সরকারি সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে টাকা আদায় করছে পল্লী বিদ্যুৎতের কর্মকর্তারা

পিবিএ, লালমনিরহাট: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে বন্ধপরিকর। সেই লক্ষ্য নিয়ে দেশ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎতের কতিপয় দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের কারণে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনীয় প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সরকারের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেয়ার বদলে টাকা আদায় করা হচ্ছে।

সদর উপজেলার সীমান্ত ঘেষাঁ মোগলহাট ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম কর্ণপুর মেরুয়াটারী। এই গ্রামে পল্লী বিদ্যুৎতের পোল পুতে, অর্ধশতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ও ঠিকাদাররা। অথচ প্রায় দুই বছর ধরে ওইসব গ্রাহকরা ধর্ণা দিলেও তাদের ভাগ্য পল্লী বিদ্যুৎতের সংযোগ মিলেনি। মিলেছে শুধুই হয়রানী আর টালবাহনা। গুনতে হয়েছে দফায় দফায় ঘুষের টাকা। ফলে ওই গ্রামের ৪০/৫০টি পরিবার বিদ্যুৎতের আশায় বিদ্যুৎ বিহীন রয়েছেন।

জানা গেছে, সদরের অদুরে কর্ণপুর মেরুয়াটারী গ্রামের ৪০/৫০টি পরিবার বিদূৎবিহীন রয়েছে। বাড়িতে বিদূতের সংযোগ নিতে দুই বছর আগে লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করে। পল্লী বিদ্যুৎতের কর্মকর্তারা ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দিলে দ্রুত মেরুয়াটারী গ্রামের বাড়ি গুলোতে পল্লী বিদ্যুৎতের সংযোগ দেয়া যাবে।

পরিবারগুলো চাঁদা করে ঘুষের ৫০ হাজার টাকা জোগার করে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে দেয়। এই ঘুষ দেয়ার কাজে সহযোগীতা করে স্থানীয় বিদ্যুৎতের লাইনম্যান পুলক। ঘুষের টাকা দিয়েও সংযোগ মিলেনি। মাসের পর মাস ঘুরতে থাকে দালাল পুলকের বাড়ি ও পল্লী বিদ্যুৎতের অফিসে। শেষ পর্যন্ত গত এক বছর আগে রমজানা মাসে পল্লী বিদ্যুৎ অফিস কর্ণপুরের মেরুয়াটারী গ্রামে বিদ্যুৎতের পোল পুতে রাখে।

এবার বিদ্যুৎতের সংযোগ দেয়ার নামে পল্লী বিদ্যুৎতের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতিটি বাড়ি থেকে সংযোগ দেয়ার নামে দালাল পুলকের (স্থানীয় ইলেক্টিশিয়ান) মাধ্যমে বাড়ি ভেদে ৫/৭ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নেয়। কথা ছিল ৭দিনের মধ্যে সংযোগ দিবে। পল্লী বিদ্যুৎতের পোল পুতে রাখার প্রায় এক বছর হতে চলেছে। খুঁটিতে কোন বৈদ্যতিক তার টানানো হয়নি। গুনতে হয়েছে দফায় দফায় ঘুষের টাকা। ফলে ওই গ্রামের ৪০/৫০টি পরিবার দীঘদিন ধরে বিদ্যুৎবিহীন রয়েছেন। তবে বিদ্যুৎ পেতে ওই গ্রামের বেশকিছু পরিবারকে গুনতে হয়েছে দফায় দফায় ঘুষের টাকা।

বিদ্যুৎ পেতে ঘুষের টাকা প্রদানকারী সদস্যরা হলেন, হাসেন আলী (৫৫), মকবুল হোসেন (৪৫), আলা বকস (৫০), ইসমাইল হোসেন (৪৮), রবিউল ইসলাম (২৫), চান্দু শেখ (৫৫), জামাল উদ্দিন (৫০), নুর হোসেন (৪৪), বিমল চন্দ্র (৩৫), আমজাদ হোসেন (৩২), লালমিয়া (৪৬), জহির উদ্দিন (৬০), আনোয়ার হোসেন (২২), গোলজার হোসেন (৩২), সোলাইমান (৪০), লালুমিয়া (৪২), জাবেদ আলী (৩৩), হাফিজুর রহমান (৩৮), রাবরূ মৈক (৩২), অর অশণি (৩৮), ছাইফুল ইসলাম (২৮), আব্দুস ছালাম (৪০), সামছুল মিয়া (৩৫), নুরুল ইসলাম (৫৫), সমশের আলী (৫৮), সুরুজ আলী (৪৮), কাশেম আলী (৬০), নবির হোসেন (৩০), কদু শেখ (৬০), হাফিজুল (২৫), ছবুর হোসেন (৫৮), জুল হোসেন (৪০), নুর হক (৬০) ও ছালাম মিয়া।

স্থানীয় বিদ্যুৎতের লাইনম্যান পুলক জানান, দুই মাস আগে পল্লী বিদ্যুৎতের কর্মকর্তা ও ঠিকাদার কাজ না করায় বৈদ্যতিক সংযোগ দেয়া যাচ্ছে না। কর্ণপুরের মেরুয়াটারী গ্রামে ৬ জনের একটি প্রতিনিধি দল কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুরের দূর্গাপুর গ্রামে ঠিকাদার সামছুল হকের বাড়িতে তার সাথে দেখা করতে যায়। ঠিকাদারকে দ্রুত কাজ শেষ করতে অনুরোধ করে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ঠিকাদার কাজ শেষ করেনি। গ্রামটিতে কয়েকটি বিদ্যুৎতের পোল পুতে রাখা আছে। বিদ্যুৎতের সংযোগ পেতে এবার গ্রামের লোকজনের দূঃখের ও কষ্ট কেটে যাবে।

এ বিষয় পুলক জানান, পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ সংযোগ দেয়ার পক্ষে রয়েছে। কিন্তুু ঠিকাদার কাজ না করায় সংযোগ দিতে বিলম্ব হচ্ছে। পরে পল্লী বিদ্যুৎতের ঠিকাদার সামছুল হকের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তার বেশ কিছু জায়গায় পল্লী বিদ্যুৎতের লটের মাধ্যমে কাজ চলছে। মোগলহাট কর্ণপুর মেরুয়াটারী গ্রামের বিদ্যুৎ সংযোগের কাজটি কবে শেষ করবেন তার কোন সদউত্তর দিতে পারেনি।

এ ব্যাপারে লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎতের ডিজিএম জাকির হোসেন জানান, পল্লী বিদ্যুৎতের পোল ও বৈদ্যতিক তার সংযোগের কাজ ঠিকাদারের মাধ্যমে করে পল্লী বিদ্যুৎতের নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর। দালালরা ঘুষ নিলে সেই দায়দায়িত্ব পল্লী বিদ্যুৎতের কর্মকর্তা কর্মচারীরা নিবে না।

পিবিএ/এএসআই/হক

আরও পড়ুন...