অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘বাংলাদেশ সৌদি আরবের সঙ্গে শ্রম ও অভিবাসন বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদার করবে।’
বৃহস্পতিবার সৌদি আরবের মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার ড. আবদুল্লাহ আবুথনাইন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার ড. নাসের বিন আবদুল আজিজ আল দাউদের সঙ্গে রিয়াদে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ কথা বলেন আসিফ নজরুল।
বৈঠকগুলোতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার, শ্রম বাজারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং সৌদি আরবে বাংলাদেশি কর্মীদের অধিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়ে আলোচনা হয়।
সৌদি আরবের মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার ড. আব্দুল্লাহ আবুথনাইনের সঙ্গে বৈঠকে সৌদি আরবে ৩০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি কর্মীকে সুযোগ দেওয়ার জন্য সৌদি সরকারকে ধন্যবাদ জানান আসিফ নজরুল।
তিনি সৌদি কর্তৃপক্ষকে বাংলাদেশে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিদর্শনের জন্য আমন্ত্রণ জানান এবং কিছু নির্দিষ্ট কেন্দ্রকে (টিটিসি) দক্ষতা স্বীকৃতি দিতে বিবেচনার আহ্বান জানান। সৌদি পক্ষ এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দেয় এবং সম্ভাব্য টিটিসি মূল্যায়নের সম্মতি জানায়।
বৈঠকে মূলত উচ্চ ইকামা নবায়ন ফি এবং এর ফলে কর্মীদের চাকরিহীন হওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। সৌদি পক্ষ জানায়, শ্রম আইন সংস্কার করা হচ্ছে, যাতে উভয় পক্ষের অধিকার সংরক্ষিত হয়। এছাড়া, কর্মীরা যাতে বাংলাদেশ থেকে রওনা হওয়ার আগে তাদের নিয়োগ চুক্তি নিশ্চিতভাবে পায়, সে বিষয়ে আলোচনা হয়।
এছাড়া ঢাকায় সৌদি দূতাবাসে পেশাদার সার্টিফিকেট সত্যায়ন সংক্রান্ত সমস্যা উত্থাপন করা হয়। কালচারাল অ্যাটাচের অনুপস্থিতির কারণে এই প্রক্রিয়ায় দেরি হচ্ছে, তাই এই সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ সরকার সৌদি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানায়। এই সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে বলে নিশ্চিত করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।
সৌদি কর্মকর্তারা জানান, অবৈধ শ্রমিক সমস্যা এবং নিয়োগ সংক্রান্ত অনিয়ম দূর করতে শিগগিরই একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। তারা এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের একটি যৌথ টিম গঠনের প্রস্তাবকে স্বাগত জানায়। বৈঠকে গৃহকর্মী প্রশিক্ষণের মানোন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয়, যেখানে বাংলাদেশ প্রশিক্ষণের সময়কাল সংক্ষিপ্ত করে গুণগত মান উন্নত করার প্রতিশ্রুতি দেয়।
ড. নজরুল সৌদি আরবের মেগা প্রকল্পগুলোতে আরও দক্ষ কর্মী নিয়োগের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের আগ্রহ পুনর্ব্যক্ত করেন এবং সৌদি ভাইস মিনিস্টারকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাইস মিনিস্টার ড. নাসের বিন আবদুল আজিজ আল দাউদের সঙ্গে পৃথক এক বৈঠকে, বাংলাদেশ এবং সৌদি আরবের মধ্যে নিরাপত্তা ও অভিবাসন সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশ সৌদি আরবে বসবাসরত বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত করায় সৌদি সরকারের প্রচেষ্টার প্রশংসা করে।
বৈঠকে অনিয়মিত অভিবাসন রোধ এবং বৈধ অভিবাসন প্রক্রিয়া উন্নত করার বিষয়ে আলোচনা হয়। উপদেষ্টা আসিফ নজরুল অনিয়মিত অভিবাসীদের দ্রুত প্রত্যাবাসনে সৌদি সরকারের সহায়তা চেয়ে অনুরোধ জানান। সৌদি ভাইস মিনিস্টার বিষয়টি পর্যালোচনার আশ্বাস দেন।
বাংলাদেশ সরকার শ্রম শোষণ রোধ ও ন্যায্য নিয়োগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য অধিকতর নজরদারি ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব দেয়। সৌদি পক্ষ জানায়, সৌদি শ্রম আইন উভয় পক্ষের অধিকার সংরক্ষণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ড. আসিফ নজরুল ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে স্বাক্ষরিত নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তির ভিত্তিতে নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও জোরদার করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। উভয় পক্ষ মানব পাচার, অনিয়মিত অভিবাসন এবং অর্থপাচারসহ আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমনে একসাথে কাজ করতে সম্মত হয়।
উপদেষ্টা সৌদি আরবে ছোটখাটো অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত বাংলাদেশি বন্দিদের জন্য রাজকীয় ক্ষমার অনুরোধ জানান, যা সৌদি ভাইস মিনিস্টার বিবেচনায় নেবেন বলে জানান।
বৈঠকগুলোতে বাংলাদেশ এবং সৌদি আরবের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর করার পাশাপাশি শ্রম অভিবাসন ও নিরাপত্তা বিষয়ে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসাবে চিহ্নিত হয়।
এছাড়াও, উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ওমানের শ্রম উপমন্ত্রী সালিম আল-বুসাইদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
তিনি অনিয়মিত বাংলাদেশি কর্মীদের জরিমানা ছাড়া বৈধকরণের অনুরোধ জানান, এতে ওমানের মন্ত্রী ইতিবাচক সাড়া দেন। ওমানে ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে সাময়িকভাবে স্থগিত থাকা ওয়ার্ক ভিসা পুনরায় চালুর জন্য উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ওমানের মন্ত্রীকে অনুরোধ করেন ।
ওমানের শ্রম উপমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশি শ্রমিকদের ব্যাপক চাহিদার কারণে তার দেশের জনগণের চাপ রয়েছে এবং তারা এর সমাধান খুঁজছেন।
এ সময় বাংলাদেশি দক্ষ কর্মী যেমন প্রকৌশলী, চিকিৎসক, নার্সরাও যাতে করে ওমানের শ্রমবাজারে প্রবেশ করতে পারে এর জন্যও ওমানের মন্ত্রীর সহযোগিতা চান আসিফ নজরুল। এছাড়া নিজেদের মধ্যে তথ্য বিনিময় ও সহযোগিতা বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ নিতে উভয় পক্ষ সম্মত হয়।