র‌্যাবের ফাঁদে রেলওয়ের আউটসোর্সিং কর্মচারী, গ্রেফতার ৮

ঈদকে সামনে রেখে বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকেট কালোবাজারী চক্রের খোঁজে র‌্যাবের পাতা ফাঁদে স্বয়ং রেলওয়ের আউটসোর্সিং কর্মচারীসহ ৮ জন কালোবাজারীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-১)।

গতকাল সোমবার (২৪ মার্চ) রাজধানীর বিমানবন্দর এবং কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) সকালে রাজধানীর উত্তরা র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব-১) এর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান র‍্যাব-১ এর উপ-অধিনায়ক লে. কমান্ডার মোহাম্মদ জাকিউল করিম।

মোহাম্মদ জাকিউল করিম বলেন, রেলওয়ে টিকেট কালোবাজারী চক্রের শিকড়ের খোঁজে র‌্যাবের অনুসন্ধানে টিকেট কালোবাজারী চক্রের মূলহোতাসহ ০৮ জনকে রাজধানীর বিমানবন্দর এবং কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১।

তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে অধিক সংখ্যক মানুষ ঘরে ফিরছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কতিপয় অসাধু ব্যক্তি ট্রেনের টিকেট কালোবাজারীর সাথে জড়িয়ে পড়ছে বলে জানা যায়। এবার প্রথম বারের মতো বাংলাদেশ রেলওয়ের শতভাগ টিকেট অনলাইন প্লাটফর্ম সহজ ডট কম এর মাধ্যমে বিক্রয় করছে। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে ট্রেনের টিকেট ছাড়ার সাথে সাথে টিকেট শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযোগ পাওয়া যায়। পরে র‌্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল বর্ণিত অপরাধের সাথে জড়িত অপরাধীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে বিভিন্ন রেলওয়ে স্টেশনে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।

তিনি বলেন, র‌্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল এই চক্রের সাথে জড়িত অপরাধদের চিহ্নিতকরণ ও তথ্য উদঘাটনের লক্ষ্যে বিমানবন্দর স্টেশন এলাকায় ফাঁদ পাতে। সেই ফাঁদে প্রথমে পা দেয় আসামি উত্তম চন্দ্র দাস (৩৪)। তাকে ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশন এলাকা হতে একটি অনলাইন টিকেটের প্রিন্টেড কপিসহ গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে তার দেয়া তথ্যমতে ঢাকার কাওলা হতে তারই ঘনিষ্ঠ সহযোগী হাবীব আহমেদ (২৬), মো. ফারুক (৫৫) এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের আউটসোর্সিং কর্মচারী মো. জুবায়ের (২৯), কে তিনটি অনলাইন টিকেটের প্রিন্টেড কপিসহ আটক করা হয়।

তিনি বলেন, উত্তম চন্দ্র দাসের নিকট হতে জানা যায় যে, তিনি প্রতিবছর ঈদ মৌসুমে আনুমানিক প্রায় ৫০০ থেকে ৭০০ রেলওয়ে টিকেট অবৈধ উপায়ে কালোবাজারী করত। এভাবে প্রতি মৌসুমে তিনি প্রায় ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার মত অবৈধভাবে আয় করতেন বলে স্বীকার করেছেন। তার বিরূদ্ধে ইতোমধ্যে পুলিশের পিসিপিআর অনুযায়ী ৪ টি মামলাও রয়েছে।

পরে আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের প্রেক্ষিতে র‌্যাব-১ এর আভিযানিক দল পূনরায় ফাঁদ পাতে। এবার উক্ত ফাঁদে পা দেয় স্বয়ং বাংলাদেশ রেলওয়ের আউটসোর্সিং কর্মচারী মো. সোহেল রানা (২১) ছয়টি অনলাইন টিকেটের প্রিন্টেড কপিসহ বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে আটক করা হয়। পরে আটককৃতদের সাথে নিয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে এলাকা হতে বাংলাদেশ রেলওয়ের আউটসোর্সিং কর্মচারী আব্দুল্লাহ আল মুমিন (৩০), ও প্রকাশ চন্দ্র রায় (৩৪),’কে আটক করা হয়।

আটককৃতদের মোবাইল যাচাই-বাছাই করে দেখা যায় তারা প্রত্যেকে টিকেট কালোবাজারীর সাথে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য আটককৃত প্রকাশ চন্দ্র রায় (৩৪) এর সাথে অনলাইন প্লাটফর্ম সহজ ডট কম এর কিছু অসাধুকর্মী টিকেট কালোবাজারীর সাথে জড়িত আছে মর্মে স্বীকার করেন। উক্ত চক্রের অন্যতম গ্রাহক কামরুজ্জামান(৩৫),কে আটক করা হয়। কামরুজ্জামান(৩৫) সাধারনত প্রতিমাসে ১০০ থেকে ১৫০ এর অধিক টিকেট কালোবাজারীর চক্র হতে ক্রয় করত বলে জানা যায়।

এ সময় আসামিদের নিকট হতে ১২ টি মোবাইল ফোন এবং নগদ ৩ লাখ ৩ হাজার ৪২ টাকা উদ্ধার করা হয়।

অভিযুক্তদের বিষয়ে আইনগত কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তিনি।

আরও পড়ুন...