বাংলাদেশের গণ–অভ্যুত্থানের ঘটনায় ভারতীয় গণমাধ্যম খুবই অখুশি বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেছেন, ভারতীয় গণমাধ্যম প্রমাণ করতে চাচ্ছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন চালানো হচ্ছে এবং তালেবান ঘরানার সরকার আসতে যাচ্ছে। এ ধরনের অপপ্রচার দুই দেশের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না।
রোববার (১ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার ইন-এ সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির ৩০ বছর পূর্তি উদ্যাপন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
তৌহিদ হোসেন বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের পর বিশৃঙ্খলা–অস্থিতরতা দেখা দিয়েছিল। তবে সেটা ছিল খুবই অল্প সময়ের জন্য। খুব দ্রুতই বর্তমান সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। পুলিশ ছাড়াই শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে তা সম্ভব হয়েছিল। পরে পুলিশ এলে শিক্ষার্থীরা রাজপথ ছেড়ে যায়। সেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের পর গত সাড়ে তিন মাসে সরকার অনেক কিছু করেছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘গণ–অভ্যুত্থান হওয়ায় গণমাধ্যম, বিশেষ করে ভারতীয় গণমাধ্যম খুবই অখুশি। শুধু ভারত নয়, সারা বিশ্বেই এখন সংঘবদ্ধভাবে প্রোপাগান্ডা (অপপ্রচার) চালানো হচ্ছে। তারা (ভারতীয় গণমাধ্যম) প্রমাণ করতে চাচ্ছে যে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন চালানো হচ্ছে, তালেবান ঘরানার সরকার আসতে যাচ্ছে ইত্যাদি, যা খুবই অন্যায্য।’
বাংলাদেশের মানুষ মনে করছে, কোনো ভুল না করেই তাদের ভুক্তভোগী করা হচ্ছে—উল্লেখ করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এর নেতিবাচক দিক হলো এসব কোনো পক্ষকেই ভালো কিছু দেবে না। এসব বাংলাদেশের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না, ভারতের জন্যও ভালো কিছু বয়ে আনবে না।
দক্ষিণ এশিয়ার বাইরেও সিপিডির ভালো যোগাযোগ আছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সেই যোগাযোগকে কাজে লাগিয়ে সিপিডি তুলে ধরতে পারে যে বাংলাদেশ কী করছে, বাংলাদেশের ভেতরে সত্যিকারের অবস্থা কী।
আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়া এখন খুবই কঠিন সময় পার করছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সম্মাননীয় ফেলো ও বোর্ড সদস্য ফারুক সোবহান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালকে যুক্ত করেছে বিবিআইএন প্রক্রিয়া। বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটা মেনে নিতে হবে যে এই প্রক্রিয়াও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে।
এ সময় আরও বক্তব্য দেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি বক্তব্য দেন ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট গ্রুপের পরিচালক ডার্ক উইলেম তে ভেলডি, ইউনান একাডেমি অব সোশ্যাল সায়েন্সের সাবেক সভাপতি রেন জিয়া, ভারতের রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম ফর ডেভেলপিং কান্ট্রিজের মহাপরিচালক সচীন চতুর্বেদি, দ্য সাউথ এশিয়া সেন্টার ফর পলিসি স্টাডিজের সাবেক নির্বাহী পরিচালক শ্রীধর খত্রি। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।