
হাসিন আরমান,কুবি প্রতিনিধি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ছাত্র পরামর্শক ও নির্দেশনা দপ্তরের উদ্যোগে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটির সহায়তায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত “ভাষা দিবস বিতর্ক প্রতিযোগিতা-২০২৫”-এ বিজয়ী হয়েছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে তিনটায় ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের কনফারেন্স রুমে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. মোঃ আবদুল্লাহ আল মাহমুবের সভাপতিত্বে, কুবি ডিবেটিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মুহসিন জামিল এর সঞ্চালনায় বিতর্ক প্রতিযোগিতাটি শুরু হয়।
বিতর্ক প্রতিযোগিতার বিষয় ছিলো ‘এই সংসদ, উচ্চশিক্ষায় বাংলা ভাষার প্রচলনের ধারনাকে সমর্থন করে না।’ বিতর্কে বিরোধী দল গনিত বিভাগকে ২-১ ব্যালটে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছে সরকারী দল প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ।
বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ‘ডিবেটর অব দ্যা টুর্নামেন্ট’ হয়েছে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব এবং ‘ডিবেটর অব দ্যা ফাইনাল’ হয়েছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী মোফাজ্জল হোসেন মোজাহিদ।
উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হায়দার আলী। এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. মোহাম্মদ সোহরাব উদ্দিন এবং বিজয়-২৪ হলের প্রভোস্ট ড. মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান খান।
বিতর্ক প্রতিযোগিতায় স্পিকার হিসেবে ছিলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক মতিউর রহমান। এছাড়াও বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক সভাপতি আল নাঈম এবং কুমিল্লা ডিবেট ফেডারেশনের সভাপতি এবং কুবি ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক বিতার্কিক ইশতিয়াক আহমেদ।
সভাপতির বক্তব্যে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক ড. মোঃ আবদুল্লাহ আল মাহবুব বলেন,’কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো বড় পরিসরে ২৪টি দল নিয়ে এই বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। এ আয়োজন সফলভাবে সম্পন্ন করতে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি এবং যারা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন, তাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আমরা ভবিষ্যতে কুমিল্লা শহরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অন্তর্ভুক্ত করে আরও বৃহৎ পরিসরে একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজনের পরিকল্পনা করছি। আশা করি, সেই উদ্যোগেও আপনারা আমাদের পাশে থাকবেন এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবেন।’
কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন,’আজকের এই বিতর্ক প্রতিযোগিতা ভাষার মাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ। পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের যদি বিতর্কের মতো কো-কারিকুলার কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করা যায়, তবে তারা দেশ ও জাতিকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।’
তিনি আরো বলেন,’বর্তমানে যুবসমাজের একটি অংশ মাদকের করাল গ্রাসে নিপতিত হচ্ছে, যা জাতি গঠনের পথে বড় বাধা। মাদকাসক্তির মতো ধ্বংসাত্মক অভ্যাস থেকে তরুণ সমাজকে রক্ষা করতে কো-কারিকুলার কার্যক্রমের গুরুত্ব অপরিসীম। এ ধরনের গঠনমূলক কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা ও যুক্তিবাদিতার বিকাশ ঘটিয়ে সুস্থ সমাজ বিনির্মাণে সহায়ক হবে।’
প্রধান অথিতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মোঃ হায়দার আলী বলেন, ‘আজকের বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ভাষার চ্যালেঞ্জ নিয়ে দারুণ যুক্তিপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। তবে বর্তমান যুগ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI)-এর যুগ, যেখানে ভাষা আর বড় বাধা নয়। প্রযুক্তির উন্নতির ফলে আজ একজন ব্যক্তি বিশ্বের যেকোনো ভাষাভাষী মানুষের সঙ্গে সহজেই যোগাযোগ করতে পারে। তাই তোমাদেরও বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে এবং প্রযুক্তির এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘মাদক থেকে মুক্ত থাকার জন্য খেলাধুলার পাশাপাশি বিতর্কও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিতর্ক কেবল যুক্তিবাদী মন গড়ে তোলে না, বরং চিন্তার স্বাধীনতাকে বিকশিত করে, যা তরুণদের সঠিক পথে পরিচালিত করতে সহায়তা করে। আজকের প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাই এবং যারা বিজিত হয়েছে, তাদের জন্যও শুভকামনা রইল।’