পিবিএ, কক্সবাজার: কক্সবাজার সদর হাসপাতালে অপ্রীতিকর ঘটনার সমাধান না হওয়ায় চিকিৎসক-নার্স ও কর্মচারীরা তাদের অবস্থানে অনড় রয়েছে। এর ফলে আজ রোববার ৭এপ্রিলও হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা বন্ধ রয়েছে। এ নিয়ে টানা পাঁচ দিন চিকিৎসা সেবা বন্ধ রয়েছে জেলা একমাত্র পূর্ণাঙ্গ এই সরকারি হাসপাতালের। চিকিৎসা সেবা বন্ধ থাকায় রোগীদের আর্তনাদে পুরো হাসপাতাল জুড়ে এক ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। চিকিৎসার জন্য গগন বিদারী কান্না করছে রোগীরা। কিন্তু রোগীদের এই আর্তনাদেও মন গলছে না চিকিৎসক-নার্সদের। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে।
এই পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে জেলার সর্বসাধারণ। একজনের জন্য পুরো হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা বন্ধ রাখায় দায়ী চিকিৎসক-নার্স ও কর্মচারীদের কঠোর শাস্তিরও দাবি জানাচ্ছেন লোকজন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের বহি: বিভাগ, জরুরী এবং সব ওয়ার্ডের চিকিৎসা সেবা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। কোথাও কোনো চিকিৎসক-নার্স ও কর্মচারীর দেখা মিলেনি। চিকিৎসা সেবা বন্ধ থাকলেও এখনো হাসপাতালে বেডে পড়ে থেকে কাতরাচ্ছে বেশ কিছু রোগী। চিকিৎসা না পেয়ে রোগী ও স্বজনেরা কান্না করছে। অনেক রোগীর অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন রয়েছে । যারা হাসপাতালে পড়ে রয়েছে সবাই গরীব রোগী। অর্থাভাবে প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারছে না তারা। রোববার ৭এপ্রিল সকালে চিকিৎসা না পেয়ে শহরের এক মহিলা রোগী মারা গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওই মহিলার স্বজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবদুল মোনাফ জানান, তার ওই আত্মীয় সদর হাসপাতালে গিয়েও বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে।
অন্যদিকে প্রতি মুহূর্তে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসছে শত শত মুমূর্ষু রোগী। জেলার দূর-দূরান্ত থেকে আসছে রোগীরা। চিকিৎসা না পেয়ে তারা বাধ্য হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। হাসপাতালের শীর্ষ কর্মকর্তারা অফিস করছেন। কয়েকজন ইন্টার্নি চিকিৎসক দেখা গেলেও তারা কর্মবিরতিতে রয়েছেন। শনিবার রাতেও বিষয়টি একটি বৈঠক হলেও কোনো সমাধান হয়নি।
জানা গেছে, (৪ এপ্রিল) বৃহস্পতিবার ভুল চিকিৎসায় কক্সবাজারের সমিতি পাড়ার আনোয়ার হোসেন নামের এক মৎস ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয় বলে দাবি তার স্বজনদের। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মৃতের স্বজনেরা দুইজন ইন্টার্ন চিকিৎসককে মারধর করে। এছাড়া নার্স ও কর্মচারীদের লাঞ্ছিত করেন। এই ঘটনার জের ধরে সাথে সাথেই চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দেয় হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্স ও কর্মচারীরা। এতে বিপাকে পড়ে যায় চিকিৎসাধীন রোগীরা।
সচেতন লোকজন বলছেন, একজনের জন্য ঘটনা হয়েছে। তার জন্য পুরো হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দেয়া অত্যন্ত ঘৃণ্য ও নিন্দনীয় কাজ। চিকিৎসার মতো অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়কে পুঁজি করে নিজেদের দাবি আদায়ের হাতিয়ার বানানো অত্যন্ত অমানবিক কাজ। এমন একটি অন্যায় কাজ অন্তত চিকিৎসক-নার্সরা করতে পারে না। তারা দোষীদের শাস্তি দাবি করতে পারে কিন্তু জিম্মি করে পুরো হাসপাতালে চিকিৎসা বন্ধ করে দেয়ার অধিকার তাদের নেই।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. বিধান পাল দাবি করেছেন, হাসাপাতালে চিকিৎসা চলছে।
পিবিএ/টিএ/হক