অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অসাংবিধানিক ও বেআইনিভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে বলে দাবি করেছে আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সবাই বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত বলে দাবি করেছে দলটি।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পেস্টে এ দাবি করা হয়।
পোস্টে বলা হয়, ‘দেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায় ১৯৭২ সালের সংবিধানে নির্বাচন কমিশনকে একটি সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়। জাতির পিতার নেতৃত্বে স্বাধীনতার অব্যবহিত পর থেকে এই সাংবিধানিক চেতনার ভিত্তিতেই নির্বাচন কমিশন গঠন এবং এর কার্যাবলি পরিচালিত হচ্ছিল। ১৯৭৫ সালে সপরিবারে জাতির পিতার হত্যার পর অসাংবিধানিক স্বৈরশাসকরা নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছিল। সে লক্ষ্যেই তারা রাবার স্টাম্প নির্বাচন কমিশন গঠন করেছিল।’
‘বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রতিটি সরকারের সময় নির্বাচন কমিশন গঠন তথা প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের ক্ষেত্রে সাংবিধানিক বিধান ও গণতান্ত্রিক নীতির প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান দেখানো হয়। শেখ হাসিনার প্রথম সরকারের সময় ২০০০ সালে যখন সাবেক সচিব এম এ সাঈদকে নিয়োগ করা হয়, বিএনপিসহ সব দল সেই নিয়োগে সন্তোষ প্রকাশ করেছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রত্যেকবারই নির্দলীয়, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সর্বশেষ সিইসি হাবিবুল আউয়াল এবং ওই কমিশনের সব সদস্যের নিরপেক্ষতা, গ্রহণযোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়ে কারও কারও আপত্তি ছিল না। সুশীল সমাজসহ রাজনৈতিক মহল এই নিয়োগের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের প্রশংসা করেছিল।’
পোস্টে আরও বলা হয়, ‘গণতন্ত্রকে এ দেশে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া এবং এটিকে আরও মজবুত করার লক্ষ্যে শেখ হাসিনা সিইসিসহ অন্যান্যদের নিয়োগের ক্ষেত্রে তার সাংবিধানিক প্রাধিকার পরিত্যাগ করে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক এবং নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত সার্চ কমিটির মাধ্যমে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের ব্যবস্থা করেন। এছাড়া শেখ হাসিনার সরকার নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে ৮২টি উদ্যোগ গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করে। গণতন্ত্রকে টেকসই করার লক্ষ্যে তার এই নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কার্যক্রম দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে।’
‘অতি সম্প্রতি অসাংবিধানিক ও অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী, তথাকথিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের কোনো সাংবিধানিক ও আইনি ম্যান্ডেট না থাকা সত্ত্বেও সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক ও বেআইনিভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী ব্যক্তিদের সমন্বয়ে এই অবৈধ নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে। এর লক্ষ্য নির্বাচন কমিশনকে দেশের স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীর অনুকূলে নগ্ন দলীকরণ করা। তারা এ কাজটিই করেছে। সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের সবাই বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত।’
আওয়ামী লীগ আরও দাবি করেছে, ‘৩০ লাখ শহীদের রক্তে লেখা সংবিধানের আদর্শকে ভূলুণ্ঠিত করা এবং দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংসের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে অকার্যকর করার লক্ষ্যে অসংবিধানিক ও অবৈধ এই তথাকথিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচন কমিশন গঠনের এ জঘন্য নাটক সাজিয়েছে। গণতন্ত্র হত্যার লক্ষ্যে এ ধরনের ঘৃণ্য উদ্যোগ আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। দেশের গণতন্ত্রপ্রিয় সংগ্রামী মানুষ গণতন্ত্র হত্যার এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।’