বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, ‘যারা নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে ব্যাংকের টাকা লোপাট করেছে এবং টাকা পাচার করে বিদেশে সম্পদ গড়েছে, এসব লুটেরাদের ছাড় দেয়া হবে না। তাদের সম্পদ খুঁজে বের করে, যথাযথ ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।’
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ দূতাবাসে বিভিন্ন পেশাজীবীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। এ সময় উপস্থিত প্রবাসী পেশাজীবীরা দেশের ব্যাংক খাত এবং অর্থ পাচার নিয়ে উদ্বেগ জানালে গভর্নর এসব কথা বলেন।
গভর্নর বলেন, ‘ব্যাংকের লোপাট করা অর্থ দেশে-বিদেশে যেখানেই থাক, তা ফিরিয়ে দেশে নিয়ে আসা হবে। এছাড়া, সম্পদ মূল্যায়নে বিদেশি তালিকায় রাখা হয়েছে ১০টি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয়া হবে।’ গভর্নর জানান, ব্যাংক থেকে ঠিক কী পরিমাণ অর্থ লোপাট হয়েছে, শিগগিরই তার হিসাব জানা যাবে।
চরম তারল্য সংকটের মুহূর্তে ব্যাংক গ্রাহকদের ধৈর্যের প্রশংসা করে গভর্নর বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতেও তারা কোনো প্রতিষ্ঠানে হামলা করেনি।’ এজন্য নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর।
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতাও নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। সুদের হার প্রসঙ্গে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মতো মূল্যস্ফীতি কমে আসলে দেশেও ৬ মাস পর সুদহার কমানো সম্ভব হবে।’
এর আগে গত ২২শে অক্টোবর মূল্যস্ফীতি কমাতে দেশে নীতি সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ হার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৯.৫০ থেকে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। এটা আগামী ২৭শে অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে। এছাড়া ব্যাংকগুলোর তারল্য ব্যবস্থাপনা আরও দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করার লক্ষ্যে নীতি সুদহার করিডোরের ঊর্ধ্বসীমা স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটির (এসএলএফ) ক্ষেত্রে বিদ্যমান সুদ হার শতকরা ১১ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ১১.৫০ শতাংশ পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। আর নীতি সুদ হার করিডোরের নিম্নসীমা স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) শতকরা ৮ শতাংশ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৮.৫০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
আগামী মাস থেকে দেশের ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ সম্পদের মূল্যায়ন শুরু করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। রিপোর্ট অনুযায়ী, এরপরই প্রয়োজনীয় অর্থ সহায়তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়নে কোন পদ্ধতিতে কাজ করতে হবে, সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও বিশ্বব্যাংকের কাছে নীতি সহায়তা চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বার্ষিক সভায় যোগ দিয়ে বিভিন্ন বৈঠকে অংশ নেন বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিরা। যুক্তরাষ্ট্রসহ দাতা সংস্থাগুলোর কাছে তুলে ধরেন নতুন এক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার রোডম্যাপ।
প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয়, ব্যাংক ব্যবস্থাপনাসহ ভগ্ন দশায় থাকা দেশের আর্থিক খাতের শুদ্ধতায় আনা পরিবর্তনগুলো। আর নভেম্বর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দিয়ে সম্পদ মূল্যায়নের কাজ শুরু হবে বলে জানান গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
তিনি বলেন, ‘সম্পদ মূল্যায়নের কাজ শুর করতে রোডম্যাপ তৈরি করা রয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দিয়ে যাচাই-বাছাই করে কোন ব্যাংক কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেটি নিরূপণ করা হবে।’
অর্থনৈতিক উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি খাতের অংশীদারত্ব কোন পথে, কীভাবে হবে এ নিয়ে মার্কিন সরকারের নীতি সহায়তাও চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গভর্নর জানান, যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও বিশ্বব্যাংকের কাছে নীতি সহায়তা চাওয়া হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ সহায়তা দরকার।