আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সম্ভবত এক সপ্তাহের মধ্যে পুনর্গঠন হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেছেন, ‘এখানে বিচার করার লক্ষ্যে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আশা করছি, ফুল স্কেলে বিচার হয়তো মাসখানেকের মধ্যে শুরু হয়ে যাবে।’
প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের বিচারপতিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বুধবার (৯ অক্টোবর) সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথাগুলো বলেন আইন উপদেষ্টা। ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, সেগুলোর বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করার সিদ্ধান্তের কথা এর আগেই জানিয়েছিলেন আইন উপদেষ্টা।
বুধবার (৯ অক্টোবর) বেলা আড়াইটার দিকে সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির কার্যালয়ে আসেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। সাক্ষাৎ শেষে বিকেলে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘বিচার বিভাগের যেসব সমস্যা হচ্ছে, আইন মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিম কোর্টের মধ্যে যেসব ক্ষেত্রে আরও সহযোগিতার প্রয়োজন, সেগুলো নিয়ে কথা হয়েছে। আর অভিযোগ যেগুলো আসছে, কিছু কিছু বিচারকের বিরুদ্ধে এটি অবগত করার জন্য বলা হয়েছে। আমরা অবগত আছি। ওনারাও অবগত আছেন।’
অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘এটা আমাদের সিদ্ধান্ত না বা আমাদের দাবি না। এটা ছাত্র-জনতা যারা আন্দোলন করেছিল, যারা এই মহান জুলাই গণবিপ্লব করেছিল, তারা মনে করেছে কোনো কোনো বিচারক যারা এই ফ্যাসিস্ট শক্তি ছিল, ছাত্র-জনতার গণ–আন্দোলন ও বিপ্লবের প্রতিপক্ষ ছিল, তাদের হয়ে কাজ করেছে দিনের পর দিন এবং তাদেরকে শক্তিশালী করেছে…। ছাত্র-জনতার জুলাই-আগস্টের আন্দোলন…তাদের ভূমিকা ছিল ফ্যাসিস্ট শক্তির পক্ষে দেশের গণতন্ত্রকামী ও মানবাধিকারপ্রত্যাশী মানুষের বিপক্ষে। এটি তারা মনে করছে, তারা বিভিন্নভাবে বলছে এবং এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে বলছে। আমরা ছাত্র-জনতার ইচ্ছার ওপর কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়ার কথা চিন্তাই করি না।…যাদের বিরুদ্ধে বলা হচ্ছে, তাদের ব্যাপার। তারা তাদের মতো করে ভাববে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট কিন্তু আইন মন্ত্রণালয় থেকে সম্পূর্ণ পৃথক একটা প্রশাসন। সুপ্রিম কোর্ট দেশের সর্বোচ্চ আদালত। দেশের সর্বোচ্চ আদালতে যাঁরা অভিভাবক আছেন, তাঁরা যথেষ্ট জ্ঞানী, সম্মানিত ও পরিণত। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ওনারা কী ব্যবস্থা নেবেন সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে অনেক কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে, এটা ওনারা বিবেচনা করবেন। এটা আমরা কিছু বলে দিতে পারি না।’
নতুন বিচারক (২৩ জন অতিরিক্ত বিচারক) নিয়োগ হওয়ায় ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু করার বিষয়ে একটা বড় অগ্রগতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ট্রাইব্যুনালে বিচারক চাইতাম, তখন সুপ্রিম কোর্ট থেকে আমাদের বলা হতো বিচারকের অনেক সংকট রয়েছে। এখন আশা করি, সংকট অনেকটা দূর হয়েছে। ট্রাইব্যুনালে এখন বিচারক নিয়োগ হয়ে গেলে কাজটার একটা ধাপ শুরু হবে। ট্রাইব্যুনালে কার্যক্রম কিন্তু ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। আমাদের চিফ প্রসিকিউশন টিম ও তদন্ত টিম আছে, নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’
আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা বিচার করব, এখানে কে অনুপস্থিত কে উপস্থিত, এটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। কারণ, আমাদের আইনে অনুপস্থিত ব্যক্তির বিচার করার বিধান আছে। আবার আমাদের দেশের আইনে অনুপস্থিত ব্যক্তিরা যেসব দেশে গেছেন, তাঁদের সঙ্গে যদি আমাদের প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকে, তাহলে তাঁকে প্রত্যর্পণ করা বা দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য লিখতে পারি। আমাদের সব অপশন খোলা আছে। আমরা এখানে বিচার করার লক্ষ্যে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আশা করছি, ফুল স্কেলে বিচার হয়তো মাসখানেকের মধ্যে শুরু হয়ে যাবে।’
কবে নাগাদ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘ট্রাইব্যুনাল পুর্নগঠন এক সপ্তাহের মধ্যে হয়ে যাবে, এক সপ্তাহের মধ্যে সম্ভবত। সুনির্দিষ্ট করতে পারি না, সামনে কয়েক দিন বন্ধ আছে। যদি বন্ধ না থাকত, আমি হয়তো বলতাম তিন-চার দিনের মধ্যে। এখন সুপ্রিম কোর্ট খোলার পরে তিন-চার দিনের মধ্যে হয়ে যাবে।’