আলজেরিয়ায় লাখো মানুষের বিক্ষোভ

আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট আব্দেল আজিজ বুতেফলিকার পদত্যাগের দাবীতে বিক্ষোভ

পিবিএ ডেস্ক: আলজেরিয়ার বিরাশি বছর বয়স্ক প্রেসিডেন্ট আব্দেল আজিজ বুতেফলিকা ২০ বছর ধরে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে আছেন।তিনি ২০১৩ সাল থেকে পক্ষাঘাতগ্রস্থ।শারীরিক ভাবে দায়িত্ব পালনে অক্ষম।তাকে ব্যবহার করে দেশ পরিচালনা করছে অনির্বাচিত এলিটশ্রেণি।তারপরও পঞ্চম মেয়াদে আরো ১০ বছরের জন্য নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।তাই তার পদত্যাগের দাবিতে আলজিয়ার্সের রাস্তায় বিক্ষোভ করেছে লাখ লাখ মানুষ। গত ছয় সপ্তাহ ধরে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে চলা অস্থিরতার মধ্যে শুক্রবার সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ হয়।এ সময় বিক্ষিপ্তভাবে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীরা পাথর ছুড়লে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে এবং রাবার বুলেট ছোড়ে।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা এই অস্থিরতার অবসান ঘটাতে এগিয়ে এসেছে দেশটির সেনাবাহিনী। চলতি সপ্তাহের প্রথমদিকে দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান প্রেসিডেন্ট বুতেফলিকাকে অযোগ্য ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছে। সেনাবাহিনীর এই দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে দেশটির সবচেয়ে বড় শ্রমিক ইউনিয়ন এবং ক্ষমতাসীন জোট সরকারের শরিক ন্যাশনাল র্যালি ফর ডেমোক্রেসি (আরএনডি)।

সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০২ অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে দেশ পরিচালনায় অক্ষম হলে পার্লামেন্টের স্পিকার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন এবং ৪৫ দিনের মধ্যে নির্বাচন দেবেন। তবে এতে দেশটির জনগণ সমর্থন করে নি।তারা প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের পাশাপাশি সুষ্ঠু নির্বাচনেরও নিশ্চয়তা চায়।

তারা জানিয়েছে, সেনাপ্রধানের এই পরিকল্পনা সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা দেয় না। তবে সেনাপ্রধান জানান, আলজেরিয়ায় উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ১০২ অনুচ্ছেদের প্রয়োগ ব্যতীত এই মুহুর্তে অন্যকোন সমাধান নেই।

সাংবাদিক মার্ক মারজাইনদাস আলজেরিয়ায় বসবাস ও কাজ করতেন ৯০’এর দশকে।তার মতে, “৯০ এর দশকে গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে উত্থান হয়েছিলো প্রেসিডেন্ট বুতেফলিকার। এরপর থেকেই ক্ষমতা আসলে রাজনীতিক ও সামরিক একটি যৌথ মাফিয়া চক্রের কাছে চলে যায়”।
দেশটি দীর্ঘ যুদ্ধের পর ১৯৬০ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা পেয়েছিলো।

এরপর ১৯৯০ সালে দেশটিতে প্রথম একটি অবাধ নির্বাচন হয় যাতে জনগণ স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পায় এবং দেশটিতে গণতন্ত্রকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার সুযোগ তৈরি হয়।কিন্তু নির্বাচনে ইসলামপন্থীরা জয়ী হলে সামরিক বাহিনী হস্তক্ষেপ করে।তারা জনরায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পরিবর্তে সামরিক শাসন জারি করে এবং ইসলামপন্থীদের গণহারে ধরপাকড় ও দমন শুরু করে।এরফলে দেশটি আবার গৃহযুদ্ধের কবলে পড়ে এবং তা প্রায় এক দশক ধরে চলতে থাকে।এই এক দশকে প্রায় দু লাখ মানুষ নিহত হয়।সাংবাদিক মার্ক মারজাইনদাসের মতে সেটি ছিলো আলজেরিয়ার সবচেয়ে অন্ধকার সময়।

পরে ১৯৯৯ সালে আব্দেল আজিজ বুতেফলিকা ক্ষমতায় আসেন।কিন্তু তাকে সামনে রেখে দেশ পরিচালনা করে আসছেন সামরিক-বেসামরিক শ্রেণির একটি অনির্বাচিত সিন্ডিকেট।তারাই রাষ্ট্রের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন।তাই তাকে জীবন্ত লাশ (দ্য লিভিং ডেড) হিসেবে অভিহিত করা হয়।

পিবিএ/এএইচ

আরও পড়ুন...