পিবিএ,নোয়াখালী: মাদকের ভয়াবহতা, অপ-সংস্কৃতি, রাজনৈতিক দৃর্বৃত্তায়ন, অবৈধ ভাবে অবাধে যৌন উত্তেজক ঔষধ বিক্রি, সামাজিক অবক্ষয়সহ নানা কারনে নোয়াখালীতে ধর্ষন, গণধর্ষন , ইভটিজিংসহ নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে। গত ৪ মাসে জেলার বিভিন্ন স্থানে একাধিক গণধর্ষনের ঘটনা ঘটে। ধর্ষনের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেনা শিশু ও বয়ষ্ক নারীসহ স্কুল-কলেজ পড়–য়া ছাত্রীরাও।
এছাড়াও জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশে, শহর, বন্দরসহ মফস্বলের হাট বাজারে রাজনীতির ছত্রছায়ায় বখাটেদের অবাধে চলাফেরার কারনে প্রায়ই ইভটিজিং সহ অপহরনের শিকার হচ্ছে স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থী ও নারীরা। অহরহ এধরনের ঘটনা ঘটলেও বিভিন্ন কারনে অধিকাংশ ঘটনা ধামাচাপা পড়ে যায়। বিশেষ করে জেলায় ধারাবাহিক ধর্ষন ও গণধর্ষনের ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে সচেতনমহল আর বেকায়দায় রয়েছে প্রশাসন।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ধর্ষন রোধে বিশেষ আইনশৃংখলা সভাসহ বিভিন্ন প্রদক্ষেপ নেয়া হলেও ধর্ষনের ঘটনা রোধ করা যাচ্ছেনা। ফলে বিশ^ব্যাপী ইমেজ সংকটে পড়েছে এক সময়ের শান্তিময় ও সম্বৃদ্ধির জনপদ নোয়াখালী। মাদকের ভয়াবহতা, অপ-সংস্কৃতি, রাজনৈতিক দূর্বৃত্তায়ন, সামাজিক অবক্ষয় রোধ ও অবৈধ যৌন উত্তেজক ঔষধ বিক্রি বন্ধ করা গেলে নারী প্রতি সহিংসতা কমবে বলে মনে করছেন জেলার সচেতন মহল ও সুশিল সমাজ।
বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, জেলা পুলিশ ও ভূক্তভোগীদের সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবলী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে স্বামীকে মারধর করে সন্তানসহ ঘরের মধ্যে বেঁধে রেখে ৪ সন্তানের জননীকে (৪০) গণধর্ষণ করে একদল দূর্বৃত্ত। এ ঘটনায় পুলিশ অন্তত ৭ জনকে গ্রেফতার করে।
সুবর্ণচর উপজেলায় গণধর্ষণের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ১৯ জানুয়ারী কবিরহাট উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের নবগ্রামে তিন সন্তানের জননীকে(৩৮) গণধর্ষণের অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় পুলিশ ৫ জনকে গ্রেফতার করে। গত ২৭ জানুয়ারী দিনগত রাতে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সিরাজপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদ নগর গ্রামের একটি বাসা থেকে এক কিশোরীকে(১৬) ঘর থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষনের চেষ্টার অভিযোগ উঠে।
এ ঘটনায় পুলিশ ধর্ষনের চেষ্টাকারী আলমগীর হোসেন (২৯), চরফকিরা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের রশিদের বাড়ির সাহাব উদ্দিন বাহার (৩০) ও তাদের সহযোগী শিরিন আক্তার পাখিকে (২৫) গ্রেফতার করে।
গত ২ ফেব্রুয়ারী সুবর্ণচর উপজেলার পূর্বচরবাটা ইউনিয়নের দক্ষিণ চরমজিদ গ্রামের ৬ষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে (১৩) গণধর্ষণের অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় এক অটোরিকশা চালক ও তার সহকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গত ৮ ফেব্রুয়ারী কবিরহাট উপজেলার ধানশালিক ইউনিয়নের চরগুল্লাখারী গ্রামের এক গৃহবধূকে (৩২) ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে তার স্বামীর বন্ধুর বিরুদ্ধে। ওই গৃহবধূর ছোড়া মরিচের গুঁড়া ও দা’য়ের কোপে আহত হয় অভিযুক্ত মানিক (৩৮)। পরে পুলিশ হাসপাতাল থেকে তাকে গ্রেফতার করে। গত ১ মার্চ চাটখিল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে আসা অসুস্থ এক রোগীকে(২৮) ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আনোয়ার হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গত ২ মার্চ সুবর্ণচর উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের চরমাকসুদ গ্রামে স্থানীয় নির্বাচনে দ্বন্ধের জেরে ধর্ষণের শিকার এক গৃহবধূ(২৫) বিষপানে আত্মহত্যা করে। গত ১ এপ্রিল সুবর্ণচর উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোটকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের লোকজন ছয় সন্তানের জননীকে(৫৫) গণধর্ষণ করে বলে অভিযোগ উঠে।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার উত্তর বাগ্না গ্রামে জাতীয় নির্বাচনে গণধর্ষণ মামলার মূল আসামি সেই রুহুল আমিনের কলা বাগানে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ ৬ জনকে গ্রেফতার করে। গত ৬ এপ্রিল সেনবাগ উপজেলার ছাতারপাইয়া ইউনিয়নের বসন্তপুর বাজারে নয় বছরের শিশুকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় জড়িত সিএনজি চালক রাজনকে (২৫) গ্রেফতার করে পুলিশ।
গত ১২ এপ্রিল সোনাইমুড়ী উপজেলার বারগাঁও ইউনিয়নের দক্ষিণ বারগাঁও গ্রামে দুই সন্তানের জননী এক গৃহবধূকে(৪০) আটকে রেখে রাতভর গণধর্ষণের অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় পুলিশ দুইজনকে গ্রেফতার করে। গত ১৪ এপ্রিল চাটখিল উপজেলার পাঁচগাও ইউনিয়নের নিরবর গ্রামের নিজের মেয়েকে(১৫) ধর্ষনের অভিযোগে পিতা শহিদ উল্যাহকে (৪০) গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় এলাকায় বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়াও নোয়াখালী সাইন্স এন্ড কমার্স স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. আফতাব উদ্দিন কর্তৃক চাকুরী প্রার্থী এক কলেজ ছাত্রীকে যৌন নিপিড়ন ও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে বখাটে কর্তৃক যৌন হয়রানির ঘটনায় জেলাব্যাপী তোলপাড় চলছে।
নোয়াখালী পুলিশ সুপার ইলিয়াছ শরীফ জানান, ধর্ষনের ঘটনাসহ প্রতিটি সহিংসতার ঘটনাই আমরা গুরুত্বসহকারে তদন্ত করি। গণধর্ষন, ধর্ষন বা নারী নির্যাতনের ঘটনায় পুলিশ অধিকাংশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।
এ ধরণের অপরাধ রোধে জেলা প্রশাসনের সাথে পুলিশ প্রশাসন একভূত ভাবে কাজ করছে।
এ ব্যাপারে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস বলেন, সামাজিক অস্থিতরা থেকে অপরাধ প্রবনতা বাড়ে। আমরা সমাজের শৃংখলা রক্ষার চেষ্টা করছি। বিভিন্ন উপজেলায় গিয়ে বিশেষ আইনশৃংখলা সভা করছি। এর পরও কিছু ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। গণধর্ষনের ঘটনাগুলোর রহস্য উদঘাটনে পুলিশ প্রশাসন কাজ করছে। আমরা তাদের সর্বত্মক সহযোগীতা করছি। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে তিনি সকলের সহযোগীতা কামনা করেন।
পিবিএ/ইএনই/আরআই