চোখ ওঠা বা কনজাঙ্কটিভাইটিস হলে কী কী করণীয়

পিবিএ ডেস্কঃ কনজাঙ্কটিভাইটিস বা সাধারণ ভাষায় যাকে বলে চোখ ওঠা, সেটা কিন্তু আমাদের খুবই সমস্যায় ফেলে। এটি যে খুব একটা ক্ষতিকর রোগ তা নয়। এতে চোখ খারাপ হয়ে যাওয়া বা চোখের দৃষ্টি হারিয়ে যাওয়ার সমস্যা হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে না। কিন্তু যখন এটি হয় আমাদের সেই সময়ের জন্য বা সেই দিনগুলোর জন্য খুবই অস্বস্তির মধ্যে পরতে হয়।

ডাক্তারের যথাযথ পরামর্শ তো নিতেই হবে, সঙ্গে নিজেদের মতো করেও খানিক যত্ন নিতে হবে। তাহলেই এই চোখ ওঠা বা কনজাঙ্কটিভাইটিসের থেকে আমরা খানিকটা হলেও আরাম পাব। আসুন দেখে নিই এই রোগ কেন হয় আর হলে ঠিক কী কী করণীয়।

কনজাঙ্কটিভাইটিস কীঃ কনজাঙ্কটিভাইটিস হয়েছে একজনের চোখে

কনজাঙ্কটিভাইটিস বলা যায় চোখের প্রদাহ। আমাদের চোখে যে সাদা অংশ আছে সেই অংশের উপর একটি পাতলা পর্দা আছে। সেই পর্দার বা টিস্যুর নাম কনজাঙ্কটিভা।

এই কনজাঙ্কটিভাই যখন কোনও কারণে আক্রান্ত হয় ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা বা অন্য কোনও কারণে, তখন চোখ লাল হয়ে যায়। একেই আমরা বলি চোখ ওঠা বা কনজাঙ্কটিভাইটিস।

কী কী কারণে হয় কনজাঙ্কটিভাইটিসঃ অনেক রকম কারণেই হতে পারে এই কনজাঙ্কটিভাইটিস। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে তো হতেই পারে এই রোগ। এ ছাড়া ভাইরাসের থেকেও চোখ লাল হয়ে যেতে পারে। কোনও শ্যাম্পু বা তেল আমাদের সহ্য না হলেও কিন্তু চোখ লাল হয়ে গিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। বাইরের ধুলো-ধোয়ার থেকেও এই রোগ হতে পারে। আর চোখে অ্যালার্জি হলেও কিন্তু চোখ লাল হয়ে কনজাঙ্কটিভাইটিসের রূপ নেয়। তবে ব্যাকটেরিয়ার থেকে হওয়ার প্রবণতাই বেশি।

উপসর্গ কী কীঃ কয়েকটি জিনিস বেশ ঘন ঘন হয় যদি আপনার কনজাঙ্কটিভাইটিস হয়ে থাকে।

১. আপনার চোখ খুব লাল হয়ে যাবে আর ফুলে যাবে।

২. চোখ থেকে সাধারণ সময়ের থেকে বেশি পানি পড়বে।

৩. এক ধরণের হলুদ চিটচিটে পদার্থ চোখের পাতায় লেগে থাকবে, যেটা সকালে আপনার চোখ খোলায় সমস্যা তৈরি করবে।

৪. চোখ খুব চুলকাবে।

৫. চোখের দৃষ্টিতে খানিক অস্পষ্টতা আসবে।

কী কী করণীয়ঃ এবার আসা যাক আসল বক্তব্যে, অর্থাৎ কনজাঙ্কটিভাইটিস হলে আপনি ঠিক কি কি করতে পারেন। ডাক্তারের পরামর্শ মতো তো চলতেই হবে, তা ছাড়াও কিছু জিনিস আপনিও করতে পারেন।

চোখ পরিষ্কার রাখুনঃ এই সময়ে চোখ পরিষ্কার রাখা খুবই দরকার। চোখ থেকে বার বার পানি পড়ে, হলুদ এক ধরণের জলীয় পদার্থ বের হয়। সেই সব কিন্তু পরিষ্কার করে ফেলতে হয়। তাই হাতের কাছে পরিষ্কার তোয়ালে সব সময়ে রাখবেন। খুব বেশি নয়, দিনে তিন থেকে চারবার এটি দিয়ে চোখ মুছুন।

লেন্স ব্যবহার করবেন নাঃ আপনি যদি লেন্স ব্যবহার করেন তাহলে এই সময়ে সেটি খুলে রাখুন। ডাক্তার নিশ্চয়ই আপনাকে চোখে কালো চশমা পড়তে বলেছেন। সেটাই করুন আর সমস্যা কমে গেলেও আগের সেই লেন্স আর ব্যবহার না করাই ভালো। এতে আবার ইনফেকশন হতে পারে।

চোখ ধুতে পারেনঃ চোখ এই সময়ে খুবই চুলকায়, মাঝে মাঝে জ্বালা করে। আপনি তাই চোখ পানি দিয়ে ধুতে পারেন। তবে পানি ঠাণ্ডা বা হাল্কা গরম হতে পারে। ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে এটি ব্যবহার করুন। তবে চার থেকে পাঁচ বারের বেশি চোখে পানি দেওয়া ঠিক হবে না। ভুলেও চোখ চুলকাবেন না।

হাত পরিষ্কার রাখুনঃ আমাদের স্বভাবই হল চোখে বার বার হাত দেওয়া। কিন্তু এই সময়ে সেটি করা যাবে না। আমাদের হাত সব সময়ে পরিষ্কার থাকে না। যখনই চোখে হাত দেবেন তখনই হাত পরিষ্কার করে নেবেন। চোখে পানি দেওয়ার সময়েই হোক বা তোয়ালে দিয়ে চোখ মোছা, সব ক্ষেত্রেই এটি আপনাকে করতেই হবে।

বালিশ পরিষ্কার রাখুনঃ আমরা যে বিছানায় রোজ শুই বা যে বালিশে মাথা রাখি তা তো অপরিষ্কার হয়ে যেতেই পারে। আর তার থেকেও তো ইনফেকশন হতে পারে। তাই সব সময়ে আপনার শোয়ার জায়গা, বালিশ খুব পরিষ্কার রাখবেন। পারলে সপ্তাহে এক বার গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করবেন। দিনে দু বার যেন অন্য কেউ বিছানা ঝেড়ে দেয় সেটা দেখবেন।

বাইরে বেশি না যাওয়াই ভালোঃ এই সময়ে বাইরে খুব একটা যাওয়া ঠিক নয়। কারণ বাইরে যাওয়া মানেই ধুলো, ধোয়া এই সবের সংস্পর্শে চোখের আসা যেটা চোখের জন্য এই সময়ে উপকারী নয়। আর রোদের থেকেও অনেক সময়ে চোখ জ্বালা করতে পারে। তাই যত কম বেরোনো যায় ততই ভালো। আর কালো চশমা সব সময়েই পরতে হবে।

পিবিএ/এমআর

আরও পড়ুন...