পিবিএ, ঢাকা: আগের রাতে ব্যালট পেপারে সিল মেরে বাক্স ভর্তির অভিযোগে ভোট স্থগিত, কারচুপির অভিযোগে ভোট বর্জন, কেন্দ্র দখলে নিতে সংঘর্ষ-গুলিসহ নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে শেষ হলো পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে ১১৭টি উপজেলার ভোটগ্রহণ।তবে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি উপজেলায় ভোট গ্রহণ স্থগিত হয়ে যাওয়ায় আজ (রোববার) ভোট হয় ১১৬ উপজেলায়। সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয় এবং বিকেল ৪টায় শেষ হয়। আগের দুই ধাপের মতো আজ তৃতীয় ধাপেও ভোটার উপস্থিতি ছিল বেশ কম।
আজ বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে গোলাগুলি হয়েছে, আহত হয়েছেন ভোটাররা। আবার চট্টগ্রামের চন্দনাইশে ভোট জালিয়াতি রুখতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন পুলিশ কনস্টেবল। আগের রাতে ব্যালট ভরিয়ে ফেলার অভিযোগে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার ভোট গ্রহণ স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। ভোট জালিয়াতিতে যুক্ত থাকার দায়ে জেলার একজন এএসপি এবং ওসিকে প্রত্যাহারের ঘটনা ঘটেছে। একাধিক জায়গায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা ভোট বর্জন করেছেন।
কটিয়াদিতে সবকটি ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত
রাতে ব্যালট পেপারের সিল মারাসহ ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি উপজেলায় সবকটি ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
আজ (রোববার) সকাল ৮টা থেকে এ উপজেলায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়। দুই ঘণ্টা পর ভোট গ্রহণ স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন অফিসার মো. তাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গতকাল রাতে উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে ব্যালট পেপারে সিল মেরে ভোটের বাক্স ভর্তি করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে সকাল ১০টার দিকে ভোট স্থগিতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
এর আগে এই অভিযোগে প্রথমে পাঁচটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ বন্ধ রেখে বাকি ৮৪টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। পরে ৮৯টি কেন্দ্রের সব কটিতে ভোট গ্রহণ বন্ধের নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন।
একই সঙ্গে ব্যালট পেপারে সিল মেরে ভোটের বাক্স ভর্তি করার অভিযোগে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. শফিকুল ইসলাম ও কটিয়াদি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামসুদ্দিনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. তাজুল ইসলাম।
দৌলতপুরে আ’লীগের দুই বিদ্রোহী প্রার্থীর ভোট বর্জন
ভোট কারচুপির অভিযোগে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল কাদের ও আমিনুর রহমান ভোট বর্জন করেছেন। এছাড়া ওই উপজেলার জিয়নপুর ২৭ নম্বর ভোট কেন্দ্রে নৌকা প্রতিকে সিল মারার অভিযোগে কেন্দ্রটির সহকারী প্রিজাইর্ডি অফিসার আটক হয়েছে। জেলা প্রশাসক এসএম ফেরদৌস এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আজ সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে উপজেলার জিয়নপুর খাঁ পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই ঘটনা ঘটে। আটক ওই কর্মকর্তার নাম রুহুল আমিন। তিনি দৌলতপুরের খোর্দ ছাতিয়ান সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
পিরোজপুরে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ আহত ২০
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলায় নিজ দলেরর কর্মীদের হামলায় আওয়ামী লীগের উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হোসাইন মোশারেফ সাকুসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার গুলিসাখালী বাজারে এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত আওয়ামী লীগের এই নেতাসহ আরও ৫ জনকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
কক্সবাজারে ভোটকেন্দ্রে গোলাগুলি, আহত ৪
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের দক্ষিণ মগনামা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র এলাকায় চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। রবিবার (২৪ মার্চ) সকাল ৯টার দিকে এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
গুলিবিদ্ধরা হলেন- আবুল হোছেন, ছাদেক, বদি, রমিজ। সবাই একই এলাকার বাসিন্দা।
স্থানীয়দের দাবি, “নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ভোট লুটের জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিমের লোকজন এই ঘটনাস্থলে আসলে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের লোকজন বাধা দেন। এতে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। গোলাগুলিতে উভয় পক্ষের চারজন গুলিবিদ্ধ হয়। তাদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।”
চট্টগ্রামে ভোটকেন্দ্রে গুলি, পুলিশ কনস্টেবল আহত
চট্টগ্রামের চন্দনাইশে উপজেলা নির্বাচনে ভোট গ্রহণকালে একটি কেন্দ্রে দুর্বৃত্তদের গুলিতে পুলিশের এক কনস্টেবল আহত হয়েছেন।
গুলিবিদ্ধ পুলিশ কনস্টেবল ফরহাদ হোসেন পূর্ব চন্দনাইশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
রোববার পঞ্চম উপজেলা নির্বাচনে তৃতীয় ধাপে ভোটগ্রহণ শুরুর পরই ওই কেন্দ্রে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে।
চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কেশব চক্রবর্তী বলেন, পূর্ব চন্দনাইশ এলাকার ওই কেন্দ্র দখলে নিতে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়।
তিন ইউএনও প্রত্যাহার
এদিকে, পক্ষপাতিত্বসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগে তৃতীয় ধাপে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া, রংপুরের মিঠাপুকুর ও যশোরের কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) প্রত্যাহার করা হয়েছে।
পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে সারা দেশের ২৫টি জেলার মোট ১১৭টি উপজেলায় আজ সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে চলবে এই ভোট গ্রহণ।
নয় হাজার ২৯৮টি ভোটকেন্দ্রের ৫৮ হাজার ৫২৪টি ভোটকক্ষে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এখানে মোট ভোটার এক কোটি ১৮ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫১ জন। মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা এক হাজার ৩২৩ জন। তাঁদের ভেতরে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ৩৪০ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ৫৮৪ এবং নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ৩৯৯ জন।
তৃতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে মোট ৫৫ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁদের ভেতরে ৩৩ জন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী, নয়জন ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও ১৩ জন নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী রয়েছেন।
পিবিএ/এএইচ