দেশের সর্বোত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে চলতি মৌসুমের দ্বিতীয় দফায় মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। হাড়কাঁপানো শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছে জনজীবন। রাতভর টিপটিপ বৃষ্টির মতো ঝরা ঘন কুয়াশা থাকছে সকাল পর্যন্ত। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষকে।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, রোববার (১৯ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসে আর্দ্রতা ৮৭ শতাংশ। প্রতি ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ ৯ থেকে ১০ কিলোমিটার, তবে সকাল ৮টার পর পূর্বাকাশে সূর্য উঁকি দিলেও কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে ভূপৃষ্ঠে ছড়াতে পারছে না রোদের তীব্রতা। এতে অনুভূত হচ্ছে শীত।
এর আগে ১০ জানুয়ারি পঞ্চগড়ের ওপর দিয়ে চলতি মৌসুমে প্রথমবারের মতো মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। ওই দিন তেঁতুলিয়ায় চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। তবে এর পর থেকে কখনো মৃদু শৈত্যপ্রবাহ আবার কখনো শৈত্যপ্রবাহ কেটে গিয়ে সামান্য বেড়েছে তাপমাত্রা। ১১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১২ দশমিকর ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠানামা করেছে
আবহাওয়াবিদদের ভাষ্য, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যদি ৮ দশমিক ১ ডিগ্রি থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে, তবে তাকে শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। ৬ দশমিক ১ ডিগ্রি থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে, তবে তাকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়।
আজ সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে চারিদিক। কুয়াশার সঙ্গে বইছে উত্তরের ঝিরিঝিরি হিমেল বাতাস। রাতভর টিপটিপ বৃষ্টির মতো ঝরা কুয়াশায় ভিজে গেছে পিচঢালা পথ। কুয়াশার কারণে সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনগুলো চলছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। সকালের হাড়কাঁপানো শীতের মধ্যেই গায়ে শীতের কাপড় জড়িয়ে কর্মজীবী মানুষ ছুটছেন কাজের উদ্দেশ্যে। শিশুরা গরম কাপড় পরে পড়তে যাচ্ছে স্কুল-মাদ্রাসায়। শীত উপেক্ষা করে কৃষকেরা কাজ শুরু করেছেন ফসলের খেতে। এদিকে সকাল আটটার পর কুয়াশা ভেদ করে উঁকি দিতে থাকে সূর্য। ধীরে ধীরে মিষ্টি রোদ উঠলেও তীব্রতা না থাকায় দিনের বেলাও অনুভূত হচ্ছে শীত।
সকাল সাড়ে আটটার দিকে সদর উপজেলার শিংপাড়া এলাকায় কথা হয় ভ্যানচালক সলেমান আলীর (৪৫) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কাইলকার চাইতে (চেয়ে) আইজকা ঠান্ডা (শীত) বেশি নাগেছে। আজি খুপে কুয়াশা, কিচ্ছু দেখা যায়না। ভ্যানখান চালাইলে কাপড়চোপড় আর চোখের ভ্রুলা (ভ্রু গুলো) ভিজে যাছে। ঠান্ডাখান মনে হচে হাত-পাওলাত (পা গুলোতে) ফিন্দাচে।’
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্র নাথ রায় মুঠোফোনে বলেন, পঞ্চগড়ে চলতি মৌসুমের দ্বিতীয় দফায় মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। আকাশে মেঘ না থাকায় সকাল সকাল সূর্যের দেখা মিললেও হিমালয় থেকে বয়ে আসা হিম বাতাসে শীত অনুভূত হচ্ছে। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে পঞ্চগড়ে কয়েক দফায় শৈত্যপ্রবাহ বয়ে শীত বিদায় নিতে পারে বলে তিনি জানান।