ধুনটে কেমন আছেন মৃৎ শিল্পের কারিগররা?

কারিমুল হাসান,ধুনট (বগুড়া): মাটি দিয়ে তৈরী সুন্দর ও সৃষ্টিশীল বস্তুকে মৃত শিল্প বলা হয়ে থাকে। মাটির শিল্প কর্মকেই মৃৎশিল্প বলা হয়। এ শিল্পের কাজের যারা জড়িত তাদেরকে মুলত কুমার বলে সম্মোধন করা হয়ে থাকে। মৃৎশিল্প মানুষের প্রাচীনতম আবিষ্কার। প্রাচীনতম আবিস্কার হলেও মানব সৃষ্টির অনেক আগেই সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং মৃৎ শিল্পের ব্যবহার ঘটিয়েছেন। মুসলিম ধর্ম বিশ্বাষ মতে হযরত আদম আঃ কে সৃষ্টিকর্তা মাটি দিয়েই সু-নিপুন ভাবে তৈরী করেছে।

মাটিই যুগ যুগ ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে শৈল্পীক কাজে। মৃৎ শিল্প আমাদের দেশের সবচেয়ে প্রাচীন একটি শিল্প। কমবেশি সারাদেশেই মাটির তৈরী শৈল্পীক তৈজসপত্র তৈরী হয়ে থাকে। বগুড়ার ধুনটেও এ শিল্পের প্রচলন রয়েছে যুগযুগ ধরে। এ শিল্পে সবচেয়ে বেশি দরকার হাতের নৈপুণ্যতা ও কারিগরি জ্ঞান। তবে কুমোরদের কাছে নৈপুন্য ও কারিগরি জ্ঞান থাকলেও আজকাল মাটির তৈরি জিনিস আগের মতো বিক্রি না হওয়ায় অনেকটা পরিতাপের বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। বলা যায়, বাঙালির ঐতিহ্য মাটির শিল্প যেন দিন দিন কালের পরিক্রমায় হারিয়ে যাচ্ছে। তাই মাটির শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে মাটির তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহারে আমাদের এগিয়ে আসতে উচিত বলে মনে করেন অনেকে। তা ছাড়া সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় কুমোর সম্প্রদায়কে উৎসাহ দেওয়ার পাশাপাশি আর্থিকভাবে কিছুটা সহায়তা পেলে মৃৎ শিল্পকে সোনালি দিনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বগুড়ার ধুনট উপজেলার সদর ইউনিয়নের বিলকাজুলী গ্রামে অন্তত দেড়শত পরিবার মৃৎ শিল্পের কাজে জড়িত ছিলো। প্লাস্টিকের তৈরি আধুনিক জিনিসপত্রের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মাটির তৈরি জিনিস পত্রের চাহিদা একদম কমে যায়। হারিয়ে যায় সাধারন মানুষের ক্রয় চাহিদা। ফলে দিনদির বেকার হয়ে পড়ে মৃৎ শিল্পে কর্মরত অনেক পরিবার। বাধ্য হয়ে বেছে তারা বেছে নেন অন্য আয়ের পথ। বর্তমানে ওই গ্রামে হাতেগনা নামমাত্র কয়েকটি পরিবার মৃৎ শিল্পের সাথে জড়িয়ে আছে।

রতীকান্ত পাল নামের এক কারিগর বলেন, এ পেশায় এখন আর আগের মতো লাভ নেই। অন্য কোন কাজ জানিনা তাই বাপ-দাদার পেশাকে কোন রকমে আঁকড়ে ধরে আছি। আমারা ধার, দেনা ও কিস্তি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। সরকার যদি আমাদের মাটির কাজকে একটু প্রাধান্য দিয়ে মাটির তৈরি জিনিসের দাম বাড়িয়ে এ খাতে বরাদ্দ দিতো তাহলে মাটির শিল্পটিকে বাঁচিয়ে রাখা যেত।

তবে আশার কথা হল, দৈনন্দিন ব্যবহার্য্য হিসেবে না হলেও সৌখিনতায় এ শিল্পেরর চাহিদা রয়েছে। মাটির তৈর জিনিসপত্র দিয়ে ঘরের শোভা প্রকাশ করছেন অনেকে। সঠিক ব্যবহারে প্রশংসাও পেয়েছেন এই শিল্পে থাকা কারিগররা। বগুড়া, শেরপুরসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গাতেই সৌখিন মানুষরা পেতে পারেন আপনার শখের ফুলদানি কিংবা মাটির নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য। সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে এই শিল্পটিকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব বলে মন করছেন এই শিল্পের সাথে জড়িত কারিগররা।

আরও পড়ুন...