পাঁচ মিলিয়ন ডলারের প্রলোভন, ১৭ লাখ হাতিয়ে নারী গ্রেফতার

‘বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মি. মোহাম্মদ বেলটন দেশটির একটি ব্যাংকে পাঁচ মিলিয়ন ডলার বিমার টাকা রেখে মারা গেছেন। ওই ব্যক্তির আত্মীয় পরিচয়ে ব্যাংকটিতে যোগাযোগ করলে টাকাগুলো উদ্ধার করা যাবে।’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচিত হওয়া ‘আন্না হ্যারিসন’-নামক একটি ভুয়া ফেসবুক আইডির দেওয়া এমন তথ্যে তার দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী টাকাগুলো তুলতে গিয়ে ১৭ লাখ টাকা খুইয়েছেন ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের বাসিন্দা মো. নুরুজ্জামান (২৫)।

এ ঘটনায় নিউমার্কেট থানায় মো. নুরুজ্জামানের দায়ের করা প্রতারণা মামলায় প্রতারক চক্রের মূলহোতা পান্না বেগমকে (৪১) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানার ভুলতা বাজারের ডাচ-বাংলা ব্যাংকের সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করে মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই (নিঃ) ফিরোজ আহম্মেদ সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্সগণ। এসময় তার কাছ থেকে নগদ ৬ লাখ ১ হাজার ২৫০ টাকা, বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৬টি অ্যাকাউন্টের ১৫৯টি চেকের পাতা, ৩টি ভিসা কার্ড ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৫টি মোবাইল ফোন, ৮টি সিমকার্ড উদ্ধার করা হয়।

শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহসীন উদ্দিন এসব তথ্য জানান।

তিনি জানান, ২৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে ‘আন্না হ্যারিসন’ নামক একজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির ফেসবুক আইডির সাথে যোগাযোগ হয় মামলার বাদী নুরুজ্জামানের।

যোগাযোগের এক পর্যায়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি নুরুজ্জামানকে বলে, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মি. মোহাম্মদ বেলটন নামে এক ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত ঘটিকায়খানায় থাকা অবস্থায় মারা যায় এবং তার এলাইনস ব্যাংক এ পাঁচ মিলিয়ন ডলার জমা রয়েছে। মৃত ব্যক্তির আত্মীয় পরিচয় দিয়ে টাকাগুলো তুলতে যুক্তরাষ্ট্রের মৃত ব্যক্তির আইন উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী আইন উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বিমার টাকা পেতে ৭ লাখ ৭৬ হাজার মার্কিন ডলার পাঠাতে বলেন। পরবর্তীতে ফেসবুকে পরিচিত হওয়া আন্না হ্যারিসন উপদেষ্টাকে টাকা পরিশোধ করে বাদীকে একটি পেমেন্ট স্লিপ দেয়। এরপর ব্যাংকটি ৫ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য একটা শিপিং কোম্পানির নিকট ২ টি লাগেজ প্রদান করে যেটা ভিকটিমকে দেখানো হয়।

পরবর্তীতে লাগেজ দুটি বাংলাদেশে পৌঁছেছে জানিয়ে ডেলিভারি বাবদ ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা চাওয়া হয় যা বাদী পরিশোধ করেন। এরপর প্রতারক চক্রের কথামতো কয়েক দফায় মোট ১৭ লাখ ৬৭ হাজার টাকা পাঠানোর পর বাদী বুঝতে পারেন তিনি প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েছেন।

পরবর্তীতে গত ১২ অক্টোবর বাদী নিউমার্কেট থানায় অভিযোগ দিলে চক্রটিকে গ্রেফতার অভিযানে নামে পুলিশ। সেই অভিযানের অংশ হিসেবে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় বৃহস্পতিবার পান্না বেগমকে গ্রেফতার করা হয়।

উল্লেখ্য, একই মামলায় গত ১৩ অক্টোবর খিলগাঁও থানা পুলিশের সহায়তায় বনশ্রীর মডেল এজেন্সি নামক একটি অফিস থেকে চক্রের আরেক সদস্য মো. আজিজ মোল্লাকে গ্রেফতার হন। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে নয়টি ব্যাংকের নয়টি চেক বই, তিনটি এটিএম কার্ড, দুইটি ভিসা কার্ড ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

আরও পড়ুন...