পিবিএ,ইবি প্রতিনিধি: গভীর রাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ছাত্রদের মেসে এক ছাত্রীর অবস্থান করার ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে রাতে ব্যাপক হট্টগোল হয়। মেসটির অন্য ছাত্ররা ওই ছাত্রী ও তাকে মেসে নিয়ে আসা ছাত্রকে আটকে রাখেন।
গতকাল বুধবার (১৬ অক্টোবর) রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হল সংলগ্ন তিনবোন ছাত্রাবাসে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় অভিযুক্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ফুয়াদ। পরে ঐ দুই শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের মধ্যস্থতায় তাদের হেফাজতে নেওয়া হয়।
মেসের ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই কক্ষটিতে শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহবায়ক আনোয়ার পারভেজ অবস্থান করেন। তবে ঘটনার সময় তিনি মেসে ছিলেন না। একই কক্ষে মার্কেটিং বিভাগের ২০১৯-২০ বর্ষের আলামিন নামের এক ছাত্রদল কর্মী থাকেন। আলামিনের বিভাগের জুনিয়র ফুয়াদ গভীর রাতে তার বান্ধবীকে নিয়ে ঐ রুমে আসে। এক পর্যায়ে ওই ছাত্রীকে রুমে রেখে সে বাইরে খাবার আনতে গেলে মেসের অন্য শিক্ষার্থীরা টের পেয়ে এসে মেয়েকে দেখতে পায়। পরে তারা তাদের আটক করে রাখে।
পরে তিনবোন ছাত্রাবাসের মেস মালিক প্রবাসে থাকায় ওই মেস মালিকের ভাই মিজানুর রহমান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এরপর মেসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা দুজনকে প্রশাসনের হাতে তুলে দিতে চাইলে, মিজানুর রহমান ছেলেটিকে কৌশলে পার করে দেন বলে অভিযোগ ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীদের। আর মেয়েটিকে মিজান তার জিম্মায় রাখেন। এক পর্যায়ে ছেলেটিকে বের করে দেওয়ায় শিক্ষার্থীরা মিজানের উপর ক্ষিপ্ত হন। এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এস এম সুইট ও ইবি ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকা আশরাফ উদ্দীন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পরে প্রশাসনের মাধ্যমে সমাধানের আশ্বাস দেন। বর্তমানে অভিযুক্ত দুজনই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের হেফাজতে রয়েছে।
অভিযুক্ত ওই ছাত্রী বলেন, আমি পার্শ্ববর্তী নুর জাহান ছাত্রী মেসে থাকি। গতরাতে বান্ধবীর মেসে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে থাকার জন্য মেস থেকে ছুটি নিয়ে সন্ধ্যায় বের হই। পরবর্তীতে ফুয়াদ তাকে এখানে নিয়ে আসে এবং এখানে থাকতে বলে। ফুয়াদ তাকে রেখে বাইরে গেলে সে ওয়াশরুমে যায় এবং এর মধ্যেই বাইরে হট্টগোল শোনা যায়। পরবর্তীতে ফুয়াদ আসলে তাদেরকে বের করে নিয়ে আসা হয়। ফুয়াদ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের উভয়ের মাঝে ভালোবাসার সম্পর্ক রয়েছে।
অভিযুক্ত ফুয়াদ বলেন, ঐ মেয়েটি ছাত্রবাসে তার জরুরী প্রয়োজন সারতে আসে। তখন আমি মেসের বাহিরে ছিলাম। তবে মেসের শিক্ষার্থীরা ঐ মেয়েটিকে আমার সাথে থাকার অভিযোগে ধরে। তিনি আরো বলেন, আমি ওই রুমের ভিতরে ঢুকেছিলাম। চাবিটা রুমের পাশেই রাখা ছিল। আর এই রুমে মার্কেটিং বিভাগের আল-আমিন ভাই ও ছাত্রদলের আনোয়ার পারভেজ ভাই থাকেন। আমি আগে থেকেই এখানে যাতায়াত করতাম।
মেসের শিক্ষার্থীদের দাবি, ছেলেটি তার বড় ভাই আল-আমিনের কাছ থেকে চাবিটি নিয়ে রুমের মধ্যে প্রবেশ করে। আর যে ছেলেটি এসেছিল সে আল-আমিনের জুনিয়র। তারা কোন অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছে। আমাদের মেসের সম্মান ক্ষুন্ন হয়েছে। প্রশাসনের কাছে এর বিচার চাই।
মেস মালিকের ভাই মিজানুর বলেন, আসলে অপত্যাশিত একটা ঘটনা ঘটেছে। যে ছেলেটি এ ঘটনা ঘটিয়েছে সে আসলে এই মেসের কেউ না। আমি যতটুকু জানি এখানে আল-আমিন ও পারভেজ নামে দুটি ছেলে থাকে। এই ছেলেটি এখানে কি করে এলো আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে ইবি ছাত্রদলের যুগ্ম-আহবায়ক আনোয়ার পারভেজ বলেন, যেই রুম থেকে ছাত্রী ধরা পড়েছে ঐ রুমটা আমার না। তবে আমি ঐ রুমে বিভিন্ন সময়ে যাই, আড্ডা দেই, থাকি।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, আমরা ঘটনা জানতে পেরে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে সাময়িক সমাধান করি। প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামান বলেন, আমরা ঘটনা শুনেছি। আমরা ক্যাম্পাসে এসে ছাত্র উপদেষ্টাসহ অন্যান্যদের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিবো।