মোঃ বাবুল হোসেন,পাঁচবিবি জয়পুরহাট: আমন ধান কাটা মাড়াই মৌসুম শুরু না হলেও কিছু কিছু আগাম জাতের আমন ধান কাটায় ঐসব জমি ও ফাঁকা ভিটে মাটিতে আগাম আলু চাষের জন্য জমি প্রস্তুতিসহ আলু রোপণে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার কৃষকরা। বাজারে এবার আলুর উচ্চ মুল্য থাকায় আগাম জাতের আলু চাষ করে আরো লাভবান হওয়ায় আশায় অন্যান্য বারের তুলনায় এবার অধিক পরিমাণে আলু চাষে ঝুঁকে পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা । চলতি আমন মৌসুমের কিছু কিছু আগাম জাতের ধান কাটায় ফাঁকা জমিসহ অনেকেই কচু কেটে বিক্রি করে সেই জমিতে এখন আগাম আলুর বীজ রোপণ করছেন ।
উপজেলার বাগজানা, ধরঞ্জী, রতনপুর, নন্দইল, তাজপুর, আয়মারসুলপুর, কড়িয়া, কেশবপুর, নওয়ানাসহ কয়েকটি গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে কৃষকরা আলু চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এ সময় কথা হয় উপজেলার বাগজানা ইউনিয়নের খোর্দ্দা (গঙ্গাঁপ্রসাদ) গ্রামের কৃষক দেলোয়ার হোসেনের সাথে।
তিনি বলেন, বাজারে যার আলু যত আগে উঠবে, তার লাভ তত বেশি। তাই আগে ভাগেই আলু আবাদ করছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলেও এবার বীজের দাম একটু বেশি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার প্রতি বিঘা আলুর বীজে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা বেশি কিনতে হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সারের সরবরাহও স্বাভাবিক। তিনি এবার ২ একর জমিতে আগাম জাতের আলু রোপন করছেন বলে জানান।
একই গ্রামের মাহাবুব আলম বাবু বলেন, তিনিও এবার ১ একর জমিতে আগাম জাতের আলু চাষের প্রস্তুতি নিয়েছেন। তিনি জানান, প্রতি বিঘা জমিতে আগাম জাতের আলু রোপনে খরচ হচ্ছে ৩৫-৪০ হাজার টাকা। বিঘায় আলু উৎপাদন হবে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ মন। বাজারে আগে আলু তুলতে পারলে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হবে প্রায় ৮০ থেকে ১শ টাকা দরে । এতে বিঘা প্রতি আলু বিক্রি করে খরচ বাদে লাভ পাওয়া যাবে প্রায় ৪০ হতে ৫০ হাজার টাকা।
ধরঞ্জী ইউনিয়নের শ্রীমন্তপুর গ্রামের আলু চাষী মাহফুজার রহমান জানান, আগাম জাতের আলু চাষ করে ভালো দাম পাওয়া যায়। তাছাড়া ৬০-৬৫ দিনের মধ্যে এ আলু ক্ষেত থেকে তোলা যায় বলে কৃষকদের আলু চাষের আগ্রহ বেশি।
ধরঞ্জী এলাকার আলু চাষী নুরুল ইসলাম জানান, গতবার ১ বিঘা জমিতে রোমানা জাতের আগাম আলু চাষ করে ভাল দাম পেয়েছেন। তাই এবারও ভাল দামের আশায় ১ একর জমিতে আগাম জাতের আলুর আবাদ করেছেন বলে জানান তিনি।
অপরদিকে বর্তমান সময়ে গ্রামাঞ্চলে কোনো কৃষি কাজ না থাকা আগাম জাতের আলু চাষের কারনে শ্রমিকদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি এ কাজে নারী শ্রমিকরাও অংশ গ্রহন করছে। তবে এ ক্ষেত্রে কিছুটা শ্রম মূল্য বৈষম্য লক্ষ্য করা গেছে। শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুরুষ শ্রমিকদের হাজিরা হিসাবে ৪শ টাকা করে দেওয়া হলেও নারী শ্রমিকদের ২শ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।
তবে শ্রমিকরা জানান, আগে এ সময়টা কোনো কাজ থাকতো না। এখন (আগুর) আগাম আলু চাষ হওয়ায় কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
পাঁচবিবি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, আগাম আলু একটা লাভ জনক সব্জি । বাজারে উচ্চ মুল্য থাকায় এবার তুলনা মুলক বেশি আলু চাষে ঝুঁকছে কৃষক । আগাম আলু ও অন্যান্য রবি ফসল চাষে পরামর্শসহ সকল প্রকার সহযোগিতা করবে পাঁচবিবি কৃষি অফিস । উল্লেখ্য যে চলতি আলু চাষ মৌসুমে প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম আলু চাষ হবে ।