সাংবাদিকদের তোপের মুখে ডিএনসির ডিজি, দুর্নীতির দায় অস্বীকার

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) বর্তমান মহাপরিচালক (ডিজি) খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমানের একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং তিনি দাবি করেছেন তিনি কোন দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এবং কখনো দুর্নীতি করেননি।

সোমবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ডিএনসির সদরদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ দাবি করেন মাদকের ডিজি। এদিন সারাদেশে মাদকের বিস্তার রোধে ব্যর্থ হয়েছেন এমন অভিযোগে পুরো সংবাদ সম্মেলন জুড়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জেরে তোপের মুখে পড়েন মাদকের ডিজি।

আপনি মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে আপনি দুইটি জেলায় ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেসব জায়গায় আপনার বিরুদ্ধে বেশ কিছু দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও আপনার বিরুদ্ধে নানা সময় অভিযোগ করে আসছে। এমন প্রশ্ন করা হলে মাদকের বর্তমান ডিজি বলেন, আমি এখানে আগে যেসব জায়গায় কাজ করেছি বা দায়িত্ব পালন করেছি সেসব জায়গায় আমার বিরুদ্ধে বিন্দু পরিমান দুর্নীতির কোন অভিযোগ নেই। কেউ বলতে পারবেনা আমি ঐসব জায়গায় দুর্নীতি করেছি। একজন লোকও এই কথা বলতে পারবে না। আমি যেসব জায়গায় কাজ করেছি সেসব জায়গায় আমি দুর্নীতি বিরুদ্ধে কাজ করি।

মাদকের আগে যেসব জায়গায় দায়িত্ব পালন করেছিলেন সেসব জায়গায় সাংবাদিক প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে ডিজি বলেন, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা আমি এই ধরনের কোন নিষেধাজ্ঞা দেইনি।

রাজউকের কাছ থেকে একটি ও গৃহায়নের কাছ থেকে একটি প্লট নেওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চাইলে ডিজি বলেন, আমি এই প্লট গুলো অনিয়ম করে নেইনি। নিয়মের মধ্য থেকেই নিয়েছি। আমি সরকারি নিয়ম নীতি মেনে প্লটের জন্য আবেদন করেছি।

একজন কি দুইটি প্লট পায় কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে মাদকের মহাপরিচাল ক প্রথম আলো বা অন্যকে আরেকটা নিউজ উত্তর দেন তিনি সবকিছু নিয়মের মধ্য থেকেই করেছেন।

অনেক সময় দেখা যায় অভিযানে প্রাপ্ত মাদকের সংখ্যা আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে কমিয়ে দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। এই ধরনের কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মাদকের মহাপরিচালক বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর এ সংক্রান্ত চারটি অভিযোগ আমি পেয়েছি। পরে এই সংক্রান্ত আমি একটি কমিটি গঠন করেছি। কমিটি তদন্ত করছে এসব অভিযোগের বিরুদ্ধে। শুভ কুষ্টিয়াতে এমন একটি অভিযোগ পেয়ে সেটি আমরা তদন্ত করি এবং সত্যতা পাওয়ায় ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করি।

দায়িত্ব নেওয়ার পর বহন নিয়ে টুঙ্গীপাড়া গিয়েছেন ফুল দেওয়ার জন্য এই বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চাইলে মাদকের ডিজি বলেন, ওই সময় যারা দায়িত্ব পেয়েছেন তারা সবাই সেখানে গিয়েছে। কে যায়নি, সাংবাদিকরা সেখানে গিয়েছে। আমি ঐদিন টুঙ্গীপাড়ায় একটি মাদকবিরোধী সমাবেশে অংশগ্রহণ করেছিলাম।

মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে শেখ কামালের জন্মদিন কি অফিস আদেশে পালন করা হয়েছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ডিজি বলেন, শেখ কামালের জন্মদিন পালন করা হয়নি।

গুলশান সার্কেলের মাদকের পরিদর্শক সুমন রহমান এর দুর্নীতি ও করনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অধিদপ্তর কি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে উল্টো তাকে পোস্টিং দেওয়া হয়েছে মানিকগঞ্জে। এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মাদকের মহাপরিচালক বলেন, গুলশান থেকে মানিকগঞ্জ এটা কি ভালো পোস্টিং হয়েছে‌।

পরিদর্শক সুমন রহমানকে মানিকগঞ্জে পোস্টিং দিয়ে কি পানিশমেন্ট দেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্ন করা হলে মাদকের ডিজি বলেন, তার বিরুদ্ধে আমরা তদন্ত করছি। পোস্টিং কোন শাস্তি না।

দিন দিন মাদক সেবীদের সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু আপনারা কার স্বার্থ রক্ষা করার জন্য মন্ত্রণালয়ে মাদক ব্যবসায়ী এবং সেবীদের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না কোন সংখ্যা কমানো হয়নি।

একই ব্যক্তি একাধিক বারের মালিক হতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মেনে কোন ব্যক্তি যদি ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় বাদ দিতে চায় তাহলে সেটি সম্ভব এখানে কোন আইনি বাধা নেই।

রাজধানী ঢাকায় দেখা গেছে বৈধবারের তুলনায় অবৈধ বার বেশি এ বিষয়ে মাদকের কোন ধরনের কার্যক্রম আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেউ অবৈধভাবে মাদক বিক্রি করতে পারবেনা এ বিষয়ে আমরা সবসময় কাজ করি।

এর আগে সংবাদ সম্মেলনে মাদকের ডিজি বলেন, আমাদের প্রতি একটা অভিযোগ রয়েছে আমরা শুধু ছোট মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করি বা আইনের আওতায় আনি। তবে এটি ঠিক নয় আমরা শুধু ছোট মাদক ব্যবসায়ী না বড় মাদক ব্যবসায়ীদের কেউ আইনের আওতায়ন আনি। তবে আমাদের সব লোকজন যে ফেরেশতা তাও আমরা তা বলি না। আমাদের মধ্যেও কিছু অসৎ ও খারাপ লোক আছে। এই ধরনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করব। কাউকে কোন ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। জিরো টলারেন্স নীতিতে আমরা মাদককে বিরুদ্ধে কাজ করি।

তিনি বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও অপকর্মের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক বলেন, আমাদের কাছে অপরাধীর পরিচয় শুধু অপরাধী সে এবার যেই হোক না কেন। কারো বিরুদ্ধে আমাদের বিন্দুমাত্র কোন ধরনের সহানুভূতি নেই। যারা এই ধরনের অপকর্ম বা দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকে তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি।

তিনি আরও বলেন,মাদকের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ৪ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত ৫ হাজার ২৬৪ টি অভিযান পরিচালনা করে ১ হাজার ১৯৮ টি মামলা দায়ের পূর্বক ১ হাজার ২৯৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে করেছে। গ্রেফতারদের মধ্যে ১১ জন গডফাদারসহ ৮৯ জন শীর্ষ মাদক কারবারি রয়েছেন।

অভিযান পরিচালনাকালীন সময়ে ৩,০৯,১০১ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ৩.৭৬০ কেজি হেরোইন, ১.১ কেজি আইস, ৩৭৭৪ বোতল ফেন্সিডিল, ২৪১৬ বোতল বিভিন্ন ব্রান্ডের বিলাতি মদ, বিয়ার- ২৪১৬ ক্যান, টাপেন্টাডল ট্যাবলেট -৫৭৯১ পিস, চোলাই মদ ১৩৮০ লিটার,৬৬৪.২ কেজি গাঁজা, ইনজেকশন ৪২২২ এমপুল, শটগান-০১ টি, গুলি ৫১ রাউন্ড, বিভিন্ন যানবাহন- ০৯ টি এবং নগদ অর্থ ২১,১১,৭৮০/- উদ্ধার ও জব্দ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন...