রাজধানীর হাতিরঝিল থানার মহানগর প্রজেক্ট আবাসিক এলাকায় ফ্ল্যাট দখলের দ্বন্দের জেরে দীপ্ত টিভির সম্প্রচার বিভাগের এক কর্মকর্তাকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে একটি ডেভেলপার কোম্পানির বিরুদ্ধে। আহত অবস্থায় তানজিল জাহান ইসলাম তামিমের ওই গণমাধ্যমকর্মীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহতের বাবা সুলতান আহমেদ জমি ও ভবনের সাড়ে চারটি ফ্ল্যাটের মালিক।
নিহতের বাবার অভিযোগ, তিনজন জমির মালিকের জমি নিয়ে প্লেজেন প্রোপার্টি লিমিটেড নামের একটি ডেভেলপার কোম্পানি ভবন নির্মাণ করে। ৯ তলা ভবনের ২৭টি ফ্ল্যাট। যার মধ্যে প্রত্যেক জমির মালিক পেয়েছেন সাড়ে চারটি করে। অন্য দুই মালিকের ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিলেও তার ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিতে গরিমসি করে প্রতিষ্ঠানটি। দীর্ঘদিন নানা চেষ্টা পরে দুটি ফ্ল্যাট বুঝে পেলেও এখনও ফ্ল্যাট বুঝে পান নি। ডেভেলপার কোম্পানির দখলে থাকা ফ্ল্যাটে নির্মাণ কাজ শুরু করে। তাতে বৃহস্পতিবার বাধা দিতে যান সুলতান ও তার ছেলে তানজিল। কাজে বাধা দেওয়ায় ডেভেলপার কোম্পানির লোকজন তানজিলেও ওপর হামলা চালায়। এতে তানজিলসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। পরবর্তীতে তানজিলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
ভুক্তভোগী সুলতান আহমেদ আরও বলেন, ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে ফ্ল্যাট দখলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতের উপ পরিচালক মামুনও জড়িত। তারা সন্ত্রাসীদের দিয়ে ফ্লাট ও জমি মালিকদের জিম্মি করে জোরপূর্বক ফ্লাট দখল করে।
ডিবির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার হারুনের শশুর সোলাইমান। এই সোলাইমান মাদক নিয়ন্ত্রণে অধিদফতরে চাকরি করত। তার সহযোাগিতায় মামুন বিভিন্ন সময়ে আমার কাজ বন্ধ রেখেছে। অথচ অপর দুই জমির মালিকের ফ্ল্যাট ২০২২ সালের জুন মাসেই বুঝিয়ে দিয়েছে।
পুলিশের সহযোগিতা না পাওয়ার বিষয়ে সুলতান বলেন, বিভিন্ন সময়ে আমাদের ওপর হামলা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ আমাদের জিডিও নিতো না। এমন কি পরশু রাতেও হামলার আশঙ্কায় থানায় গিয়েছি। থানার ওসি আমার অভিযোগ রাখেনি। বলেছে হামলা হলে তাদের জানাতে। আজ হামলার কথা জানালে ঘটনার প্রায় ২০ মিনিট পর পুলিশ পাঠিয়েছে। পুলিশ গিয়ে ডেভেলপার কোম্পানির লোকদের সঙ্গে কথা বলতেছিলো। অথচ তারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। আমার ছেলেকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিতে চাইলে সেখানেও তারা দেরি করায়। হামলাকারীরা আমার ছেলের গলা চেপে ধরেছে। বুকে আঘাত করেছে।
লোকজন দিয়ে হামলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্লেজেন প্রোপার্টি লিমিটেডের মালিক ও বিএনপি নেতা রবিউল আলম বলেন, আমি কোনো লোকজন পাঠাই নি। আমার একজন ইনিঞ্জনিয়ার পাঠিয়েছি। তারা অন্যায়ভাবে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ফ্ল্যাটে কাজ করছিলো তাদের কাজ বন্ধ করতে বলার জন্য গিয়েছে। এখানে কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি।
নিহতের বাবা তার ফ্ল্যাট দখলে রাখার অভিযোগ করছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমার সঙ্গে কারো কোনো দ্বন্দ নেই। আমি তিন চার বছর আগে ভবনের কাজ শেষ করে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি। মূলত এই ভবনের জমির মালিক তিনজন। তারা প্রত্যেকে সাড়ে চারটি করে ফ্ল্যাট পেয়েছেন। দুজন মালিক অর্ধেক অংশ কিনে নিয়েছেন। কিন্তু সুলতান সাহেব ফ্ল্যাটের অর্ধেক অংশ অর্থাৎ সাড়ে ৬ শো বর্গফুট ফ্ল্যাটটি কেনার কথা বললেও কিনছেন না। বরং তিনি দখলের চেষ্টা করছেন। তাই আমরা আদালত থেকে একটা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছি। সেই নির্দেশনা অমান্য করে তিনি কয়েকদিন ধরে কাজ করছিলেন। এটা বন্ধ করতেই আমার লোকজন সেখানে গিয়েছিলো। মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে গেছে। আশা করি ময়না তদন্তে সব প্রমাণিত হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, সুলতান সাহেব ফ্ল্যাটটি কিনে সমস্যা সামাধন না করে ডিবি হারুনের শশুরের সহযোগিতায় আমাকে চাপে রেখেছেন। হারুনের শশুর মহানগর হাউজিংয়ের কমিটির সভাপতি ছিলো। তার প্রভাবে সে আমাকে নানা ভাবে হয়রানি করেছে। আমি তাদের দ্বারা ভুক্তভোগী।
ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে মিলে ফ্ল্যাট দখল ও গণমাধ্যম কর্মীর ওপর হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতের উপ- পরিচালক মো. মামুন বলেন, উদ্দেশ্য প্রণীতভাবে আমাকে চাপে ফেলা হচ্ছে। আমি এই ভবনের মালিক কিংবা ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে জড়িত না। ভবনে আমার শশুর একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। আমি শশুরের বাসায় থাকি। আজকের ঘটনার সময়ে আমি বাসায় ছিলাম না। কি হয়েছে আমার জানা নেই। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ দেখলেই আপনারা বুঝতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, আমি সরকারি চাকরি করি। একজন সরকারি কর্মকর্তা কি কারো ওপর হামলা করতে পারে? বরং সুলতান সাহেব লোকজন নিয়ে আমার বাসায় ভাংচুর চালিয়েছেন। আমার বাসার দরজা ভেঙ্গে বাসায় প্রবেশ করেছেন। বাসার আসবাবপত্র ভেঙ্গে ফেলেছেন। এমন কি তারা সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙ্গে নিয়ে গেছে।
হামলার অভিযোগ নিয়ে গেলেও সহযোগিতা না কারার বিষয়ে হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি সহযোগিতা করেছি। আমি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। এমন কি হামলার ঘটনায় জড়িত তিনজনকে আটক করা হয়েছে। যারা জড়িত তাদের আটকের চেষ্টা চলছে।
তানজিলেও ওপর কারা হামলা করেছে জানতে চাইলে ওসি বলেন, প্লেজেন প্রোপার্টি লিমিটেড কোম্পানির লোকজন হামলা করেছে। আমরা তাদের সাইট ইনঞ্জিনিয়ারসহ তিনজনকে আটক করেছি। প্লেজেন প্রোপার্টি লিমিটেড নামের ডেভেলপার কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া হবে।