অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আফম খালিদ হোসেন বলেছেন, আমরা অনেকগুলো সংস্কারে হাত দিয়েছি। এরমধ্যে প্রথম প্রায়োরিটি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। অতীতে ভোট দিতে পারেনি বলে, লোকজন ভোট কেন্দ্রে যায়নি। সেই নষ্ট সিস্টেম পাল্টিয়ে ভোটাধিকার নিশ্চিত করার কাজ চলছে। এসব সংস্কার শেষ হলে সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ সরকার ব্যর্থ হলে চরম অরাজকতা নেমে আসবে। তাই সরকারকে সহযোগিতা করুন।
শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) বিকেলে কক্সবাজার প্রেস ক্লাব ও হিলডাউন সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
গত ১৭ অক্টোবর রাতে এক টকশোতে ২০২৫ সালে নির্বাচন হবে- আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের এমন মন্তব্যের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আফম খালিদ হোসেন বলেন, নির্বাচন নিয়ে সেনা প্রধান ও ড. আসিফ নজরুলের মন্তব্য সরকারের সিদ্ধান্ত নয়। সরকার প্রধান যতদিন নির্দিষ্ট করে বলবে না ততদিন নির্বাচনের সময় নির্ধারিত নয়।
ধর্ম উপদেষ্টা আরও বলেন, একটি সরকারের পতন হয়েছে। সেই সরকারের অবশিষ্ট সময় পূরণের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বসানো হয়েছে। তার চেয়ে বড় কথা রাষ্ট্রের নানা সিস্টেম সংস্কার প্রসঙ্গ। সংস্কার না করে নির্বাচন দিলে রাষ্ট্র নড়বড়ই থেকে যাবে। তাই সরকার গভীর মনযোগে সংস্কারে হাত দিয়েছে।
এ উপদেষ্টা বলেন, অনেক নেতা প্রকাশ্যে বলছেন- উপদেষ্টাদের মনে ক্ষমতার লোভ ঢুকে গেছে। তারা ক্ষমতা ছাড়তে চাইবে না। এটা তাদের ভুল ধারণা। আমাদের কোনো ধরণের ক্ষমতাপ্রীতি বা লোভ নেই। আমরা এসেছি অস্থায়ীভাবে; দেশের সিস্টেম সংস্কারে আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমাদের কাজ শেষ হলে কাউকে বলতে হবে না। নির্বাচন দিয়ে, নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে আমরা চলে যাবো।
দেশে চলমান মডেল মসজিদ নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে খালিদ হোসেন বলেন, মডেল মসজিদগুলো নির্মাণে দুর্নীতি হয়েছে এটা ঠিক। এরকম অনেক প্রমাণ ইতোমধ্যে আমরা পেয়েছি। এমনকি এক মসজিদ পরিদর্শনকালে আমি দেখেছি ফ্লোরে ফাটল। অভিযোগ ও প্রাপ্ত প্রমাণ হাতে নিয়ে আমরা তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এসব মডেল মসজিদ নির্মাণে সৌদিআরব কোনো টাকা দেয়নি, সব টাকা সরকারি ফান্ডের বলে তথ্য প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিগত সময়ে দেশের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিক ভিত্তি থেকে সরে গিয়েছিল। রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোরও সংস্কার করা হবে।
জাহাজে হজযাত্রা প্রসঙ্গে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, জাহাজে করে হজ্বযাত্রী পাঠানোর বিষয়ে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে। এ বিষয়ে সৌদি আরবসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তবে তা সময় সাপেক্ষ। তাই ২০২৫ সালে সম্ভব না হলেও; ২০২৬ সালে পাঠানোর জন্য দ্বার প্রসস্ত হবে।
উপদেষ্টা বলেন, আমার শিক্ষার্থী সময়কাল হতে পিএইচডি পর্যন্ত সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত ছিলাম। বিভিন্ন মিডিয়ায় আমি নিয়মিত লেখালেখি করে এসেছি। আমি আপনাদের লোক। আপনারা সরকারকে সহযোগিতা করুন। সাংবাদিকদের জীবনমান উন্নয়নে সরকার সচেষ্ট রয়েছে।
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আফম খালিদ হোসেন দুদিনের শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। পৌছে তিনি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় ও পরে নবনির্মিত কক্সবাজার কেন্দ্রীয় মডেল মসজিদ এবং বিকেল ৩টায় কক্সবাজার বায়তুশ শরফ স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন করেন। এসময় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মু. আ হামিদ জমাদ্দার, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন, পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ, গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহজাহান, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক ফাহমিদা বেগমসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।