‘সংস্কার সংস্কার’ বক্তব্য রেখে এ আলাপ দীর্ঘয়িত না করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ বিষয়ে সতর্ক করে তিনি বলেছেন, সংস্কারের আলাপ–আলোচনা দীর্ঘায়িত হলে স্বৈরাচার সুযোগ পেয়ে যাবে, আবার দেশের মানুষের কাঁধে চেপে বসবে। সংস্কারের আলাপ যত দীর্ঘ হবে, দেশ তত বেশি সংকটের মুখে পড়বে।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর শ্যামপুরে কদমতলী শিল্প এলাকায় ‘৩১ দফা প্রশিক্ষণবিষয়ক কর্মশালায়’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তারেক রহমান। বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন তারেক রহমান।
সংস্কারের প্রস্তাবগুলোকে বাস্তবায়ন করতে হলে সবার আগে নির্বাচন প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে যাদের জনগণ দায়িত্ব দেবে, সংস্কারের কাজ তারাই শুরু করতে পারবে। তাদের শুরু করতেই হবে। কারণ, যারা নির্বাচিত হয়ে আসবে, তারা জনগণের কাছে ওয়াদা করবে যে তারা সুযোগ পেলে বাস্তবায়ন করবে এই সংস্কার। তিনি বলেন, দেশের মানুষ বিএনপিকে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ দিলে প্রত্যেকে যে যার অবস্থান থেকে যেই সংস্কারের ওয়াদা জনগণের সামনে দিয়েছেন, প্রত্যেকের অবস্থান থেকে সেই ওয়াদা পূরণের সর্বাচ্চ চেষ্টা করবেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘যেসব বিজ্ঞ ব্যক্তি যাঁরা সংস্কারের কথা বলছেন, সবার কাছে রাজনৈতিক দলের অবস্থান থেকে আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই, সংস্কার সংস্কার বক্তব্য রেখে দয়া করে এই আলাপ দীর্ঘায়িত করবেন না। কারণ, আলাপ যত দীর্ঘায়িত করবেন, দেশ তত বেশি সংকটের মুখে পড়বে, সংস্কার আলাপ যত দীর্ঘায়িত করবেন, দেশে তত ষড়যন্ত্রকারীরা ষড়যন্ত্র করার সুযোগ পাবে। সংস্কারকে যত দ্রুত বাস্তবায়ন করা যাবে, দেশকে, দেশের মানুষকে তত দ্রুত বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারব।’
নির্বাচন হলেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে—এ প্রশ্ন কেউ কেউ তুলছেন উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘সাথে সাথে সব সমস্যার সমাধান হবে না, কিন্তু নির্বাচন হলে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটের মাধ্যমে জনগণের রায়ের মাধ্যমে যে দল বা যে ব্যক্তি বা যারা দেশ পরিচালনার সুযোগ পাবে, তখন সমস্যার যে জট, সমস্যার যে গিট্টু, সেগুলো আস্তে আস্তে খোলা শুরু করবে।’
জনগণের ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন করতে পারলে সেই সরকার জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে বলে মন্তব্য করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, কারণ, পাঁচ বছর পর আবার জনগণের কাছে যেতে হবে। কাজেই যে প্রতিজ্ঞা জনগণের সামনে করে ক্ষমতায় আসবে, তাদের সেই কাজগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়ানের কাথা বলে ৭০ টাকা কেজি চাল খাওয়ালে ৫ আগস্টের মতো অবস্থা হবে।
দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হওয়া যাবে না—বিএনপি এমন প্রস্তাব দুই–আড়াই বছর আগেই দিয়েছে উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত কমিশনও একই কথা বলছে। তিনি বলেন, বিএনপি উচ্চকক্ষের কথা বলেছে দুই–আড়াই বছর আগে। সংস্কার কমিশন একই কথা বলেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রস্তাব এবং বিএনপির ৩১ দফার বিষয়ে তিনি বলেন, হতে পারে ১০০ ভাগ মিল নেই, ৮০ ভাগ মিল আছে। মূল যে বিষয়, সেগুলো কিন্তু বিএনপি অনেক আগেই বলেছে।
বক্তব্যে বর্তমান বাজার পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের দাম অনেক বেশি। লাগামহীন গতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। বড় বড় কথা বললেই হবে না, মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। কেবল উচ্চকক্ষের কথা, এক ব্যক্তি দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হবে না, এ কথা বললেই হবে না। পাশাপাশি মানুষের আয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির গতি টেনে ধরতে হবে। কৃষক যাতে সহজে পানি পেতে পারে, সে ব্যবস্থাও করতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থা সহজ করতে হবে। নজর দিতে হবে স্বাস্থ্যের দিকে। ওষুধের দাম কমাতে হবে। চিকিৎসাসেবা উন্নত করতে হবে। যানজটকে সহনীয় অবস্থায় নিয়ে আসতে হবে। এমন অনেক সমস্যা আছে। এগুলো আস্তে আস্তে ঠিক করতে হবে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব তানভীর আহমেদের সঞ্চালনায় কর্মশালায় বক্তব্য দেন বিএনপির বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ, তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য ইশরাক হোসেন প্রমুখ।