পিবিএ,ফেনী: ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রুহুল আমিনসহ আরো ১২ জন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত বলে আদালতকে জানিয়েছে আসামি শাহাদাত শামীম ও নূর উদ্দিন। রবিবার (১৪ এপ্রিল) আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জড়িতদের নামও উল্লেখ করেছে ঐ দুই আসামী। এর মধ্যে সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিনের নামও রয়েছে। বাকিদের বেশিরভাগই ওই মাদ্রাসার আলিম ও ফাজিল শ্রেণির শিক্ষার্থী।
রবিবার দীর্ঘ ৯ ঘণ্টা ধরে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইন আসামি নূরউদ্দিন ও শামীমের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে নূরউদ্দিন ও শামীম পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে।
তারা জানায়, যৌন হয়রানির মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলা গ্রেফতার হওয়ার পর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনের নির্দেশে নুর উদ্দিন ও শাহদাত হোসেন শামীম অধ্যক্ষের মুক্তির জন্য আন্দোলনে নামে। এজন্য সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর মুকছুদ আলম তাদের ১০ হাজার টাকাও দিয়েছিল। অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলা নানা প্রলোভনে ফেলে ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করতো বলেও জানায় নুর উদ্দিন।
এর আগে ঢাকায় পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) সদর দফতরে এজাহারভুক্ত আসামিসহ মোট ১৩ জন হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন পর্যায়ে জড়িত বলে জানান পুলিশের এই ইউনিটের প্রধান বনজ কুমার মজুমদার।
পিবিআইয়ের ফেনীর দায়িত্বরত কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান রাতে জানান, ‘স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে নূরউদ্দিন ও শাহদাত হোসেন শামীম অনেক তথ্য দিয়েছে। তারা হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে। অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার নির্দেশে তারা কীভাবে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল এবং তা বাস্তবায়নের জন্য কীভাবে কী করে তা বিস্তারিত বলেছে।’
পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘নূরউদ্দিন ও শাহদাত হোসেন শামীম আরও কিছু নাম বলেছে। আমরা তদন্তের স্বার্থে তা প্রকাশ করছি না। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে বাকিদেরও গ্রেফতার করা হবে।’
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে শাহাদাত হোসেন শামীম জানায়, নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর সে দৌড়ে নিচে নেমে উত্তর দিকের প্রাচীর টপকে বের হয়ে যায়। বাইরে গিয়ে সে রুহুল আমিনকে ফোনে বিষয়টি জানায়। রুহুল আমিন বলে, আমি জানি। তোমরা চলে যাও।
শাহদাত হোসেন শামীম বলেছে, নুসরাতের দায়ের করা মামলার পর রুহুল আমিন থানা ম্যানেজ করার দায়িত্ব নিয়েছিল।
নুসরাতের প্রতি নিজের ক্ষোভ থাকার কথা উল্লেখ করে শাহদাত হোসেন শামীম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছে, দেড় মাস আগেও সে নুসরাতকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু নুসরাত তা প্রত্যাখ্যান করার পাশাপাশি অপমানও করে। এ কারণে সে নিজেও নুসরাতের প্রতি ক্ষুব্ধ ছিল। যার ফলে অধ্যক্ষ সিরাজের নির্দেশে অন্যদের সঙ্গে নিয়ে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়।
আরেক আসামি নূরউদ্দিন জানিয়েছে, তার সঙ্গে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার ভালো সম্পর্ক ছিল। এ কারণে তার নির্দেশে তারা পরিকল্পনা করে নুসরাতকে পুড়িয়ে মারার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে ঘটনার সময় সে ভবনের নিচে ছিল। আর পরিকল্পনা অনুযায়ী উম্মে সুলতানা পপি গিয়ে নুসরাতকে ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে যায়। ওই সময় ছাদে কামরুন নাহার মণি ছিল।
নূরউদ্দিন জানিয়েছে, অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলা নানা সময়ে ছাত্রীদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে তাদের যৌন হয়রানি করতো।
পিবিএ/এএইচ