প্রাবন শুভ,ফুলবাড়ী (দিনাজপুর): ২৫ ডিসেম্বর যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিন, খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের শুভ বড়দিনকে সামনে রেখে খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের ঘরে এখন সাজ সাজ রব। ঘরবাড়ী সাজসজ্জাসহ বর্ণিল সাজে সজ্জিত করা হচ্ছে গ্রামগুলোও। মাটির ঘরের দেয়ালে দৃষ্টিনন্দন নানা কারুকার্য ফুটিয়ে তুলছেন গৃহবধুরা। এমনটাই চিত্র দেখা মিলেছে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলাজুড়ে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ফুলবাড়ী উপজেলায় ছোটবড় মিলে মোট ৫৮টি গীজা ও চার্চ রয়েছে। বড়দিন উপলক্ষে প্রত্যেকটি গীর্জা ও চার্চের জন্য সরকারিভাবে ৫০০ কেজি চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
সরেজমিনে ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ বাসুদেবপুর সূর্য্যপাড়া নৃ-গোষ্ঠীপাড়া গিয়ে দেখা মেলে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী ক্যাথলিক মতবাদের গৃহবধূ ভেলি বাস্কের (৩২)। নিজ ঘরের মাটির ঘরের দেওয়াল লেপার কাজে ব্যস্ত তিনি। তার সাথে কথা হলে তিনি জানান, যিশুখ্রিষ্টের জন্মদিন উপলক্ষে ঘরবাড়ী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করাসহ বিভিন্ন সাজে কাজ করছেন তিনিসহ গ্রামের অন্য নারীরাও।
একই গ্রামের গৃহবধূ সজিনা সরেন বলেন, শুভ বড়দিন উপলক্ষে ঘরবাড়ী পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি অতিতের অন্ধকারকে মুছে দিয়ে আগামীর আলো দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশায় ঘরবাড়ীকে সাজানো হচ্ছে বিভিন্ন কারুকার্যে। এগুলো সবকিছুই করছেন তারা নিজেরাই।
একই গ্রামের শিক্ষার্থী আন্তনিকা হেম্ব্রম বলেন, শুভ বড়দিনের উৎসবকে ঘিরে বাড়ীর নারীদের যেনো কর্মব্যস্ততার শেষ নেই। বড়দের পাশাপাশি শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীদেরকেও ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে বাড়ীর কাজে। সহযোগিতা করতে হচ্ছে পিতা-মাতাকে।
একই গ্রামের বসতবাড়ীর মাটিরঘরে লেপামোছার পর দেওয়ালে ফুল অঙ্কন করার কাজে ব্যস্ত খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী ব্যাপটিষ্ট মতবাদের গৃহবধূ লিমা মুর্মু (১৭)। তিনি বলেন, দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় তার বাবার বাড়ী। গত দুই বছর আগে এই গ্রামের অমল হাঁসদার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তার শ্বশুরবাড়ীতে দুই বছর ধরে বড়দিন পালন করা হচ্ছে।
একইভাবে উপজেলার কাজিহাল ইউনিয়নের পারইল কুদবীর ক্যাথলিক মিশন পাড়া গ্রামের গিয়ে দেখা যায় একই উৎসব আর ঘরবাড়ীতে বিভিন্ন রংগে রাঙ্গিয়ে তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন গৃহবধূরা।
গ্রামের ক্যাথলিক মতবাদের গৃহবধূ রেজিনা টুডু ও শিক্ষার্থী স্মৃতি বেসরা বলেন, বছর ঘুরে শুভ বড়দিন আসে। বছরজুড়ে ঈশ্বর যিশুর কৃপা লাভের আশায় ঘরবাড়ী পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাসহ ঘরবাড়ীতে আলপনার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা চেষ্টা করা হয়। এতে যদি যিশুর কৃপাল লাভ করা যায় এটাই প্রত্যাশা নিয়ে এক সপ্তাহ ধরে চলছে এসব কাজ। শুধু তারাই নয়, পুরো গ্রামই একই কাজে ব্যস্ত সময় পারছেন পরিবারের নারীরা। আর পুরুষরা করছেন বড়দিনের খরচা পাতির আয়োজন।
পারইল কুদবীর ক্যাথলিক চার্চ মিশনের সিস্টার ফ্লোরা পিউিিরফিকেশন বলেন, ২৫ ডিসেম্বর ঈশ্বর যিশুখ্রিষ্ট জন্মলাভ করেন। এজন্য দিনটিকে শুভ বড়দিন হিসেবে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা পালন করে থাকেন। বছরঘুরে বড়দিন আবহে পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখ সমৃদ্ধিতে জীবনযাপন করার স্বপ্নটাই ধরা দেয় সবার প্রার্থনায়। বড়দিন শুধু বায়িজ্যিক উৎসব নয়, চাই আধ্যাতিক পরিশুদ্ধি।
তিনি আরও বলেন, শুভ বড়দিন উদযাপন কল্পে আগের দিন ২৪ ডিসেম্বর রাত ৮টায় পারইল কুদবীর ক্যাথলিক চার্চ মিশনের গীর্জায় প্রর্থনার মধ্যদিয়ে শুভ বড়দিনের কার্যক্রম শুরু করা হবে। পরদিন ২৫ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় প্রার্থনা করা হবে। এরপর আয়োজন করা হবে ধর্মসভা। গীর্জায় প্রার্থনা ও ধর্মসভায় পরিচালনা করবেন মিশনের ফাদার জসিম ফিলিপ মুর্মু। বিকেলে মিশন চত্বরে শিশু-কিশোরদের জন্য ক্রীড়ানুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।
উপজেলা দলিত ও আদিবাসী প্লাটফর্মের সাধারণ সম্পাদক কমল কিস্কু বলেন, পূর্বের মতোই এ বছরও খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা নিজের মতো করে আনন্দময় পরিবেশে শুভ বড়দিন পালন করবেন। এজন্য খ্রিস্টান পল্লীগুলো ইতোমধ্যেই প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মো. আল কামাহ্ তমাল বলেন, খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের শুভ বড়দিন পালনে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিকভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এজন্য ইতোমধ্যেই সেনা সদস্য, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার সদস্যদের নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভা করা হয়েছে।