রূপচর্চায় হলুদের কার্যকারিতা

পিবিএ ডেস্কঃ মশলা হলেও শুধু রান্নাঘরেই ইনি সীমাবদ্ধ নন। স্বাস্থ্যের পক্ষে যেমন উপকারী, তেমনই সৌন্দর্যেও অপার রাজত্বের নাম হলুদ। যেমন সুন্দর রং, তেমনই এর গুণ। যে কোনও শুভ অনুষ্ঠানে হলুদের ব্যবহার অবধারিত। ঈদের দিন সকালে হলুদ মেখে গোসল না করলে যেন কোথায় একটা অসম্পূর্ণতা থেকেই যায়। আর বিয়েবাড়ি তো রয়েইছে। তবে শুধু বিশেষ দিনেই নয়, রোজকার রূপরুটিনেও হলুদের ব্যবহার চিরন্তন। ত্বকের হেন সমস্যা নেই, যা হলুদের পক্ষে ঠিক করা সম্ভব নয়। অ্যাকনে, দাগ-ছোপ, শুষ্কতা, তৈলাক্ততা, নির্জীব ত্বক, বলিরেখা, স্ট্রেচমার্ক—সব সমস্যার সমাধান জানে হলুদ। নিঁখুত, জেল্লাদার, মসৃণ, কোমল ত্বকের জন্য হলুদ ওয়ান স্টপ সলিউশন। আর শুধু ত্বকই বা কেন, চুলের সমস্যা সমাধান করতেও কিন্তু হলুদের উপকারী ভূমিকা রয়েছে। সুতরাং সমস্যা যাই হোক না কেন, হলুদ যে আপনার কাজে লাগবে, তা বলাই বাহুল্য।

হলুদের উপকারিতাঃ আপনার সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে কীভাবে হলুদ ব্যবহার করবেন বা কোন কোন ক্ষেত্রে কাজে আসতে পারে হলুদ, সে বৃত্তান্তে যাওয়ার আগে হলুদের উপকারী ভূমিকাগুলোয় একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।

হলুদের উপকারীতাঃ হলুদে রয়েছে ক্যালশিয়াম, ভিটামিন বি-৬, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম।
হলুদ ত্বকের অন্যতম প্রধান প্রোটিন কোলাজেন তৈরি করতে সাহায্য করে। ফলে একদিকে যেমন ত্বকের দৃঢ়তা বজায় থাকে, তেমনই অন্যদিকে ত্বকের বিভিন্ন ক্ষত নিরাময়েও সাহায্য করে।

ত্বকের আর্দ্রতা সঠিক রাখতে এবং ত্বককে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করে তুলতেও হলুদের জুড়ি মেলা ভার।
ত্বকে নতুন কোশ সৃষ্টি করতেও হলুদ সাহায্য করে। ফলে ত্বক থাকে যৌবনোচ্ছ্বল।
হলুদে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস ত্বক ভাল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। অ্যাকনে, সোরিয়াসিস, স্ট্রেচমার্ক এবং ত্বকের দাগ-ছোপ দূর করতে হলুদ ভীষণ কার্যকরী।

ত্বকের যত্নে হলুদঃ ত্বকের যাবতীয় সমস্যা দূর করতে চোখ বন্ধ করে হলুদের ওপর ভরসা করতে পারেন। তবে হলুদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে মাথায় রাখবেন যে, হলুদ কিন্তু ত্বকে সাময়িকভাবে হলদে ছোপ রেখে যায়। অবশ্য মানুষভেদে এই হলদেভাবের প্রাবল্য এক-একরকম। আর এতে ত্বকের কোনও ক্ষতিও হয় না। তবে চটজলদি কোথায় বেরনোর থাকলে, হলুদ ব্যবহার করার আগে একটু খেয়াল রাখবেন। কারণ হলুদ ব্যবহার করলে, তা শুকিয়ে যাওয়া অবধি ত্বকে রেখে দিলে সবথেকে ভাল ফল পাওয়া যায়। তাই মুখে ব্যবহারের আগে সামান্য হলুদ হাতে লাগিয়ে দেখতে পারেন ত্বকে কোনও রিঅ্যাকশন হচ্ছে কি না, অথবা কোনও ছোপ পড়ছে কি না। যদি ছোপ পড়ে সেক্ষেত্রে সামান্য স্ক্রাব বা চিনি দিয়ে ওই অংশটি ভালভাবে ঘষে ধুয়ে নিন। দাগ উঠে যাবে।

অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান হিসেবে আদি অনন্তকাল ধরে হলুদ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ছোটখাটো কাঁটা-ছেড়া কিংবা পোড়াদাগে আজও হলুদের প্রলেপ ব্যবহার করা হয়। এতে ইনফেকশনও হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না, আর ক্ষতও তাড়াতাড়ি নিরাময় হয়। ক্ষতের ওপর ১ চা-চামচ হলুদবাটা, ১ চা-চামচ মধু এবং ১ চা-চামচ ঠাণ্ডা দুধ মিশিয়ে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে নিন।

বুড়িয়ে যাওয়া ত্বকের পক্ষেও হলুদ খুব ভাল। ত্বকের দৃঢ়তা বজায় রাখতে, বলিরেখা, ফাইন লাইনস কমাতে হলুদ দারুণ কার্যকরী। হলুদ বাটা বা গুঁড়ো দু’ভাবেই ব্যবহার করে দেখতে পারেন। আধ চা-চামচ হলুদবাটার সঙ্গে ১ চা-চামচ টকদই মিশিয়ে মুখে লাগান। ১৫-২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।

ত্বকের বিভিন্ন দাগ-ছোপ বা স্ট্রেচমার্ক দূর করতেও হলুদের কোনও জবাব নেই। হলুদের কারকিউমিন ত্বকের ভিতরের স্তরে পৌঁছে নতুন কোশ তৈরিতে সাহায্য করে। এতে কমপ্লেকশনেও অনেক পরিবর্তন আসে। তাই তো আজও শুভ অনুষ্ঠানে গায়ে হলুদের রীতি অব্যাহত। সারারাত আমন্ড জলে ভিজিয়ে রাখুন। কয়েকটা খোসা ছাড়ানো আমন্ডের সঙ্গে ১ চা-চামচ হলুদবাটা, ১ চামচ টকদই, ১ চামচ লেবুর রস, ১ চিমটে কেশর (না থাকলেও অসুবিধা নেই) এবং ১ চা-চামচ চন্দনগুঁড়ো মিশিয়ে কৌটোয় ভরে ফ্রিজে রেখে দিন। স্ট্রেচমার্ক বা দাগ-ছোপের ওপর প্রতিদিন রাতে শোওয়ার আগে এই মিশ্রণ লাগান। সকালে ঘষে ধুয়ে ফেলুন।

শীতকাল তো প্রায় এসেই গেল। সঙ্গে শুষ্ক ত্বক, পা ফাঁটা ইত্যাদি শুরু হওয়ার দিনও ঘনিয়ে এল। হলুদ থাকলে আর চিন্তা কী! সমপরিমাণে ক্যাস্টর অয়েল এবং হলুদগুঁড়ো একসঙ্গে মিশিয়ে ফাঁটা গোড়ালিতে লাগিয়ে রাখুন। ১৫ মিনিট পর ঈষদুষ্ণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে শুধু পা ফাঁটার সমস্যাই কমবে না, ত্বকও হয়ে উঠবে কোমল।

অ্যাকনের সমস্যা কমাতে অথবা ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্তভাব কমাতেও হলুদ দারুণ কাজ করে। হলুদের অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ক্ষমতা অ্যাকনের জীবাণু নষ্ট করে ত্বক করে তোলে সুন্দর এবং কোমল। ১ চা-চামচ হলুদবাটার সঙ্গে ১ চামচ ছোলার ডালবাটা (ভিজিয়ে বেটে নিন), ১ টেবলচামচ লেবুর রস এবং অল্প পানি মিশিয়ে অ্যাকনের ওপর লাগিয়ে রাখুন। ছোলার ডালের পরিবর্তে বেসনও ব্যবহার করতে পারেন। শুকিয়ে গেলে ঈষদুষ্ণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে ব্যবহার করতে পারেন হলুদ মেশানো দুধ। অথবা ১ চামচ গোলাপজলের সঙ্গে ১ টেবলচামচ ফ্রেশ ক্রিম এবং ১ চা-চামচ হলুদবাটা মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এতে ত্বক থাকবে আর্দ্র এবং নরম।

শীত হোক বা গ্রীষ্ম—সানট্যানের সমস্যা অবধারিত। আর এক্ষেত্রেও কাজে লাগাতে পারেন হলুদ। ত্বক উজ্জ্বল করতেও হলুদ অব্যর্থ। ৩ চামচ বেসন, ২ চামচ টকদই, ১ চামচ লেবুর রস, ১ চামচ হলুদবাটা এবং আধচামচ যষ্ঠিমধুগুঁড়ো একসঙ্গে মিশিয়ে ট্যান পড়া অংশে লাগান। ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকের নিয়মিত ব্যবহারে ট্যান কমতে বাধ্য। পুরো শরীরেই ব্যবহার করতে পারেন এই প্যাক। ব্যবহারের পর অন্তত ৫ ঘণ্টা ভুলেও সাবান ব্যবহার করবেন না।

মুখের অবাঞ্ছিত লোম দূর করতেও হলুদের ভূমিকা অপরিসীম। আধ চামচ হলুদবাটা, ১ চামচ ময়দা, ১চামচ নারকেল তেল এবং ১ চামচ দুধের সর একসঙ্গে মিশিয়ে ভ্রূ এবং ঠোঁট বাদে পুরো মুখে লাগান। শুকিয়ে গেলে ভালভাবে লোমের গ্রোথের বিপরীতদিকে ঘষুন। এই মিশ্রণে তেল থাকায় সহজেই ফেসপ্যাক উঠে আসবে। পুরো মুখ এভাবে ঘষে পরিষ্কার করবেন। নিয়মিত ব্যবহার করলে দেখবেন ত্বকের লোমও অনেক কমে গেছে। প্যাক ব্যবহারের কয়েকঘণ্টা পর মুখে পানি বা ফেশওয়াশ ব্যবহার করুন।
চটজলদি ত্বকে জেল্লা আনতে অথবা ত্বককে তরতাজা করতে টোনারে হলুদগুঁড়ো মিশিয়ে নিতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন যেন টোনার অনেকক্ষণ ত্বকে না জমে থাকে। তাতে ত্বকে দাগ হতে পারে। মুখে টোনার লাগিয়ে ভালভাবে মাসাজ করে নিন। দেখবেন নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।

চুলের যত্নে হলুদঃ শুনতে একটু অন্যরকম লাগছে? শুধুমাত্র ত্বক ভাল রাখতেই নয়, চুলের সৌন্দর্যেও হলুদের ভূমিকা রয়েছে। হলুদের বিভিন্ন কমপাউন্ড স্ক্যাল্পের নানা সমস্যা প্রতিরোধ করতেও একইরকম উপকারী।

পরীক্ষায় প্রমাণিত যে খুশকির সমস্যা কমাতে হলুদ কার্যকরী। শ্যাম্পু করার আগে সমপরিমাণে অলিভ অয়েল এবং কাঁচা হলুদবাটা একসঙ্গে ভালভাবে মিশিয়ে (চাইলে অলিভ অয়েলের সঙ্গে কাঁচা হলুদ বেটে নিতে পারেন) পুরো স্ক্যাল্পে লাগিয়ে রাখুন। অন্তত ২০-৩০ মিনি রেখে শ্যাম্পু করে নিন।
চুল পড়া আটকাতেও হলুদের জুড়ি মেলা ভার। হলুদের কারকিউমিন স্ক্যাল্পে রক্ত চলাচল সঠিক রাখে যা ফলে চুলের গোড়া শক্ত করতে সাহায্য করে। নারকেল তেলের সঙ্গে হলুদবাটা মিশিয়ে ভালভাবে স্ক্যাল্প মাসাজ করুন। উপকার পাবেন।

পিবিএ/এম আর

আরও পড়ুন...