যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে শিখ নেতা গুরপাতওয়ান্ত সিং পান্নুনকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর সাবেক এক কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিকাশ যাদব নামে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হত্যার জন্য ঘাতক ভাড়া করা ও অর্থপাচারের অভিযোগসহ তিনটি অভিযোগ এনেছে ওয়াশিংটন।
কানাডায় খালিস্তানপন্থি আন্দোলনের নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যার ঘটনায় আবারও কয়েকদিন ধরে নয়াদিল্লি ও অটোয়ার মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এমনকি, উভয় দেশ থেকে পাল্টাপাল্টি কূটনীতিক বহিষ্কারের ঘটনাও ঘটেছে। তাছাড়া ভারতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও ভাবছে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সরকার। এবার আরেক শিখ নেতা পান্নুন হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্কে তিক্ততা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) এক ঘোষণায় বিকাশ যাদবকে অভিযুক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করে নিউইয়র্কের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্টের অ্যাটর্নির কার্যালয়।
ঘোষণায় বলা হয়েছে, গত বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর যুক্তরাষ্ট্র সফরের আগ মুহূর্তে খালিস্তানপন্থি শিখ নেতা পান্নুনকে হত্যার যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তাতে সামিল ছিলেন ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং’ তথা ‘র’ এর সাবেক কর্মকর্তা বিকাশ যাদব (৩৯)।
বিকাশ যাদবকে এখন খুঁজছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)। এরই মধ্যে তার নামে হুলিয়া জারি করেছে সংস্থাটি।
এর আগে চলতি বছরের শুরুর দিকে এই মামলার আরেক সন্দেহভাজন নিখিল গুপ্তাকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ করা হয়েছিল। তবে বিকাশ যাদব এখনো পলাতক রয়েছেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এফবিআইয়ের পরিচালক ক্রিস্টোফার ওয়ে বলেন, আসামি যাদব একজন ভারতীয় সরকারি কর্মী। তিনি একজন অপরাধীর সহযোগীর সঙ্গে মিলে ষড়যন্ত্র করেছিলেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে একজন মার্কিন নাগরিককে হত্যার চেষ্টা করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সহিংসতা বা যে কোনো ধরনের প্রচেষ্টা সহ্য করবে না এফবিআই।
এদিকে, মার্কিন প্রশাসনের এই অভিযোগ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি ভারত সরকার। এর আগে এই হত্যার ষড়যন্ত্রে একজন সরকারি কর্মকর্তা জড়িত থাকার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছিল মোদী সরকার। তবে বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে ভারত।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানান, যুক্তরাষ্ট্র যে তথ্য দিয়েছে, তা খতিয়ে দেখার জন্য ভারতের তদন্ত কমিটির দুই সদস্য ওয়াশিংটনে গেছেন। সেখানে তারা এফবিআই কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত একটি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
বৈঠকটি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। সেই বৈঠকের ৪৮ ঘণ্টা পরই সাবেক ‘র’ অফিসার বিকাশ যাদবের বিরুদ্ধে পান্নুনকে খুনের চক্রান্তে সামিল থাকার অভিযুক্ত করার বিষয়টি জানায় মার্কিন কর্তৃপক্ষ।
মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক বি গারল্যান্ড বলেন, আমেরিকানদের লক্ষ্যবস্তু করা ও তাদের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দেওয়ার মতো কাজ বরদাস্ত করবে না জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট। মার্কিন নাগরিকের অধিকার খর্ব করার মতো কাজ করা হলে সেটাও বরদাস্ত করা হবে না।
শিখ নেতা গুরপাতওয়ান্ত সিং পান্নুন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার দ্বৈত নাগরিক। শিখস ফর জাস্টিস সংগঠনের আইনবিষয়ক উপদেষ্টা পান্নুন। তিনি ভারতের পাঞ্জাবের একটি আলাদা সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য শিখ প্রচারণার একজন সোচ্চার সদস্য, যা খালিস্তানপন্থি আন্দোলন নামে পরিচিত। আইন লঙ্ঘনের জন্য পান্নুনকে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় রেখেছে ভারত।
ভারত শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদকে সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। শিখস ফর জাস্টিস খালিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রচার চালানোর কারণে সংগঠনটিকে ২০১৯ সালে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ভারত সরকার। তাছাড়া খালিস্তানপন্থিদের তৎপরতা কমাতে বড় আকারের শিখ জনসংখ্যা রয়েছে এমন মিত্র দেশ, যেমন- কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে ভারত।