জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সার্ভার হ্যাকড, অনুসন্ধানে দুদক

পিবিএ,ঢাকা: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সার্ভার হ্যাক করে শতকোটি টাকার পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পাচার করা হয়েছে। এ ঘটনায় অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে দুদক। সংস্থাটির চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফের নেতৃত্বে গঠিত একটি উচ্চপর্যায়ের টিম গঠন করে এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের শনাক্ত করার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

সূত্র জানায়, পণ্য পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ১১ ব্যক্তির ওপর ইতিমধ্যে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। দুদকের টিম এনবিআরের কাছে চিঠি দিয়ে অভিযোগ সংক্রান্ত বেশকিছু তথ্য-উপাত্ত চাইবে।

কাস্টমস কর্মকর্তাদের সরকারি আইডি ও পাসওয়ার্ড চুরি করে পণ্য পাচারে কারা জড়িত তাদের বের করে বিচারের মুখোমুখি করতে চায় সংস্থাটি। চক্রটি তিন বছরের বেশি সময় ধরে ওই সার্ভার অবৈধভাবে ব্যবহার করে শতাধিক কোটি টাকার পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ছাড় করে নেয়। দুদক মনে করছে, এ ধরনের জালিয়াতির সঙ্গে যেহেতু আর্থিক বিষয় জড়িত এবং মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধ সম্পৃক্ত, সেহেতু এই অপরাধ অনুসন্ধান করে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনাই বড় কাজ।

এ অপরাধের সঙ্গে এনবিআর বা শুল্ক গোয়েন্দার কেউ (সাবেক বা বর্তমান) জড়িত আছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখবে দুদক।

দুদকের একজন পরিচালক বলেন, অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণ হাতে রেখে জড়িতদের সম্পদের তথ্য বের করা হবে। অনুসন্ধানে অবৈধ সম্পদ অর্জনের ঘটনা সামনে এলে তাদের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ করা হবে। এর আগে অপরাধ তদন্ত সংস্থা সিআইডির পক্ষ থেকেও সার্ভারে হ্যাকিংয়ের ঘটনা তদন্ত হচ্ছে বলে জানা গেছে। সিআইডির এডিশনাল এসপি রফিকুল ইসলাম এ তদন্ত কাজ পরিচালনা করছেন।

জানা গেছে, এনবিআরের সার্ভার হ্যাকিংয়ের এ ঘটনায় চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি রমনা থানায় ১১ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলাও হয়েছে। মামলায় জালিয়াতির মাধ্যমে ৩০টি কনটেইনার ছাড় করা হয়েছে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, এসব কনটেইনারে লোহা ও ইস্পাত পণ্য ছিল বলে ঘোষণা দেয়া ছিল। পণ্য পাচারের সঙ্গে জড়িত ১১ জনের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়েছে।

শুল্ক গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, কনটেইনারগুলোতে বিদেশি সিগারেট, দামি মদ ও পোশাক কারখানার কাপড় ছিল। এ ঘটনায় কত ক্ষতি হয়েছে, তা এখনও নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. শহিদুল ইসলাম মঙ্গলবার বলেন, জালিয়াতির মাধ্যমে সংঘটিত ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ের কাজটি আমরা করছি। তিনি জানান, এ ঘটনায় একাধিক কমিটি তদন্ত করছে। ঘটনার পুরো রহস্য বের করতে একটু সময় লাগবে। কারণ ঘটনাটা জটিল ও টেকনিক্যাল।

শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের অপর একটি সূত্র জানায়, এনবিআরের সার্ভারে ঢুকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার পণ্য জালিয়াতির ঘটনায় এ বিভাগ থেকে আরও একাধিক মামলা হবে। এসব মামলায় হ্যাকিং চক্রের অনেক দুর্বৃত্তকে আসামি করা হবে। মামলাগুলো শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ থেকে করা হলেও তদন্ত করবে সিআইডি। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের তদন্তে ধরা পড়েছে- চক্রটি এনবিআরের সার্ভারে ২০১৬ সাল থেকে ৩ হাজার ৭৭৭ বার লগইন করেছে। আর এতে সহায়তা করেছেন চট্টগ্রাম কাস্টম, বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত বেসরকারি সংস্থার কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। বিষয়টি মামলায়ও তুলে ধরা হয়েছে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, পাসওয়ার্ড চুরি ও চিঠি জালিয়াতি করে পণ্য আমদানি ও ছাড় করানোর ঘটনায় ২০ আমদানিকারক ও ১০ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের জড়িত থাকার যে অভিযোগ উঠেছে তাদের বিষয়ে নিবিড়ভাবে অনুসন্ধান করা হবে। এ ছাড়া ঘটনায় এনবিআর বা এ সংস্থায় কর্মরত বর্তমান বা সাবেক কোনো কর্মকর্তার যোগসাজশ আছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হবে। কারও ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে এটা হয়েছে কিনা বা কে কীভাবে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন, তা অনুসন্ধানের আওতায় আনা হবে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রথম দফায় কাস্টমসের সাবেক দু’জন কর্মকর্তার নামে আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে পণ্য খালাস করা হয়েছে। এরা হলেন- ডিএএম মহিবুল ইসলাম ও ফজলুল হক। মহিবুল ইসলাম ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে চাকরি থেকে অবসরে যান। ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেড় বছর তিনি চট্টগ্রাম বন্দরে ছিলেন। আর ফজলুল হক ২০০৯ সাল থেকে মধ্যে এক বছর বাদে ২০১৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ছয় বছর চট্টগ্রাম বন্দরে কর্মরত ছিলেন। নিয়ম অনুসারে, একজন কর্মকর্তা বন্দরে নিয়োগের পর পদ ও দায়িত্ব বিবেচনা করে তার নামে আইডি ও পাসওয়ার্ড তৈরি করে দেয়া হয়। আর কর্মকর্তারা কর্মস্থল ত্যাগ করার সময় লিখিতভাবে বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানালে সেই আইডি বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি বলে জানা গেছে।

পিবিএ/এফএস

আরও পড়ুন...