দক্ষিণ ভারতে বিজেপির ফল খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা

চিন্তিত ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি

পিবিএ ডেস্ক: উত্তর ও মধ্য ভারতের চিরাচরিত শক্তিশালী এলাকায় কঠিন লড়াইয়ের মুখে বিজেপি।

রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ, ছত্তিশগড়ে বিধানসভা নির্বাচনে সদ্যই হার হয়েছে। উত্তর প্রদেশেও সমাজবাদী পার্টি-বিএসপি জোট বড় ধাক্কা দেবে বলে সব সমীক্ষাতেই অনুমান। এরই মধ্যে বিজেপি’র দক্ষিণ ভারতে ক্ষতিপূরণের সম্ভাবনাও ক্ষীণ হয়ে এসেছে। দেশে নির্বাচন শুরুর এক সপ্তাহ আগে দক্ষিণ ভারত থেকে এপর্যন্ত হতাশারই ছবি বিজেপি-তে। ২০০৯-র লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণ ভারতে বিজেপি লড়েছিল ১০৬ আসনে, জিতেছিল ১৯টিতে। ২০১৪-তে বিজেপি অনেক কম আসনে লড়েছিল। ৬৭ আসনে লড়ে তারা জিতেছিল ২১ আসন। বিজেপি’র সর্বভারতীয় জয়ের গড় থেকে তা কম ছিল। দক্ষিণ ভারতে বিজেপি’র তুলনামূলক ভালো জায়গা কর্ণাটক। কর্ণাটকে বিজেপি ১৯৯৯-র লোকসভা ভোটে ৭ আসন পেলেও ২০০৪-এ পেয়েছিল ১৮, ২০০৯-এ ১৯, ২০১৪-তে ১৭ আসন।

২০১৮-র বিধানসভা নির্বাচনে চিরাচরিত শক্তির এলাকার বাইরেও কিছু আসনে জিতেছিল বিজেপি। কিন্তু সেই নির্বাচনে কংগ্রেস ও জনতা দল (এস) পৃথক ভাবে লড়েছিল। লোকসভা নির্বাচনে দু’দলের প্রাক-নির্বাচনী জোট হয়ে যাওয়ায় বিজেপি’র পক্ষে পরিস্থিতি কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলেই পর্যবেক্ষকদের ধারণা। কর্ণাটকের বাইরে দক্ষিণে অবশ্য বিজেপি’র প্রভাব বাড়েনি। অন্য দলের সঙ্গে জোট বেঁধে কোনো কোনোবার অল্প আসন পেলেও একক শক্তিতে ভালো ফল কোনোদিনই হয়নি। অন্ধ্র প্রদেশে তেলুগু দেশমের সঙ্গে জোট বেঁধে ১৯৯৯ এবং ২০১৪-তে বিজেপি যথাক্রমে ৭ এবং ৩ আসন পায়। ২০০৯-এ টিডিপি জোটে ছিল না, বিজেপি একটিও আসন পায়নি। এবারও টিডিপি জোটে নেই। তামিলনাডুতে ১৯৯৯-এ বিজেপি ডিএমকে এবং এমডিএমকে-র সঙ্গে জোটে ছিল। পেয়েছিল ৪ আসন। তারপর দুই নির্বাচনে কোনো আসনই পায়নি বিজেপি।

২০১৪-তে শুধু কন্যাকুমারী আসনে জিতেছিল। অন্ধ্র প্রদেশে লোকসভার সঙ্গেই হতে চলেছে বিধানসভার ভোট। লোকসভা আসন ২৫। চন্দ্রবাবু নাইডু বিজেপি-সঙ্গ ত্যাগ করার পরে রাজ্যে বিজেপি’র পা রাখার জায়গাই কমে এসেছে। বস্তুত তারা এখন পঞ্চম শক্তি। তেলুগু দেশমের মূল প্রতিপক্ষ হিসাবে সামনে এসেছে ওয়াইএসআর কংগ্রেস এবং পবন কল্যাণের জনসেনা পার্টি। জনসেনার সঙ্গে বামপন্থীদেরও জোট হয়েছে। রাজ্যে কংগ্রেসও দুর্বল হয়েছে, যদিও এখন হারানো জমি পুনরুদ্ধারের কিছু চেষ্টা করছে। বিজেপি-ও সব লোকসভা আসন এবং বিধানসভায় লড়ছে কিন্তু রাজ্য পুনর্গঠনের পরে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থতার দায় বহন করতে হচ্ছে তাদের। অন্ধ্র প্রদেশ বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা না পাওয়ায় বিজেপি জোট ভেঙে চলে এসেছেন নাইডু। অন্ধ্র প্রদেশকে আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতিও পালন করেননি মোদী। ভোটে এই প্রশ্নের মুখে কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে বিজেপি। ‘বিশ্বাসঘাতকতার’ অভিযোগ সামলাতে এখন মোদীই চন্দ্রবাবুকে ’ইউ-টার্ন বাবু’ বলে অভিহিত করছেন।

টিডিপি’র অভিযোগ, হালে পানি না পাওয়া বিজেপি ওয়াইএসআর কংগ্রেসের সঙ্গে গোপন বোঝাপড়া করেছে। যদিও বিজেপি’র বিরুদ্ধে জনমনে ক্ষোভের কারণেই জগনমোহন রেড্ডি কোনো প্রকাশ্য জোটে যেতে রাজি হননি। বিজেপি’র গণনা, তারা নিজেরা আদৌ কোনো আসন না জিতলেও ওয়াইএসআর কংগ্রেসের জয়ী সাংসদরা ভোটের পরে তাদের সমর্থন দেবেন। সে-কারণে বাধ্য হয়েই কোনো কোনো আসনে রেড্ডির দলকেই সমর্থন করছেন বিজেপি নেতা-কর্মীরা। ওয়াইএসআর কংগ্রেস ২০১৪-তে ৮ আসন জিতেছিল। তেলেঙ্গানাতেও বিজেপি সঙ্গীহীন। মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও বিজেপি-সঙ্গ ছেড়ে গত ডিসেম্বরেই বিধানসভায় বড় জয় পেয়েছেন। এখন লোকসভাতেও বড় জয়ের লক্ষ্যে প্রচারে নেমেছেন। ১৭ আসনের মধ্যে হায়দরাবাদ টিআরএস ছেড়ে দিয়েছে এআইএম‌আইএম-কে। কংগ্রেস বিধানসভায় জিতেছিল ১৯ আসন। লোকসভায় তারা একাই লড়ছে। যদিও কংগ্রেসের ৯ বিধায়ক দল ছেড়ে চলে গিয়েছেন টিআরএস-এ। বিজেপি বিধানসভায় জিতেছে একটি মাত্র আসনে। লোকসভায় একাই লড়ছে। চন্দ্রশেখর রাওয়ের সঙ্গে বাগযুদ্ধেও জড়িয়েছেন মোদী।

নির্বাচনী প্রচারে এসে কেসিআর’র পরিবারের সম্পত্তিবৃদ্ধি এবং জ্যোতিষীর পরামর্শ নিয়ে বিধানসভা ভোট এগিয়ে আনা নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। কেসিআর আবার বলেছেন, মোদীর সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে প্রকাশ্যে বাগাড়ম্বর অবাঞ্ছিত। অতীতেও এমন ঘটনা ঘটেছে অন্তত ১১বার, ঘোষণা করা হয়নি। কেসিআর অ-বিজেপি, অ-কংগ্রেস ফেডারেল ফ্রন্টের তত্ত্ব সামনে এনেছিলেন। তবে এ নিয়ে খুব বেশি তৎপরতা দেখাননি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের ধারণা, কেসিআর ভোট-পরবর্তী পরিস্থিতিতে সব বিকল্পই খোলা রেখে চলছেন। কিন্তু নিজের রাজ্যে বিজেপি’কে সহজে আসন পেতে দেবেন না। তিনটি আসনে বিজেপি লড়াইয়ে থাকলেও শূন্য হাতেই ফিরতে হতে পারে। কেরালায় এপর্যন্ত কোনোদিনই বিজেপি আসন জেতেনি। সে-রাজ্যে বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট এবং ইউডিএফ’র মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা মুখ্য। বিজেপি ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে ১৫শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এবারে সবরিমালা মন্দির বিতর্ককে কেন্দ্র করে হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলিকে সক্রিয় করেছিল সঙ্ঘ পরিবার। ভারত ধর্ম জনসেনা ও কেরালা কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে তারা নির্বাচনে লড়ছে। তারই ভরসায় অন্তত দু’আসনে তারা জোরালো লড়াই দেবে বলে দাবি করছে। তবে ওই পর্যন্তই, কোনো আসন জয়ের সম্ভাবনা নেই বলেই পর্যবেক্ষকদের ধারণা।

তামিলনাডুতে এডিএমকে-র সঙ্গে জোট করে ৫ আসনে প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি। এডিএমকে ২০১৪সালে ৩৭ আসনে জয়ী হয়েছিল। কিন্তু এডিএমকে-তে ভাঙন হয়েছে, রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী মনোভাবও যথেষ্ট প্রবল। বরং ডিএমকে-কংগ্রেস জোট এবং বামপন্থীদের সঙ্গে ডিএমকে’র আসন বোঝাপড়া হওয়ায় তারাই এগিয়ে রয়েছে। তামিলনাডুতে সাধারণ প্রবণতা একই জোটের প্রায় সব আসন জিতে নেওয়া। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের হিসাব, এবারে ডিএমকে জোটের পক্ষে সেই প্রবণতা কাজ করতে পারে। বিজেপি’র ঝুলি সেক্ষেত্রেও ভরবে না।

সূত্র: ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম

পিবিএ/এএইচ

আরও পড়ুন...