পিবিএ,পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি: রংপুরের পীরগঞ্জে জেলেপল্লী ট্রাজেডি’র ৩ বছর আজ। ২০২১ সালের ১৭ অক্টোবর ধর্মীয় অনুভ‚তিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে পীরগঞ্জের ইতিহাসে জেলে পল্লীতে হামলা করে লুটপাট ও অগ্নীসংযোগের ন্যক্কারজনক ঘটনাকে জেলেপল্লী ট্রাজেডি হিসেবে গণ্য করা।
এ ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৩টি ও হামলা লুটপাটসহ অগ্নীসংযোগের অভিযোগে ১টিসহ মোট ৪টি মামলা হয়। এতে ৭২ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়েরকৃত ১টি মামলায় প্রশান্ত রায়ের ছেলে পরিতোষকে ১১ বছর সাজা দেয় নিম্ন আদালত। পরে উচ্চ আদালতে আপিল করে আড়াই বছর সাজা ভোগের পর খালাস পায় অভিযুক্ত পরিতোষ। বাকি মামলা ৩টি আদালতে বিচারাধীন আছে বলে জানিয়েছে জেলে পল্লীর বাসিন্দারা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আগুনে ভুস্মিভূত বাড়ি গুলো নতুন করে নির্মান করা হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর মেরামত হয়েছে। পুর্ণবাসন কাজে সরকার, রাজনৈতিক দল সামাজিক সংগঠনসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা সহযোগিতা করেছে। সংস্কার করা হয়েছে ধর্মীয় উপসানালয় মন্দিরও। পুরুষেরা ফিরেছে স্ব-স্ব পেশায় কেউ মাছ বিক্রি করছে আবার কেউ ক্ষেতে কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ ৩৯টি পরিবারকে ইটের নতুন বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছে।
সেদিনের ঘটনা স্মরণ করে জেলেপল্লীর গৃহবধূ রাধা রানী বলেন, ভয়ে ভয়ে চলতেছি রাতে কিসের নিন, কিসের ঘুম। তবে ভালো আছি। কিন্তু কোনো ধরনের জোড়ে শব্দ কানে আসলেই ঘুম ভেঙে যায়। ওই ঘটনায় বেশি ক্ষতিগ্রস্থ ননী গোপাল জানান, সে দিনের ঘটনা বর্র্ণনা করে কালের কন্ঠের প্রতিনিধিকে বলেন, ভ্যানে-ভ্যানে লোক এসে কিছু বুঝে ওঠার আগেই হামলা করে আগুন ধরে দেয়। আমরা কোন মতে ধানের ক্ষেতে লুকিয়ে জীবন বাঁচাই। কসবা উত্তরপাড়া দুর্গা মন্দিরের সভাপতি অর্জুন চন্দ্র রায় কালের কন্ঠকে বলেন, আগের চেয়ে ভালো আছি কিন্তু আতঙ্ক এখনও কাটে নাই। আগে পুলিশ ছিল এখন নাই। জেলেপল্লীর একাধিক বাসিন্দা বলেন,আমরা প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা চাই।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১৭ অক্টোবর উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের বড়করিমপুর কসবা জেলে পল্লীর বাসিন্দা প্রশান্ত কুমারের ছেলে পরিতোষ কুমার (১৬) ফেসবুকের একটি পোস্টে মন্তব্যের ঘরে কাবাঘরের ব্যঙ্গ ছবি দেয়। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে রাত ১০ টার পর বিক্ষুব্ধ জনতা কসবা হিন্দু জেলে পল্লিতে বাসিন্দাদের বাড়িঘরে হামলা করে ভাঙচুর, লুটপাট করে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে ৫০টির বেশি ঘর পুড়ে যায়। এই ঘটনায় ৬৬টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়।