জেনে নিন মস্তিষ্কের, সুস্থথায় করণীয়

পিবিএ ডেস্কঃ অনেকে এমন কথা বলেন যে আমরা যে শাক-সবজি খাই, তাদের মধ্যে যাদের আকার আমাদের শরীরের কোনও অঙ্গের মতো সেটা নাকি সেই অঙ্গের জন্য বেশি ভালো। আজ আমরা এমন কিছু সবজির এবং অন্যান্য খাবারের কথা বলবো যেগুলো আমাদের মস্তিষ্ককে সজাগ রাখতে ও মস্তিষ্কের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। আর সেগুলোর সঙ্গে আমাদের মস্তিষ্কের আকারের অদ্ভুত মিল রয়েছে। আসুন দেখে সেই খাবারগুলো কী কী।

কী সেই খাবারঃ ১. ওয়ালনাট, ২. আমন্ড, ৩. চিনাবাদাম, ৪. হোল গ্রেইন্স বা গোটা শস্য, ৫. পাতাওয়ালা সবজি, ৬. ফুলকপি বা বাঁধাকপি, ৭. বিন, ৮. অ্যাভোকাডো, ৯. বেরি, ১০. ডালিম, ১১. মাছ, ১২. মাংস, ১৩. গ্রিন টি, ১৪. কফি, ১৫. চকোলেট।

ওয়ালনাটঃ ওয়ালনাটে আছে সমৃদ্ধ পলিয়ানসেচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড আর পলিফেনোলিক উপাদান। এগুলো থাকার ফলে মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতিগ্রস্থ হয় না। মস্তিষ্কের কোষের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে না। আর মাথায় রক্ত চলাচল আরও ভালো হয়।

আমন্ডঃ আমন্ড অত্যন্ত দরকারী আমাদের মস্তিষ্কের জন্য। আমন্ডে আছে ভিটামিন ৬, ওমেগা ৬ ফ্যাটি অ্যাসিড আর ফোলেট। ফোলেট মাথায় সালফারের ভারসাম্য বজায় রাখে। সালফারের ভারসাম্য ঠিক না থাকলে হোমোসিস্টেইন হতে পারে যার ফলে মাথায় রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। স্মৃতিশক্তি বজায় রাখতেও আমন্ড সাহায্য করে। তাই বুঝতেই পারছেন কতটা উপকারী আমন্ড।

চিনাবাদামঃ চিনাবাদামে আছে নিয়াসিন আর ফোলেট। এছাড়া চিনাবাদাম ভিটামিন ই এর একটি সমৃদ্ধ উৎস। এগুলো অ্যালজাইমা কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি চিনাবাদামে রেসভেরাট্রল নামে পলিফেনোলিক উপাদান থাকে এই উপাদান মস্তিষ্কের এনার্জি বর্ধক কোষগুলির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে। তাই নিউরোডিজেনারেটিভ আর নিউরোইনফ্ল্যামেটরি রোগ কম হয়।

হোল গ্রেইনঃ এটি হল আমাদের মস্তিষ্কের শক্তি বাড়ানোর জন্য প্রধান খাদ্য। হোল গ্রেইনের মধ্যে আছে ওটমিল, বার্লি, মুয়েসলি এইসব। হোল গ্রেইনে আছে ফাইবার, ভিটামিন বি, ই আর প্রয়োজনীয় মিনারেলস। ফাইবার মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বজায় রাখে। অক্সিজেনের ভারসাম্যও বজায় রাখে। এর ফলে ব্রেন স্ট্রোকের মতো গুরুতর সমস্যা হওয়া বন্ধ হয়।

পাতাওয়ালা সবজিঃ স্পিনাচ বা পুঁই শাকের মতো শাকে থাকে ফোলেট, ফাইলোকুইনন, নাইট্রেট, লুটেইনের মতো উপাদান। এর পাশাপাশি এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম। এই উপাদানগুলো মস্তিষ্কের কোষ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা নেয়।

ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রোকোলিঃ ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রোকোলির মতো সবজিতে থাকে সালফোরাফাইন নামের এক উপাদান। এই উপাদানটি মস্তিষ্ককে সুরক্ষিত রাখে। খুব সহজে ব্রেন স্ট্রোক হতে পারে না। পাশাপাশি অ্যালজাইমাও হতে দেয় না। এর সঙ্গে ফাইটোকেমিক্যাল আর মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস মাথার স্ট্রেস কমাতে বেশ কার্যকরী। মাইটোকনড্রিয়াল কার্যকারিতাও সচল রাখে।

বিনসঃ বিনস হল আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফোলেট, থাইমিনের সরাসরি উৎস। বিনে আছে অ্যামাইনো অ্যাসিড আর প্রোটিন। এছাড়াও এতে আছে ফ্লেভোনল, যার মধ্যে আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান। এটাও আমাদের মস্তিষ্কের জন্য খুবই কার্যকরী।

অ্যাভোকাডোঃ এটি হল মোনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, ফাইবার, লুটেইন এর মতো উপাদানে সমৃদ্ধ। এই উপাদানগুল মস্তিষ্কের নানা স্তরে গিয়ে মস্তিষ্ককে সজাগ রাখে। গবেষণা বলছে, অ্যাভোকাডো মস্তিষ্কের মাইটোকনড্রিয়াল ফাংশনকে ত্বরান্বিত করে। ফ্রি র্যা ডিকেলের হাত থেকে মস্তিষ্ককে রক্ষা করে।

বেরিঃ ব্ল্যাকবেরি, ব্লুবেরি, রাস্পবেরি, আরও কত রকমের বেরিই না আছে। আর সেগুলো খেতেও তো আমাদের বেশ ভালো লাগেই। কিন্তু জানেন কী বেরি আমাদের মস্তিষ্কের জন্য কত উপকারী? এতে থাকা এলিজিক অ্যাসিড, ক্লোরজেনিক অ্যাসিড, গ্যালিক অ্যাসিড কোয়ারসেটিন, স্যালিসিক অ্যাসিডের মধ্যে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আর অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান আছে। এগুলো ফ্রি র্যা ডিকেল থেকে আমাদের মস্তিষ্ককে বাঁচিয়ে রাখে। শিশুদের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের কোষ গঠনের সময় এগুলো কিন্তু খুবই কাজে আসে। এছাড়াও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে ও ডিপ্রেশন কমাতে খুব উপকারী বেরি। বয়সজনিত কারণে হওয়া মস্তিষ্কের সমস্যা থেকে রক্ষা করে বেরিতে থাকা ভিটামিন ই।

ডালিমঃ ডালিমে থাকা ফ্ল্যাভোনোয়েড ফ্রি র্যাষডিকেল দূরে রাখে। মস্তিষ্কের স্ট্রেসও কমায়। মস্তিষ্কে প্রোটিন কারবোনাইলেশনের মাত্রা ৪০% থেকে ৭০% কমায়। আর এর মধ্যে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান নার্ভাস সিস্টেমকে শক্তিশালী করে।

সামুদ্রিক মাছঃ মাছে আছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন ডি আর বি২, ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক, আয়রন। এসেনশিয়াল ফ্যাটি অ্যাসিড, ইপিএ, ডিএইচএ এই সব উপাদান পাওয়া যায় সামন, ম্যাকরেল, সারডিনের মতো মাছের মধ্যে। এই ফ্যাটি অ্যাসিড শিশুদের নার্ভাস সিস্টেম ঠিক রাখতে সাহায্য করে। অ্যালজাইমা, ডিপ্রেশন কমায়।

মাংসঃ মাংসে থাকা আলফা লাইপোক অ্যাসিড স্মরণশক্তি বজায় রাখে খুব সুন্দর ভাবে। অন্যান্য ভিটামিন, মিনারেল, ভিটামিন বি৩, এ এই সবই অ্যালজাইমা দূর করে আর এনার্জি ধরে রাখে। ভিটামিন বি৩ মস্তিষ্কে ইলেকট্রন সরবরাহের পথ সুগম করে। তাই এটা কতটা উপকারী বুঝতেই পারছেন।

গ্রিন টিঃ গ্রিন টিতে থাকা পলিফেনলস নিউরোডিজেনারেটিভ ডিসঅর্ডার থেকে মস্তিষ্ককে রক্ষা করে। মাথার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল ডরসোল্যাটারাল প্রিফ্রন্টাল করটেক্স। দেখা গেছে, গ্রিন টির মধ্যে থাকা কিছু উপাদান এই অংশকে শক্তিশালী করে। মস্তিষ্কের কোষ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। অ্যামিলয়েড প্লেক্স হতে দেয় না যা অ্যালজাইমার অন্যতম কারণ। এতে থাকা ক্যাফেইন আরেকটি সাহায্যকারী উপাদান।

কফিঃ কফিতে থাকা ক্যাফেইন নিউরোডিজেনারেশনের হাত থেকে মস্তিষ্ককে রক্ষা করে। এটি স্মৃতিভ্রংশজনিত রোগ আর অ্যালজাইমা থেকেও রক্ষা করে। এগুলো হওয়ার সম্ভাবনা ৬৭% কমে যায়। কিন্তু মনে রাখতে হবে, খুব বেশি পরিমাণে কফি কিন্তু খাওয়া যাবে না।

চকোলেটঃ চকোলেট খেতে তো আমরা সবাই ভালোবাসি। কিন্তু জানেন কী, এই চকোলেট আমাদের মস্তিষ্কের জন্যও কতটা ভালো? চকোলেট মস্তিষ্কের কিছু নিউরোট্রান্সমিটারকে নিয়ন্ত্রণে রাখে, যেমন সেরাটনিন, এনডোরফিনস, ডোপামাইন। আর এই উপাদানগুলি আমাদের মুড নিয়ন্ত্রণ করে। কফিতে থাকা ফ্লেভোনয়েড নিউরনকে উদ্দীপিত রাখে। মাথার মধ্যে রক্ত সঞ্চালন ভালো রাখে। তবে মনে রাখতে হবে, এক্ষেত্রে ডার্ক চকোলেটই বেশি উপকারী।

পিবিএ/এমআর

আরও পড়ুন...