স্মৃতির টানে ময়মনসিংহে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী

পিবিএ,ময়মনসিংহ: পহেলা বৈশাখে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং স্মৃতির টানে ময়মনসিংহের মমেক নিজের ছাত্রজীবনের ক্যাম্পাস সফর করছেন। ময়মনসিংহে সাত বছর কাটিয়ে ঢাকায় চার বছর এফসিপিএস করে আবারো এখানে এসে মনে হচ্ছে, আমার দ্বিতীয় বাড়িতে এসেছি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

রোববার (১৪ এপ্রিল)বেলা ১১টার দিকে তিনি ময়মনসিংহে অবতরণ করেন। এরপর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ মিলনায়তনে উপস্থিত হন তিনি।

ময়মনসিংহে তিনি তাঁর সাবেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বর্তমান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে। অনুষ্ঠানে ময়মনসিংহে কর্মরত গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মকর্তা ও শহরের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা উপস্থিত রয়েছেন। এ ছাড়া ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে অধ্যয়নকালে লোটে শেরিংয়ের ৭৭ জন সহপাঠীও এই আয়োজনে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

রাষ্ট্রীয় সফরে আসা ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিংয়ের নিরাপত্তায় নেয়া হয়েছে কড়া ব্যবস্থা।

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ আয়োজিত বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার পাশাপাশি নিজের শিক্ষা স্মৃতিবিজড়িত স্থান পরিদর্শন, শিক্ষার্থী ও সহপাঠীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তিনি।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ২৪ ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. টান্ডি দর্জিসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী এ সফরে সাথে রয়েছেন।

এ উপলক্ষে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ক্যাম্পাসকে নতুন আঙ্গিকে সাজানো হয়। তার আগমনকে কেন্দ্র্র করে ক্যাম্পাসে সাজ সাজ রব, উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থী ও সহপাঠীরাও। গত কয়েকদিন দিনরাত সংস্কার ও সাজসজ্জার কাজ সম্পন্ন করে নিরাপত্তাসহ সব প্রস্তুতি গ্রহণ করে স্থানীয় প্রশাসন।

ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ২৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে এসে বিদেশি কোটায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হন। ১৯৯৯ সালে এমবিবিএস পাস করে ঢাকায় সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়ে এফসিপিএস কোর্স সম্পন্ন করেন।

এদিকে ডা. লোটে শেরিংয়ের সহপাঠী ডা. শফিকুল বারী তুহিন জানান, লোটে শেরিং ১৯৯১ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে এমবিবিএসে ভর্তির পর বাঘমারা মেডিকেল হোস্টেলে থাকতেন। তিনি খুবই মেধাবী ও ভদ্র। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি খুবই বন্ধুভৎসল ছিলেন। কথা বলতেন খুব কম। টেবিল টেনিস ও ক্যারাম খেলা পছন্দ করতেন। পহেলা বৈশাখে লোটে শেরিং ময়মনসিংহেই থাকতেন এবং তাকে নিয়ে মেলায় ঘুরতে যেতেন।

আরেক সহপাঠী ডা. এ এইচ এম রুহুল কুদ্দুস বলেন, আমরা শিহরিত এ জন্য যে আমাদের সহপাঠী শিক্ষার্থী ভুটানের প্রধানমন্ত্রী। বন্ধু হিসেবে এমন একটি দিনে তাকে বরণ করতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত।

তিনি আরো বলেন, জীবনে বহুবার শুনেছি অক্সফোর্ড থেকে অমুক দেশের প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। এখন তো আমরাও গর্বেে সঙ্গে বলতে পারব যে, ময়মনসিংহ মেডিকেলের একজন ছাত্র ভুটানের প্রধানমন্ত্রী আর তিনি আমাদের সহপাঠী ছিলেন। অথচ তাকে দেখে কখনো ভাবিনি, তিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন। অবশ্য তাকে নিয়ে আমাদের অনেক স্মৃতি রয়েছে। পিকনিক করতে গিয়ে লাকড়ি কুড়িয়েছেন। সেই ছবি আমাদের সঙ্গে আছে। হয়তো সেই সব স্মৃতিরোমন্থন করতে আজ এখানে আসলেন।

প্রফেসর ডা. খাদেমুল ইসলামের অধীনে জেনারেল সার্জারি বিষয়ে ৬ মাস ইন্টার্নশিপ করেছেন লোটে শেরিং। এরপর ঢাকায় সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়ে এফসিপিএস কোর্স সমাপ্ত করেন। ডা. লোটে শেরিং ভুটানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় গর্ববোধ করেছেন প্রফেসর ডা. খাদেমুল ইসলাম।

মেডিকেলের বর্তমান শিক্ষার্থী নুসরাত বিনতে নদীয়া বলেন, এ কলেজের একজন বড় ভাই যিনি বর্তমানে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী। তিনি আমাদের কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি সেই কলেজকে ভুলে যাননি। আমরা তাকে স্বাগত জানাচ্ছি।

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, উনি যে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে কত ভালোবাসেন তার আগমনই বড় প্রমাণ।

অপর এক শিক্ষার্থী বলেন, এটা আমাদের জন্য অবশ্যই গর্বের। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং আমাদের সবার গর্ব, বাংলাদেশের গর্ব।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে এসে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে কলেজে আসেন। এ উপলক্ষ্যে অডিটরিয়ামে অতিথি, ছাত্র ও শিক্ষকদের উদ্দেশে বক্তব্য রেখে আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করেন।

তিনি আরও জানান, ছাত্রজীবনে যাদের সঙ্গে লেখাপড়া করেছেন, তাদের সঙ্গে একান্তে বসার পাশাপাশি শিক্ষাজীবনের প্রথম ক্লাস থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত যেসব স্থানে, যেমন গ্যালারি, ছাত্রাবাস, ছাত্র ক্যানটিন, ডক্টরস ক্যান্টিন ও শেষ কর্মজীবন ৬নং ওয়ার্ড পরিদর্শন করবেন।

ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিংয়ের সফর উপলক্ষে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছিলো।

ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার (এসপি) শাহ আবিদ হোসেন জানান, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিংয়ের আগমন কেন্দ্র করে নিম্চিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়েছিলো।

উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে এসে বিদেশি কোটায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস ২৮তম ব্যাচে ভর্তি হন এবং ১৯৯৯ সালে এমবিবিএস পাস করে ঢাকায় সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এফসিপিএস কোর্স সমাপ্ত করেন। ২০১৩ সালে তিনি সিভিল সার্ভিস থেকে অব্যাহতি নিয়ে রাজনীতিতে যোগদান করেন। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ভুটানে অনুষ্ঠিত প্রথম দফা নির্বাচনে তার রাজনৈতিক দল ডিএনটি জয়লাভ করে। তিনি ২০০৩ সালে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার ১৫ বছর পর ২০১৮ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশি অ্যালামনাই ডা. লোটে শেরিং ভুটানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।

চার দিনের সরকারি সফরে শুক্রবার সকালে বাংলাদেশে এসেছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং।

পিবিএ/জেআই

আরও পড়ুন...