বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় পুলিশের রংপুর রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি আব্দুল বাতেন, আরএমপির সাবেক কমিশনার মো. মনিরুজ্জামানসহ ১৪ জনের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) দুপুরে মামলার প্যানেল আইনজীবী মো. রোকনুজ্জামান রোকন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর এই কর্মকর্তাদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন আবু সাঈদ হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রংপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার এবিএম জাকির হোসেন। গতকাল বুধবার (২ অক্টোবর) এ বিষয়ে আদেশ দেন রংপুর মহানগর আমলি আদালতের বিচারক আসাদুজ্জামান।
বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা পাওয়া আসামিরা হলেন- রংপুর রেঞ্জের সাবেক উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আব্দুল বাতেন, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরপিএমপি) সাবেক কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান, উপ-পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন, সহকারী কমিশনার আরিফুজ্জামান, সহকারী পুলিশ কমিশনার ইমরান হোসেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষক মশিউর রহমান ও আসাদুজ্জামান মণ্ডল, এসআই বিভূতি ভূষণ, তাজহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম, বেরোবি ছাত্রলীগ সভাপতি পামেল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক শামীম মাহফুজ, সাংগঠনিক সম্পাদক ধনঞ্জয় কুমার টগর, বাবুল হোসেন ও বেরোবি কর্মকর্তা রাফিউর হাসান।
আইনজীবী রোকনুজ্জামান রোকন বলেন, পুলিশের গুলিতে নিহত আবু সাঈদের মাথায় আঘাতের চিহ্ন সুস্পষ্ট। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুলির ক্ষত। সবকিছু মিলে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট প্রমাণ করে, এটি হত্যাকাণ্ড। ফলে এ হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের কেউ ছাড় পাবে না।
প্যানেল আইনজীবী আরও বলেন, এজাহার নামীয় বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা পাওয়া আসামিরা এখনও গ্রেপ্তার হননি। তাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা প্রয়োজন। সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ঢাকায় অন্য মামলায় গ্রেপ্তার আছেন। এছাড়া আবু সাঈদ হত্যার ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ সদস্য এএসআই সৈয়দ আমির আলী ও সুজন চন্দ্র রায়কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পিবিআই রংপুর পুলিশ সুপার এবিএম জাকির হোসেন বলেন, আসামিদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা তদন্তেরই একটি অংশ। আমরা আসামিদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। সেই সঙ্গে মামলার অন্যান্য নথিপত্র ও আলামত সংগ্রহ করছি। সরকারি কর্মকর্তা গ্রেপ্তারে অনুমতির প্রয়োজন। সেজন্য বিজ্ঞ আদালতকে এসব বিষয়ে জানিয়েছি।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ। তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়কও ছিলেন তিনি।
আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় গত ১৮ আগস্ট মহানগর তাজহাট আমলি আদালতে মামলা করেন তার বড় ভাই রমজান আলী। ওই মামলায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ৩০-৩৫ জনকে আসামি করা হয়।
নিহত আবু সাঈদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম শহীদ। পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদের মৃত্যুর ভিডিও চিত্র দ্রুত সময়ের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ায় সারা দেশে ছাত্র আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এর ধারাবাহিকতায় ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়।