এস এম হাবিবুল হাসান,সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায়”জলাশয় মিশ্রিত জনজীবন”প্রতিবাদ্যে বিশ্ব জলাভূমি দিবস ২০২৫ পালিত হয়েছে।দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে সাতক্ষীরা শহরের টাউন বাজার সংলগ্ন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ির সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বিশ্ব জলাভূমি দিবসের অলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সাতক্ষীরা খামার বাড়ির উপ-পরিচালক মো.সাইফুল ইসলাম।
সাবেক অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহীর সঞ্চালনায় বিশ্ব জলাভূমি দিবসের অলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন,কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সাতক্ষীরার এডিডি মো.জালাল উদ্দীন,ডিএই ইকবাল আহম্মেদ, সাবেক অধ্যাপক মোজাম্মেল হক,জেলা প্রোগ্রাম অফিসার ওসিসি আব্দুই হাই সিদ্দিকী,মৌমাছির নির্বাহী পরিচালক সুশান্ত মল্লিক,জেলা পরিবেশ কর্মী সাকিবির রহমান বাবলা।
বিশ্ব জলাভূমি দিবসের অলোচনা সভায় বক্তারা তাদের বক্তব্যে বলেন, প্রকৃতি-পরিবেশ সুরক্ষায় জলাভূমি সংরক্ষণে সকলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।এ বছরের বিশ্ব জলা ভূমি দিবসের প্রতিপদ্য বিষয় হলো Life interlaced wetlands and people’ অর্থাৎ জলাশয়ে মিশ্রিত জনজীবন’। বিশ্বের বেশীর ভাগ জলা ভূমির গুণগত মান এখন ভালো নেই। নানা ধরণের দূষিত পদার্থ মিশে অনেক জলাভূমি মানুষের জন্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরী করেছে। যা বড় ধরণের হুমকী তৈরী করে চলেছে। রামসার কনভেনশনের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সাল থেকে প্রতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপি এই দিবস পালন হয়ে আসছে।জলাভূমি প্রকৃতি-পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয় পরিবেশগত স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জলাভূমি একটি অনস্বীকার্য উপাদান। জলাভূমি সংরক্ষণের এই ধারণাটি শুধু মানুষের জন্য নয়। সমগ্র পৃথিবীকে বাসযোগ্য করবার একটি নির্দেশনা এবং মতামত প্রদান করেছে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায়, প্রতিবেশ ব্যবস্থায় সঠিক ব্যবস্থাপনায় জলাভূমি সংরক্ষণের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে।জনসাধারণের এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে।
বক্তারা তাদের বক্তব্যে আরও বলেন, অসংখ্য জলাশয় আর জলাভূমিতে ঘেরা দেশের দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল। জালের মতো বিস্তার করে আছে এই অঞ্চলের নদী, খাল, বাওড়, দিঘি আর পুকুর। কিন্তু কালের আবর্তে তথাকথিত উন্নত জীবন যাপনের আকাঙ্খা নিয়ে আমাদের বিভিন্ন উন্নয়ন উদ্যোগ এই জলাভূমির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এক দিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অন্য দিকে অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকান্ডের প্রতিঘাত দিনে দিনে আমাদেরকে সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের কৃষি ব্যবস্থা, জল যোগাযোগ ব্যবস্থা, পানির যথাযথ ব্যবস্থা, প্রাণ বৈচিত্র সংরক্ষণ এবং প্রতিবেশ ব্যবস্থা সবকিছুই ভেঙে পড়েছে। এর ফলে জলাবদ্ধতা, লবণাক্ততা, সুপেয় পানির সংকট, ভূ-গর্ভস্থ পানির সংকট, প্রচলিত কৃষি ব্যবস্থার সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। শুধু তাই নয় এই অঞ্চলের চিরায়ত সংস্কৃতি, কৃষি মৌসুম, জনপদের স্বাভাবিক জীবন যাপন টালমাটাল অবস্থায় নিমজ্জিত। একটি জলাভূমি একটি জনপদের প্রকৃতি, সেই অঞ্চলের প্রাণ বৈচিত্ররক্ষা, বাস যোগ্য পরিবেশ তৈরী সর্বোপরি আগামী প্রজন্মের জন্য সুস্থ পরিবেশ তৈরীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। প্রকৃতির এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানকে আমরা দূষণ, দখল, ভরাট, অপরিকল্পিত বাঁধসহ নানা বিধ উদ্যোগের মাধ্যমে জলাভূমির স্বাভাবিক চরিত্রকে, প্রকৃতিকে ফাংস করে ফেলছি। সেই সাথে ধ্বংস করছি আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাত্রাকে।
বেলা ও এএলআরডির সহযোগিতায় এবং সুন্দরবন ফাউন্ডেশন ও বেলা নেটওয়ার্কের আয়োজনে অনুষ্ঠিত বিশ্ব জলাভূমি দিবসের আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন,জেলা সাইবার ক্রাইম এ্যালাট টিমের পরিচালক শেখ মাহবুবুল হক,সদস্য খালিদ হোসেন, টিআইবির সালাউদ্দিন রানা,যুব সংগঠক জাহাঙ্গীর আলম,সাকিব হোসেন,মো.ইমরান হোসেন,শেখ আফজাল হোসেন,মাসুদ রানা,হৃদয় মন্ডল,টাউন গার্লস স্কুলের শিক্ষক আফজাল হোসেনসহ সাতক্ষীরার ২৫ টি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রতিনিধি বক্তব্য দেন।
বিশ্ব জলাভূমি দিবসের অলোচনা সভা শেষে সাতক্ষীরা শহরের টাউন বাজার সংলগ্ন খামার বাড়ির প্রাঙ্গণ থেকে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়।র্যালিটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে যথাস্থানেই শেষ হয়।