বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ড. ইউনূসের নেতৃত্বধীন সরকার মানুষের কাছে আরও বেশি আস্থার জায়গায় প্রসারিত হতে পারতো, যদি তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন করতো।
তিনি বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে কোনো-কোনো উপদেষ্টা বলছেন এতো তাড়া কিসের? এতো তাড়া তো না, শেখ হাসিনা অনেক লম্বা করেছেন, ১৫ বছর লাগিয়েছেন। আপনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) যদি আরও সময় যোগ করতে চান, তাহলে মানুষের মধ্যে প্রশ্ন তো দেখা দেবেই। পার্থক্যটা কোথায়?
‘অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি দেশবাসীর অনেক প্রত্যাশা। আমরা আশা করি এ সরকার আওয়ামী সরকারের পুনরাবৃত্তি করবে না’—যোগ করেন রিজভী।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিচে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত দোয়া মাহফিলে এসব কথা বলেন তিনি।
বিএনপির সিনিয়র এ নেতা বলেন, অনেকে বলছেন বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছে। ভোট তো হবে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনে। সেখানে কে ক্ষমতায় আসবে সেটা তো বলা মুশকিল। এটা তো বিএনপির একার বিষয় না। জনগণের যে মালিকানা সেটি গত ১৫ বছর কেড়ে নিয়েছিল শেখ হাসিনা, অর্থাৎ সরকার গঠনের ক্ষেত্রে জনগণের যে ক্ষমতা সেটি ছিল না। সেটি উদ্ধারে ১৫ বছর লড়াই করেছিল বিএনপি।
তিনি আরও বলেন, আগে কে এমপি হবে সেটা শেখ হাসিনার কার্যালয় থেকে নির্ধারণ হতো। কে উপজেলার চেয়ারম্যান হবে সেটা তিনি নির্ধারণ করতো। যার কারণে সেই সময় ভোট করা ব্যাপার ছিল না। সেখানে ব্যাপার ছিল কে মনোনয়ন পাবে। কারণ মনোনয়ন পেলেই তো নির্বাচনে জয়ী।
বিএনপির এই নেতা বলেন, এখন কোথাও গেলে আগের মতো ভয় লাগে না। আগে কোথাও গেলে নিচে মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে আছে কিনা তা দেখতাম, তারপর নামতাম। এই ভীতি এবং আতঙ্কের পরিবেশ ছিল, সেখান থেকে আমরা মুক্তি পেয়েছি।
রিজভী বলেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে জানা, অনিয়মকে না বলাই বড় সংস্কার। সরকার প্রধান যদি কাউকে অন্যায়ভাবে জেল দিতে বলেন, সাজা দিতে বলেন আর বিচারক যদি না বলেন, এটিই সংস্কার। ডিসি-এসপিরা যদি মন্ত্রী-এমপির অন্যায় আদেশ না শুনে সঠিক পথে কাজ করে এটিই সংস্কার। যেটি শেখ হাসিনার আমলে হয়নি। খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে নিম্ন আদালত ৫ বছর সাজা দিলো, উচ্চ আদালত তা ১০ বছর করল। নিম্ন আদালতে যে ৫ বছর সাজা দিলো তাকে পদন্নোতি দেওয়া হলো, আবার যে বিচারপতি ১০ বছরের সাজা দিলো তাকে আপিল বিভাগের বিচারপতি করে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। আর যে বিচারক একটি মিথ্যা মামলায় তারেক রহমানকে খালাস দিয়েছে তাকে দেশ ছাড়া করেছে।
বাংলাদেশের অনেক গুম-খুনের সঙ্গে ভারত জড়িত ছিল, সম্প্রতি এমন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, কানাডার শিক নেতা খুন করেছে কারা? বাংলাদেশের অনেক গুম-খুনের সঙ্গে ভারত যে জড়িত ছিল, তা অস্বীকার করা যাবে না। তার প্রমাণ আমাদের সালাউদ্দিন আহমেদ। আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতের এতই গভীর বন্ধুত্ব যে শেখ হাসিনার অনেক দায় ভারত নিয়েছে। ভারত এবং পতিত আওয়ামী লীগ অনেক দাবার চাল দেবে, সাবধান থাকতে হবে।
মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপাসনের উপদেষ্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদ, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক জয়নুল আবেদীন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু প্রমুখ।