২ এর রোড নং ১০৮, প্লট নং ২১ এর কেয়ারটেকার হিসেবে চাকুরী করার পাশাপাশি প্লটের ভিতরে ছোট একটি দোকানে চা-বিস্কুট বিক্রি করতেন।

এছাড়াও অপর ভিকটিম সাব্বির (১৫) ভিকটিম রফিকের চায়ের দোকানের কর্মচারী হিসেবে কাজ করতো। তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর এলাকায়। তারা দুইজনে প্লটের পিছনের অংশে একটি রুমে রাত্রী যাপন করতো বলে জানা যায়। ভিকটিম রফিক এর ছেলে জানায় গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক সাড়ে ৮ টার দিকে তার বাবা ভিকটিম রফিক দোকান বন্ধ করে এবং তার সাথে মোবাইল ফোনে কথা হয়। পরে ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে ভিকটিম রফিক এর মোবাইল বন্ধ থাকায় তার পরিবারের সদস্যরা যোগাযোগ করতে পারে না। গত ২৮ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যরা এসে তাদের থাকার রুমের দরজার তালা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করলে বিছানার চাদর দিয়ে ঢাকা রক্তাক্ত নিথর ২টি দেহ দেখতে পায়।

গ্রেফতার আসামি রুমনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি জানান, ভিকটিম রফিকের চায়ের দোকানে এক মাস যাবত ভিকটিম। সাব্বির চাকুরী করছিল। ভিকটিম সাব্বির চাকুরী ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি জানালে ভিকটিম রফিক দোকানের জন্য নতুন কর্মচারী খোঁজ করতে থাকে। পরবর্তীতে ৭ দিন পূর্বে তার পূর্বপরিচিত একজনের মাধ্যমে আসামি রুমন ভিকটিম রফিকের দোকানে কর্মচারী হিসেবে থাকা-খাওয়াসহ প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা বেতনে কাজ শুরু করে। বেতন অল্প হওয়ায় ও দোকানের কাজকর্ম নিয়ে ভিকটিম রফিকের সাথে গ্রেফতার রুমনের বেশ কয়েকবার বাকবিতন্ডা হয়।

এ প্রেক্ষিতে রুমনের মধ্যে ভিকটিম রফিকের প্রতি ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। রুমন ভিকটিম রফিককে উচিত শিক্ষা দিয়ে দোকানের মূল্যবান মালামাল ও অর্থ হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করে। ওই হত্যাকান্ডে সাথে আরও ২ জন জড়িত থাকার বিষয়ে গ্রেফতার রুমন তথ্য দিয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে।

গত ২৬ সেপ্টেম্বর ভিকটিম রফিক, সাব্বির এবং গ্রেফতার রুমন দোকানের কার্যক্রম শেষে রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়ে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী রাত আনুমানিক দুই টার দিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রথমে ভিকটিম রফিক এর মাথায়, গলায় ও শরীরের আঘাত করা হয়। ভিকটিম সাব্বির দেখে ফেললে তাকেও মাথায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে গুরুত্বর জখম করে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করে বিছানার চাদর দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। এরপর রুমন বাসা তল্লাশী করে নগদ টাকা লুট করে ও কফি মেশিনসহ দোকানের মূল্যবান মালামালসমূহ বেশ কয়েকটি বস্তার মধ্যে ঢুকিয়ে রাখে। পরে সকাল ৭ টার দিকে একটি পিকআপযোগে দোকানের মালামাল নিয়ে রুমন ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এয়ারপোর্ট এলাকায় এসে বাসযোগে মালামালসহ তার নিজ বাড়ীতে চলে যায়। লুণ্ঠিত মালামালগুলো তার আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে লুকিয়ে রেখেছে বলে জানা যায়।

তিনি জানান, গ্রেফতার রুমন আগে নিজ এলাকায় কৃষি কাজের পাশাপাশি ইট ভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো। ১/২ বছর আগে রাজধানীর উত্তরায় একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতো বলে জানায়। আসামি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে কিশোরগঞ্জে তার বোনের বাড়ীতে আত্মগোপন করে।

সেখানে অবস্থানের পরে রুমনকে চট্টগ্রামে তার নিকট আত্মীয়ের বাসায় আত্মগোপনে চলে যায়। আত্মগোপনে থাকাকালীন র‍্যাব তাকে গ্রেফতারে। এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত বাকি আসামিদের ধরতে আমরা কাজ করছি বলে জানান লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস।

আরও পড়ুন...