আজিমপুর মেডিকেল স্টাফ কোয়ার্টার, লালবাগ টাওয়ারের পাশের গলি থেকে গতকাল (১৫ নভেম্বর) সকাল ০৯০০ টার দিকে ফারজানা নামক এক নারীর বাসায় ডাকাতির সময় নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার নেওয়ার পাশাপাশি তারা একটি বাচ্চাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
পরবর্তীকে ভিকটিমের পরিবার ভিকটিমকে উদ্ধারের জন্য র্যাব-১০ এর নিকট সহায়তা চায়। উক্ত ঘটনায় বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিত হয়। উক্ত ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে র্যাব।
গত রাতে র্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর মোহাম্ম¥দপুরের নবীনগর হাউজিং এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চাঞ্চল্যকর এই অপহরণের পরিকল্পনাকারী মোছাঃ ফাতেমা আক্তার শাপলা (২৭)-কে গ্রেফতার করা হয়।
অপহৃত ভিকটিম ০৮ মাস বয়সী শিশু কন্যা আরিসা জান্নাত জাইফাকে উদ্ধার করে তার পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত উক্ত ডাকাতি ও অপহরণের সাথে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করে।
ভিকটিম আরিসা জান্নাত জাইফা এর মায়ের নাম ফারজানা আক্তার। ভিকটিমের মা চাকরি করেন এবং ভিকটিমের পিতা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। রাজধানীর আজিমপুরের লালবাগ টাওয়ার এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় ভিকটিমের পরিবার বিগত ০৩ বছর যাবৎ বসবাস করে আসছেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, অপহরণের ০১ সপ্তাহ পূর্বে ভিকটিমের মায়ের সাথে অফিসে যাতায়াত করার সময় গ্রেফতারকৃত শাপলার পরিচয় হয়। এসময় গ্রেফতারকৃত শাপলা ভিকটিমের মায়ের কাছে তার নাম রাইসা এবং তার বাড়ি নওগাঁ জেলা বলে মিথ্যা পরিচয় প্রদান করে।
আসামি ফাতেমা আক্তার শাপলা আরও জানায় যে, সে অবিবাহিত এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ ২য় সেমিস্টারের ছাত্রী। পড়ালেখার পাশাপাশি সে সচিবালয়ের পরিবহন পুলে অফিস সহায়ক হিসেবে চাকুরি করে বলে জানায়।
গ্রেফতারকৃত ফাতেমা আক্তার ভিকটিমের মা ফারজানা আক্তারকে আরও জানায় যে, তার ঢাকায় থাকার জন্য সাবলেট হিসেবে একটি ভাল রুম দরকার এবং তাকে সাবলেট হিসেবে ভিকটিমের বাসায় ভাড়া দিলে সারাদিন বাসায় পড়াশোনার পাশাপাশি ভিকটিমকে দেখভালও করতে পারবে। ভিকটিমের মা ভিকটিমের দেখাশুনার কথা চিন্তা করে গ্রেফতারকৃত ফাতেমা আক্তারকে সাবলেট হিসেবে বাসা ভাড়া দেওয়ার জন্য রাজি হয়।
পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত ফাতেমা আক্তার গত ১৪ নভেম্বর বিকালে বাসায় আসে এবং ভিকটিমের মাকে ২০০০ টাকা অগ্রিম ভাড়া হিসেবে প্রদান করে বাসায় রাত্রি যাপন করে। পরের দিন সকালে গ্রেফতারকৃত ফাতেমা আক্তার ভিকটিমের মা ফারজানা আক্তারকে জানায় যে, গ্রাম থেকে তার চাচাতো ভাই চাল নিয়ে তার বাসায় আসবে। পরবর্তীতে সকাল আনুমানিক ০৮৩০ ঘটিকায় গ্রেফতারকৃত ফাতেমা আক্তার তার চাচাতো ভাই পরিচয়ে ০৩ ব্যক্তিকে বাসায় নিয়ে আসে। বাসায় আসার পর আলাপচারিতার এক পর্যায়ে গ্রেফতারকৃত ফাতেমা আক্তার ও তার কথিত চাচাতো ভাইয়েরা ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ভিকটিমের মাকে ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলে। এ
সময় গ্রেফতারকৃত ফাতেমা আক্তার ও তার সহযোগীরা বাসার স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থসহ মূল্যবান মালামাল লুট করে ভিকটিম জাইফাকে নিয়ে গ্রেফতারকৃতের বাসায় চলে আসে এবং তার সহযোগীরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করে।
পরবর্তীতে গোয়েন্দা নজরদারী ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিং এলাকা থেকে ভিকটিম জাইফাকে উদ্ধার পূর্বক অপহরণের পরিকল্পনাকারী ফাতেমা আক্তারকে গ্রেফতার করা হয়।
উল্লেখ্য, গ্রেফতারকৃত ফাতেমা আক্তার ও তার সহযোগীরা মুক্তিপণ আদায় করার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু ঘটনাটি বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণে দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে তারা ভিকটিমের পরিবারের নিকট মুক্তিপণ দাবি করতে পারেনি বলে জানায়।
গ্রেফতারকৃত মোছাঃ ফাতেমা আক্তার শাপলা একজন গৃহিনী। সে ২০১০ সালে তার পরিবারের সাথে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসবাস শুরু করে। সে ২০১২ সালে বগুড়ার একটি স্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০১৪ সালে রাজধানীর একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে। পরবর্তীতে রাজধানীর অপর একটি কলেজে মার্কেটিং বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা শুরু করলেও তা শেষ করেনি। পরবর্তীতে ২০২৩ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং বিগত ৩-৪ মাস পূর্বে মোহাম্মদপুর নবীনগর হাউজিং এলাকায় তার স্বামীর নিজস্ব ফ্লাটে বসবাস শুরু করে।
গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।