সমসাময়িক বিষয় এবং সাম্প্রতিক র্যাব ফোর্সেসের আভিযানিক কার্যক্রম সম্পর্কে মহাপরিচালক, র্যাব ফোর্সেস মহোদয়ের সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) মতবিনিময় সভায় র্যাব ফোর্সেস এর অতিরিক্ত মহপরিচালক (অপারেশন্স), পরিচালক, লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং, র্যাব ফোর্সেসের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেট্রিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মহাপরিচালক, র্যাব ফোর্সেস মহোদয় মতবিনিময় সভার শুরুতেই স্মরণ করেন স্বাধীনতা সংগ্রামে ৩০ লক্ষ বীর শহীদদের ও সম্ভ্রম হারানো মা-বোনদের। এছাড়াও স্মরণ করেন জুলাই-আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন এবং যারা আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসারত আছেন তাদের সুস্থ্যতা কামনা করেন।
র্যাব বাংলাদেশের এলিট ফোর্স হিসেবে ২০০৪ সালের জন্মলগ্ন থেকে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার, মাদক বিরোধী কার্যক্রম, শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি দমন, চরমপন্থি, জলদস্যু ও সন্ত্রাস দমন, কিশোর গ্যাং নির্মূল, সমাজে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা এবং চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের আসামি গ্রেফতারসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় র্যাবের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করেন।
এছাড়াও র্যাব ফোর্সেস কর্তৃক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, রুজুকৃত মামলা ও মামলা তদন্ত এবং মানবকি উদ্যোগ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন। পাশাপাশি র্যাব ফোর্সেসে দেশমাতৃকার সেবায় যে সকল অকুতোভয় বীর সদস্য আত্মেৎসর্গ করেছেন এবং সহস্ত্রাধিক র্যাব সদস্য মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন তাদেরকেউ স্মরণ করেন।
এছাড়াও তিনি এই বাহিনীর অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কর্মকর্তাসহ সকলকে নির্দেশনা প্রদান করেছেন। র্যাব সদস্যদের ব্যক্তিগত শৃঙ্খলা ভংঙ্গের কোন ঘটনা ঘটলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান।
তিনি আরও জানান, র্যাব একটি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, যা সবসময় আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার উপর হামলা, হত্যা ও হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে এবং নাশকতার নেতৃস্থানীয় যাদের নামে দেশের বিভিন্ন থানায় মামলা রুজু হয়েছে। র্যাব আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তাদের মধ্যে ০৪ জন সাবেক মন্ত্রী, ১৭ জন সাবেক এমপি, সাবেক মেয়র/উপজেলা/ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ৪০ জন, কাউন্সিলর/মেম্বার ১৬ জন, আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের ১৮৩ জন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ছবি ও ভিডিও ফুটেজ ও সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনার মাধ্যমে চিহ্নিত করে ৩০ জন সরাসরি গুলিবর্ষণকারীসহ সর্বমোট ৩৫৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গণঅভ্যুত্থানের সময় র্যাবের লুন্ঠিত অস্ত্র পুনরুদ্ধার এবং দায়ীদের আইনের আওতায় আনতে র্যাব কাজ করছে বলে জানান। অভ্যুত্থানের সময় কিছু স্থানে র্যাব ও অন্যান্য বাহিনীর অস্ত্র লুন্ঠনের ঘটনায় তিনি অত্যন্ত উদ্বেগ প্রকাশ করেন। লুন্ঠিত অস্ত্র উদ্ধারে র্যাব সক্রিয়ভাবে অভিযান পরিচালনা করছে এবং সংশ্লিষ্টদের গ্রেফতারে নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় র্যাবের লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদের মধ্যে ৯০টি অস্ত্র ও ৭৩০৩ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট হতে লুন্ঠিত ২২৮টি অস্ত্র ও ১১৯৪১ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।
এছাড়াও ০৫ আগস্ট পরবর্তী দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ৮০ জন অপরাধীকে গ্রেফতার, ১৫০টি অস্ত্র ও ১০২৯ রাউন্ড গোলাবারুদসহ সর্বমোট ৪৬৮টি অস্ত্র ও ২০২৭৩ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করে র্যাব।
তিনি জানান, র্যাব ফোর্সেসের মাদক বিরোধী নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। জুলাই বিপ্লবের পর দেশের বিভিন্ন স্থান হতে ১,২৩৮ জন মাদক কারবারীকে গ্রেফতারের পাশাপাশি জব্দ করা হয় সাড়ে ৭ লক্ষাধিক পিস ইয়াবা, ২৮ কেজির অধিক হেরোইন, প্রায় সাড়ে ৫৮ হাজার বোতল ফেন্সিডিল, সাড়ে ৫ হাজার কেজির অধিক গাঁজা এবং প্রায় ৫ হাজার বোতল বিদেশি মদ।
এছাড়াও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের সময় দেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে পলাতক সাজাপ্রাপ্ত ১১০ জন এবং দেশের বিভিন্ন স্থান হতে ১০৫ জন ডাকাতকে গ্রেফতার করে র্যাব। গার্মেন্টন্স সেক্টরে অস্থিতিশীল সৃষ্টিকারী ১৬ জন দুস্কৃতিকারীকে গ্রেফতার করে র্যাব।
তিনি আরও জানান, বিভিন্ন মন্দিরে হামলাকারী ০৫ জন; আনসার বিদ্রোহের মদদদাতা ০২ জন ও পল্লী বিদ্যুত খাতে অস্থিরতা সৃষ্টিকারী ০২ জনসহ সর্বমোট ৩৫ জনকে গ্রেফতার করে র্যাব। পাশাপাশি ০৫ আগস্ট পরবর্তীতে দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে দেশের বিভিন্ন ঝুকিপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও কেপিআইসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রধান কার্যালয়ের নিরাপত্তা প্রদানে র্যাবের ভূমিকা তুলে ধরেন।
চলতি বছরে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যায় র্যাব ফোর্সেস এর পক্ষ থেকে বন্যার্তদের ১৬.৫ টন ত্রাণ বিতরণ এবং চিকিৎসা সহায়তা প্রদান; গর্ভবর্তী মহিলা এবং দুস্থ ও অসহায়দেরকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জানান। পাশাপাশি টিএসসি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণত্রাণ কর্মসূচীতে বন্যার্তদের সহায়তার জন্য ৭ টন ত্রাণ সামগ্রী প্রদান। এছাড়াও র্যাব সদস্যদের এক দিনের বেতন মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে প্রদান করার বিষয়ও আলোচনা করেন।
র্যাব মহাপরিচালক, জুলাই বিপ্লবে আহত ও নিহতের পরিবারকে সহায়তার বিষয়টি তুলে ধরেন। র্যাব ফোর্সেস বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে রংপুরে শহীদ আবু সাঈদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং আহত আন্দোলনকারীদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন র্যাব।
তিনি জানান, যারা আর্থিক সংকটের কারণে চিকিৎসা নিতে পারছিলেন না, র্যাব ফোর্সেস নিজ ব্যবস্থাপনায় তাদের বাড়ি থেকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন।
রাষ্ট্রীয় শৃংখলা, জননিরাপত্তা এবং অপরাধদমন ও নিয়ন্ত্রণসহ সকল আভিযানিক কার্যক্রমে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করে র্যাব ফোর্সেসকে আরও যুগোপযোগী এবং জনগণের আশা ও ভরসার প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার অঙ্গীকার করেন মহাপরিচালক র্যাব ফোর্সেস।
তিনি আরও জানান, র্যাব সদস্যদের শৃঙ্খলা ও আচরণে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করছেন। সম্প্রতি চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও ডাকাতির অভিযোগে র্যাব সদর দপ্তরসহ কয়েকটি ব্যাটালিয়নের বেশকয়েক জন সদস্যের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলেন। পাশাপাশি র্যাবের সংস্কারের বিষয়টি তুলে ধরেন। এছাড়াও তিনি জানান, সন্ত্রাস, ষড়যন্ত্র, দূর্নীতি, অপরাধ, উগ্রবাদ এবং উচ্ছৃংঙ্খলতা দমন এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের সাম্প্রাদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় র্যাব সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ।
পরিশেষে মহাপরিচালক, র্যাব ফোর্সেস মহোদয় গণমাধ্যম সম্পর্কে বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হলো স্বাধীন গণমাধ্যম। রাষ্ট্রের দর্পণ হিসেবে সকল ধরণের অপরাধের অনুসন্ধানমূলক তথ্য উদঘাটন করে জনগণের সামনে তুলে ধরার দুঃসাহসিক নজির স্থাপন করে অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ আমার অহংকার এই মূলনীতি নিয়ে র্যাবের গৌরবময় পথচলায় গণমাধ্যম ছিলো, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। পাশাপাশি সকলের সহযোগিতায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ও উন্নয়নবান্ধব বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় র্যাব ফোর্সেসের প্রতিটি সদস্য কাজ করতে বদ্ধ পরিকর।