মোংলায় নানা আয়োজনে কবি রুদ্রের জন্মবার্ষিকী পালন

মো: নূর আলম,মোংলা (বাগেরহাট): শোভাযাত্রা, শ্রদ্ধা, গান, কবিতা এবং স্মরণানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ১৬ অক্টোবর বুধবার কবির গ্রামের বাড়ী মোংলার মিঠাখালীতে একুশে পদকপ্রাপ্ত তারুণ্যের কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ’র ৬৮তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়েছে।

সকাল ৯টায় রুদ্র স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে সংসদ চত্বর থেকে শোভাযাত্রা সহকারে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর রুদ্রের বাড়িতে দোয়া অনুষ্ঠিত হয় এবং মিষ্টি বিতরণ করা হয়।

বুধবার সকাল ১০টায় রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যাপীঠে স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়। স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন রুদ্র স্মৃতি সংসদের সভাপতি ও রুদ্রের অনুজ সুমেল সারাফাত । মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফিয়া শারমিন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন।

স্মরণানুষ্ঠানে মূখ্য বক্তা ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট মোংলার আহ্বায়ক বাপা’র কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মোঃ নূর আলম শেখ। স্মরণ সভায় আরো আলোচনা করেন, মোংলা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাসুদ রানা, উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা সবুজ বৈরাগী, ফাদার রিগন ফাউন্ডেশনের সভাপতি সুভাষ মন্ডল, চালনা বন্দর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন, মোংলা সরকারি কলেজের প্রভাষক মাহবুবুর রহমান, রামপাল সরকারি কলেজের প্রভাষক নজরুল ইসলাম প্রমুখ ।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন রুদ্র স্মৃতি সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান টিটো। আলোচনা শেষে রুদ্রের গান পরিবেশন করেন রুদ্রের গড়া সংগঠন অন্তর বাজাও।

স্মরণানুষ্ঠান শেষে রামপাল উপজেলার উন্নয়ন সংস্থা আমাদের গ্রাম-র উদ্যোগে অসহায় মানুষদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্যে দিনব্যাপী স্বাস্থ্যক্যাম্প পরিচালিত হয়। দুই শতাধিক নারী -পুরুষ বিনামূল্যে এ স্বাস্থ্যসেবা গ্রহন করেন।

সভায় বক্তারা বলেন, রুদ্র ছিলেন তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক। সমাজের সকল বৈষম্য, সাম্প্রদায়িকতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি কলম ধরেছেন। দেশ ও জাতির সংকটে রুদ্রের কবিতা হয়ে উঠেছে তারুণ্যের হাতিয়ার। বুিদ্ধবৃত্তিক আপোষকামিতায় দেশ যখন আকন্ঠ নিমজ্জিত, সত্য যখন নির্বাসনে এই রকম অস্থির সময়ে রুদ্রকে আমাদের নিজেদের জন্যে, দেশের জন্যে খুব প্রয়োজন ছিল। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন রুদ্র তার কবিতা, গান নিয়ে বেঁচে থাকবেন।

প্রসঙ্গত, মাত্র ৩৫ বছরের নাতিদীর্ঘ জীবন-সীমায় রুদ্র রচনা করেন সাতটি কাব্যগ্রন্থ-‘উপদ্রুত উপকূল’ (১৯৭৯), ‘ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম’ (১৯৮১), ‘মানুষের মানচিত্র’(১৯৮৪), ‘ছোবল’ (১৯৮৭), ‘গল্প’ (১৯৮৭) ‘দিয়েছিলে সকল আকাশ’ (১৯৮৮) এবং ‘মৌলিক মুখোশ’(১৯৯০)। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী পরিস্থিতিকে অবলম্বন করে তিনি ‘বিষ বিরিক্ষের বীজ’ নামে একটি কাব্যনাট্যও রচনা করেন। এছাড়া তিনি বেশ কিছু গল্প লিখেছেন।

তার রচিত ও সুরারোপিত ‘ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো’- গানটি দুই বাংলায় অসম্ভব জনপ্রিয়। ১৯৮৭সালে তসলিমা নাসরীনের সাথে বিচ্ছেদের পর মোংলায় বসে তিনি এ গানটি রচনা ও সুরারোপ করেন। পরবর্তীকালে এ গানটির জন্য তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি প্রদত্ত ১৯৯৭ সালের শ্রেষ্ঠ গীতিকারের (মরণোত্তর) সম্মাননা লাভ করেন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করেন।#

আরও পড়ুন...