মুহাম্মদ আবুল হুসাইন
সূর্য অস্ত গেছে অনেক্ষণ। সন্ধ্যার আকাশের সেই বিষণ্ন অথচ গম্ভীর রূপটি এখন আর নেই। নেই সেই রক্তিম আভাও। তার পরিবর্তে এখন নেমে এসেছে রাতের আকাশের ছুমছাম নিরবতা, নিঃসিম অন্ধকার আর তার মধ্যে সাড়া আকাশ জুড়ে লক্ষ তারার ঝিকিমিকি। যেন মাথার উপরে একটি বিশাল চাঁদোয়া।
এটি আকাশের আরেক রূপ। চাঁদের আর লক্ষ তারার ঝিকিমিকি মিলে জ্যোস্ন রাতের স্নিগ্ধ আলোর মধ্যে নিঃসিম কালো আকাশের বিশালতা।
আলী আকাশের রূপ আর লক্ষ তারার ঝিকিমিকিতে মুগ্ধ হয়ে গুনগুনিয়ে গাওয়া শুরু করলো-‘‘টুইঙ্কল টুইঙ্কল লিটল স্টার…তারপর হঠাৎ প্রশ্ন করে বসলো- আচ্ছা আব্বু, তারা গুলো এত ছোট কেন?
আলীকে তার আব্বু পাল্টা প্রশ্ন করলেন- আচ্ছা চাঁদটাকে কি তোমার তারার মত ছোট মনে হয়?
আলী: নাহ।
তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, সূর্যটাকেও কি তোমার তারার মত ছোট মনে হয়?
আলীর সোজা জবাব- মোটেই না।
এবার তিনি আলীকে চমকে দিয়ে বললেন, তাহলে শোন, ঐযে চাঁদটাকে দেখছো না, সেটা কিন্তু ঐ তারাগুলোর চেয়ে অনেক অনেক গুণ ছোট, বলতে পারো, ছোট্ট ঐ তারার তুলনায় চাঁদটা একটা ছোট্ট ধুলিকনার মত, আর একেকটা তারা ঐ চাদ, অথবা আমাদের পৃথিবী এমনকি আমাদের সূর্যের তুলনায়ও কোটি কোটি গুন বড়!
শুনে তো আলী আর বখতিয়ার দুজনেরই টাসকি লাগার দশা।
আলী বলল, তাহলে তারাগুলোকে এত ছোট দেখায় কেন?
কারণ, সেগুলো পৃথিবী থেকে চাঁদ ও সূর্যের চেয়েও অনেক অনেক দূরে। সেকারণেই তারাগুলোকে পৃথিবী থেকে অনেক ছোট দেখায়। আর তারাগুলোর তুলনায় চাঁদ ও সূর্য আমাদের পৃথিবীর বেশি কাছে সে কারণে সেগুলোকে বড় দেখায়।
আলী: তাহলে তারা গুলো আসলে অনেক বড়, তাই না? আচ্ছা তারাগুলো কি দিয়ে বানানো? সেগুলো অত উপরে কী করে?
তারা বা নক্ষত্র হলো প্রধানত গ্যাস দিয়ে তৈরি (হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাস) উজ্জ¦ল আলোক বস্তু। এগুলো থেকে আলো নির্গত হয় বলেই সেগুলোকে আমরা খালি চোখে দেখতে পাই। আবার অনেক নক্ষত্রকে আমরা খালি চোখে দেখতে পাই না, টেলিস্কোপ দিয়ে দেখতে হয়। কারণ, সেগুলো আরো এত্ত বেশি দূরে অবস্থান করে যে, সেগুলোর আলো পৃথিবীতে এসে পৌঁছে না।
আচ্ছা, আব্বু, এই চাঁদ, সূর্য, নক্ষত্র- এগুলো পৃথিবী থেকে কত দূরে? এবার প্রশ্ন করলো বখতিয়ার।
পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব মাত্র তিন লক্ষ চুরাশি হাজার চারশো কিলো মিটার। অন্যদিকে পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত ১৪৯ দশমিক ৬ মিলিয়ন কিলো মিটার। অর্থাৎ, চৌদ্দ কোটি ছিয়ানব্বই লক্ষ কিলো মিটার বা প্রায় পনেরো কোটি কিলো মিটার। আরো পরিষ্কার করে বললে চাঁদের থেকেও প্রায় চৌদ্দ কোটি বিরানব্বই লক্ষ কিলো মিটার দূরে সূয়ের অবস্থান, তার পরও সূর্যকে চাঁদের সমান বা কিছুটা বড় দেখা যায়। কারণ সূর্যের আকৃতি চাঁদের তুলনায় অনেক বড়, ৬৪ মিলিয়ন বা ৬ কোটি ৪০ লক্ষ গুণ বড়।
আলী: আচ্ছা আব্বু পৃথিবী বড় নাকি চাঁদ বড়?
চাঁদ থেকে পৃথিবী প্রায় পঞাশ গুণ বড়। পৃথবী একটি গ্রহ আর চাঁদ পৃথিবীর একটি প্রাকৃতিক উপগ্রহ। উপগ্রহ সব সময় গ্রহ থেকে ছোট হয়।
বখতিয়ার বলল, আকাশের সবকিছুই ভয়ংকর রকমের বড়, অথচ পৃথিবী থেকে সেগুলোকে কত ছোট্ট আর সুন্দর দেখায়।
আলী বলল, ঠিক বলেছো ভাইয়া, কোন কারণে যদি সেগুলোকে বড় বড় আকারে দেখা যেতো তাহলে আমরা ভয়েই মরে যেতাম!
বখতিয়ার বলল, আল্লাহ বাঁচাইছে!
আচ্ছা, তাহলে শোন, নক্ষত্র সম্পর্কে তোমাদেরকে আরো কিছু মজার কথা বলি, আব্বু বললেন।
আমাদের সৌরজগটাতো সূর্যকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে তাই না? এখানেই সূর্যই হলো রাজা। মনে হয় সূর্যের চেয়ে আলো বুঝি আর কারোই নাই। সূর্যের আলোতেই পৃথিবী আলোকিত হয়। আমরা পাই ঝলমলে দিন। দিনের বেলা সূর্যের দিকে তাকালে তোমার চোখ কানা হয়ে যাবার মত অবস্থা হবে। কিন্তু পৃথিবী থেকে দেখতে পাওয়া সূর্যের চেয়েও উজ্জ¦ল নক্ষত্রের নাম কি জানো? সেটার নাম হলো সাইরিয়াস (sirius)। এর ঔজ্জ্বল্যের তুলনায় সূর্যের ঔজ্জ্বল্য বলা যায় কিছুই না। সূর্যের তুলনায় এর আলো ২৪গুণ বেশি।
তবে এটি পৃথিবী থেকে এত দূরে যে, খালি চোখে দেখা যায় না। এটি দেখতে হয় টেলিস্কোপ দিয়ে। তবে এর চেয়েও উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম সিগনাস ওবিটু নম্বর ১২ (Cygnus OB2 No 12)। এটি সম্ভবত আমাদের গ্যালাক্সির মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র। জানতে চাও এর ঔজ্জ্বল্য কত? সূর্যের তুলনায় প্রায় ছয় মিলিয়ন বা ৬০ লক্ষ গুণ বেশি!
৬০ লক্ষ গুণ বেশি!!! বখতিয়ার আর আলী দুজনেই চিৎকার করে উঠলো।
আচ্ছা আব্বু, আমরা কি টেলিস্কোপ দিয়ে ঐ তারাটাকে দেখতে পাবো?
না। ওটা এত দূরে যে, আমাদের এই পৃথিবী থেকে একে দেখা যায় না। নাসার বিজ্ঞানীগণ মহাকাশ থেকে এটি দেখতে পেয়েছেন। ১৯৯২ সালে এটি আবিষ্কৃত হয়।
আচ্ছা আব্বু, সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রের কথা তো জানলান, সবচেয়ে বড় নক্ষত্র সম্পর্কে কিছু বল।
এখন পর্যন্ত আবিস্কৃত নক্ষত্রগুলোর মধ্যে UY Scuti নামক নক্ষত্রটি সবচেয়ে বড়। এর ব্যাসার্ধ সূর্যের ব্যাসার্ধের তুলনায় ১৭০৮ গুন বেশি। আর সূর্যের ব্যাসার্ধ তো জানো প্রায় ৬ লক্ষ ৯৫ হাজার ৫শ কিলো মিটার বা ৪ লক্ষ ৩২ হাজার ৪৫০ মাইল।
চলবে-