মহার্ঘ ভাতার সঙ্গে ভ্যাট বাড়ানোর সম্পর্ক নেই: অর্থ উপদেষ্টা

সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতার নামে আর্থিক সুবিধা আর জনগণের ওপর ভ্যাটের বোঝা বাড়ানো নিয়ে এক প্রশ্নে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, মহার্ঘ ভাতার সঙ্গে ভ্যাট বাড়ানোর কোনো সম্পর্ক নেই।

তিনি বলেন, “মহার্ঘ ভাতা যদি দেই সেটা আলাদা হিসাব করব। বাংলাদেশ হচ্ছে সবচেয়ে ‘লোয়েস্ট ট্যাক্সপেয়িং’ কান্ট্রি। এলডিসির চেয়েও আমাদের ট্যাক্স কম। ভুটান, নেপাল, আইভোরিকোস্ট, বুরকিনাফাসোর চেয়েও কম। এত কম ট্যাক্স দিয়ে কীভাবে চান যে আপনাকে সবকিছু দেব? এটা প্রত্যাশা করা ঠিক হয় না।”

বুধবার (২২ জানুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভায় এক সাংবাদিকদের প্রশ্নে এ কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা।

নিত্যপণ্য ও জীবনযাপনে ব্যয় বেড়ে যাওয়ার পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা দেবে সরকার। এজন্য কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

গত ১৫ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান তার দপ্তরে বলেন, “মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হবে বলেই কমিটি করা হয়েছে। কত শতাংশ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হবে সে বিষয়ে কমিটি সুপারিশ করবে।

“আপার লিমিট ও লোয়ার লিমিট নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। স্টাফদের হয়ত একটু বেশি থাকতে পারে। পেনশনাররাও মহার্ঘ ভাতা পাবেন।” একই সময়ে রাষ্ট্রের আয় বাড়াতে শতাধিক পণ্য ও সেবায় আমদানি, উৎপাদন, সরবরাহ পর্যায়ে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে।

ফলে বিদ্যমান অবস্থায় মহার্ঘ ভাতা মূল্যস্ফীতিসহ বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।বিষয়টি ‘নিঃসন্দেহে সমস্যা সৃষ্টি করবে’ বলে মনে করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও।

শনিবার এক সাংবাদিকের প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা মনে করি, সরকার যেহেতু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, এখানে এ ধরনের (মহার্ঘ ভাতা) পদক্ষেপগুলো নিঃসন্দেহে কিছুটা সমস্যা তৈরি করবে।

“একই সময়ে মহার্ঘ ভাতা তো মূল্যস্ফীতি বাড়াবে। কিন্তু সাধারণ মানুষের, তাদের তো কোনো আয় বাড়ছে না। এটা একটা সমস্যা। এই বিষয়গুলো আপাতত খুব বেশি প্রয়োজন ছিল না।”

গণআন্দোলনে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের বাড়তি ব্যয়ের প্রকল্পের চাপ সামলাতে অন্তর্বর্তী সরকার হিমশিম খাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন অর্থ উপদেষ্টা।

আয় বাড়াতে ভ্যাট, শুল্ক বাড়ানো এবং তার প্রভাব বিশ্লেষণ করে উপদেষ্টা বলেন, “আমরা চশমার ভ্যাট বাড়িয়েছি। ১২৫ টাকায় পৃথিবীর কোন দেশে চশমা পাওয়া যায়? ওখানে ১৫ টাকা বাড়বে। খাবেন ৬০০/৭০০ টাকা, ২০ টাকা ভ্যাট দেবেন না। ভাতের হোটেলে তো ভ্যাট জিরো করে দিয়েছি। গ্লোরিয়া জেন্স থেকে এককাপ কফি খাবেন, ওখানে ১৫ টাকা দিতে আপনার বাঁধে।

“এই রকম অ্যাটিচিউড থাকলে তো ‘ডিফিকাল্ট’। দরকার হলে ২০ টাকা বেশি দিয়ে মিষ্টি খাব। আমাদের রেভিনিউ এত কম যে, পুরো পিকচারটা আপনাদের কাছে এখনও আসে নাই, আসার কথাও না।”

দায়দেনার চাপে থাকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমি কিছুদিন আগে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে গেলাম। আমরা যখন (সরকার ক্ষমতায়) আসি ১৩৫ মিলিয়ন ডলার এলএনজি আমদানির বিল পাওনা ছিল। আমরা সেটা পেমেন্ট করেছি। এখন আবার ১ মিলিয়ন ডলার পাওনা হয়েছে। রাশিয়ান অ্যাম্বাসেডর বলছে যে, তোমরা টাকা দিচ্ছ না, গম আমদানির বিল।

“ওই সময় (আওয়ামী লীগের সময়) এমন ছিল, এখন খারাপ হচ্ছে বলে আপানারা বলছেন। ওই সময় যে খুব ভালো ছিল তা কিন্তু না। আমার যারা সমালোচনা করে বেশিরভাগই আমার ছাত্র। ওরা বলে রাজস্ব জাল বাড়াতে, কোন জায়গায় আমরা বাড়াব? খালি বলে দিলেই তো হবে না। আমরা ক্ষেত্রগুলো খুঁজছি। যেই জায়গায় রেশনাল হয়, আমরা চেষ্টা করব।”

তিনি বলেন, “অনেক অপ্রয়োজনীয় সরকারি ব্যয় আছে। পাঁচ বছরের প্রকল্প ১০ বছর নিয়ে যাচ্ছে। বড় বড় প্রকল্প আছে যেখানে খরচ হওয়ার কথা ছিল ২৫ হাজার কোটি টাকা, খরচ হয়েছে ৫২ হাজার কোটি টাকা। টাকা কোত্থেকে আসবে, এগুলো তো আমাদের শোধ দিতে হবে।”

আরও পড়ুন...