বান্দরবানে তামাকের পরিবর্তে প্রথম বারের মত গম চাষ

পিবিএ, বান্দরবান: বান্দরবান জেলার লামা উপজেলাকে তামাকের রাজ্য বলে অবহিত করা হয়ে থাকে কারণ পাহাড়ের খাদে খাদে যেসব জমিতে একসময় সবজি উৎপাদন করে কৃষকেরা পরিবার চালতো এখন বেশি লাভের আশায় সে জমিতেই চলছিল তামাকের চাষ চলছে। আর এই তামাক থেকে চাষীদের ফিরিয়ে রবিশস্য উৎপাদন বাড়াতে বান্দরবানের লামা ও আলীকদম উপজেলায় প্রথমবারের মত শুরু হয়েছে গম চাষ।

বান্দরবানসদর,লামা,আলীকদম,রোয়াংছড়ি,থানচি,রুমা,নাইক্ষ্যংছড়িসহ বিভিন্ন উপজেলাতে একসময় উৎপাদিত হত বিভিন্ন কৃষি পন্য, কিন্তু বেশ কয়েক বছর থেকে এসব উপজেলার জমিগুলোতে শুরু হয় ক্ষতিকর তামাক চাষ। আর কৃষকেরা বেশি লাভের আশায় সবজি উৎপাদন বন্ধ করে শুরু করে তামাক উৎপাদন।

কিন্তুু কৃষকদের এই ক্ষতিকর তামাক উৎপাদন বন্ধ করে প্রথমবারেরমত গম গবেষণা কেন্দ্র ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্টিটিউটের উদ্যোগে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা বাংলাদেশ কারিতাসের বাস্তবায়নে কৃষকদের ক্ষতিকর তামাক চাষ বাদ দিয়ে প্রণোদনার প্রদানের মাধ্যমে শুরু হয় গম চাষ। আর প্রাথমিকভাবে এই গম চাষ করে লাভবান হচ্ছে কৃষক।

গম চাষী ক্য সাইন শৈ বলেন, আমরা আগে তামাক চাষ করতাম, নিজেদের সারাদিন প্রচুর পরিশ্রম করতে হতো। তার তুলনায় তেমন লাভের মুখ দেখতামনা। এখন কারিতাসের সহযোগিতায় আমরা তামাক চাষ ছেড়ে দিয়ে প্রথম বারের মত গম চাষ করেছি । এবার ভালো ফলন হয়েছে। আশা করছি অনেক লাভবান হবো।

তামাক ছেড়ে প্রথম বারের মত গম চাষী জবুরং বলেন, আমি তামাক চাষ আগে করতাম এখান তামাক চাষ ছেড়ে দিয়ে প্রথম বারের মত ২০ শতক জমিতে গম চাষ করেছি । গম চাষে তেমন কোন কষ্ট নাই অতি সহজে চাষ করা যায়। আমার গম চাষ করে ভালো লেগেছে।

কৃষকেরা জানান এই প্রথমবার কারিতাসের পক্ষ থেকে সহজশর্তে পর্যাপ্ত গমের বীজ,সার, কীটনাশক,মজুরী, ঔষধ ও কৃষি সরঞ্জামের সরবরাহের কারণে গম চাষে বেশি আগ্রহ হচ্ছেন তারা, আর স্বল্প সময়ে চাষ করে অধিক লাভ হওয়ায় কৃষকেরা গমে চাষে ঝুঁকছে।

আলীকদমের গম চাষী নাইতিং প্রু বলেন,গমের তেমন কোন রোগ বালায় না থাকার করাণে অতি সহজে আমরা চাষ করেছি । যদিও বা এটি আমাদের জন্য প্রথম অভিজ্ঞতা। কিন্তু কারিতাস বাংলাদেশের সহযোগিতায় আমরা এবার সফল হয়েছি । আশা রাখছি আগামী বছর ৫০ শতক জমিতে গম চাষ করবো।

আলীকদমের মেনলক বলেন, গম চাষ করতে ভালো লাগে। কারিতাস আমাদের কে বীজ,সার,কীটনাশক,মজুরী,ঔষধ ও নানা প্রকার কারিগরি সহযোগিতা দিয়েছে যার ফলে আমাদের চাষ করতে তেমন কোন সমস্যা হয় নি। চাষ করে ভালো ফলন ও পেয়েছি।
বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা বাংলাদেশ কারিতাস জানায়, জেলার লামা ও আলীকদম উপজেলায় ২০ জন চাষীকে প্রণোদনার মাধ্যমে এই গম চাষ উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে । প্রাথমিভাবে লামা উপজেলায় ১০০ শতক জমি ও আলীকদম উপজেলায় ৫০ শতত জমিতে এই গম চাষ উৎপাদন শুরু হয়েছে ,এবং কৃষকেরা গম চাষ করে লাভবান হচ্ছে।

কারিতাস বাংলাদেশের কর্মসূচী কর্মকর্তা রুপনা দাশ বলেন, আমরা প্রথম বারের মত কয়েক জন কৃষকদের নিয়ে তামাকের পরিবর্তে চাষ হিসেবে গম চাষ শুরু করেছি। আমরা আশা রাখছি আগামীতে লামা আলীকদমের কৃষকরা তামাকের পরির্বতে গম চাষ করবে এবং ভালো ফলন ও তারা পাবেন। ইতোমধ্যে আমরা কৃষকদের বীজ,সার,প্রশিক্ষণ,মজুরী প্রদান করেছি তাই তারা উৎসাহের সাথে চাষ করেছে।

আঞ্চলিক গম গবেষণা কেন্দ্র,গাজীপুর,ঢাকার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. গোলম ফারুক বলেন, বান্দরবানের কৃষকদের তামাক চাষ থেকে দূরে রাখতে কারিতাস বাংলাদেশ এর সহযোগিতায় প্রথম বারের মত আমরা গমের প্রর্দশনী করেছি। তারা গমের পাশাপাশি এক জমিতে ৩ টি ফসল চাষ করতে পারবে । গম চাষের কষ্ট যেমন কম,লাভ বেশি তাই আমরা আশা করছি আগামীতে বান্দরবানের যেসমস্ত জমিতে বর্তমানে তামাক চাষ হচ্ছে সে সমস্থ জমিতে গম চাষ বৃদ্ধি পাবে।

কৃষি সম্প্রসারণের কর্মকর্তারা জানান, তামাক কোম্পানির প্যাকেজে পাঁ দিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে সাধারণ কৃর্ষক,আর ফসলি জমি হারাচ্ছে উর্বরাতা শত্তি ,তাই কৃষকদের সরকারিভাবে বিভিন্ন প্রণোদনার মাধ্যমে গম উৎপাদন করে পার্বত্য এলাকায় গমচাষ বৃদ্ধির কথা জানালেন কৃষি সম্প্রসারণের কর্মকর্তা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর লামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত)সানজিদা বিনতে সালাম বলেন গমে চাষ একটি ভালো কাজ , যে চাষে কৃষকদের কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভবাবনা থাকে না। এবার যদি চাষ ভালো হয় তাহলে আগামীতে আমরা তাদের প্রনোদনার মাধ্যমে গম চাষটা বৃদ্ধিতে কাজ করবো।

পার্বত্য এলাকায় এই গম চাষ সম্প্রসারণ হলে এলাকায় গম উৎপাদন বাড়বে আর কৃষকেরা ক্ষতিকর তামাক ছেড়ে গম আবাদে আরো বেশি ঝঁকে পড়বে পড়বে বলে আশাবাদ সংশ্লিষ্টদের।

পিবিএ/আরপি/এমএসএম

আরও পড়ুন...