পিবিএ,ফেনী: ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডের পরও সবকিছু চলছিল পরিকল্পনা মতই।জীবন্ত একটা মানুষকে হাত-পা বেঁধে তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত এক লিটার কেরোসিন তেল ঢেলে তারপর আগুন দেয়ার মত পৈশাচিক বর্বরতার পরও তারা এই হত্যার নির্দেশদাতা গ্রেপ্তারকৃত মাদরাসার প্রিন্সিপালের মুক্তির দাবীতে মিছিল করা থেকে শুরু করে থানার ওসিকে ম্যানেজ করা, এলাকায় দাপট দেখানো সবকিছুই চলছিল আগের মতই।মনে হচ্ছিল, একটা মেয়েকে পুড়িয়ে মারা, এ আর তেমনকি।
কিন্তু অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর কড়া নির্দেশের পর অনেকেরই গণেশ উল্টে যায়।পৌর কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাকসুদুল আলমও তাদের অন্যতম। একসময় ছিলেন টোকাই। পরে বাজারে আলুর ব্যবসাও করেছেন।সর্বশেষ রাজনীতিতে নেমেই তার কপাল খুলে যায়।ক্ষমতার ছত্রছায়ায় ভূমি দখল ও ইয়াবা ব্যবসাসহ অন্যান্য অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে রাতারাতি কোটিপতি বনে যান মাকসুদুল।
স্থানীয়রা জানান, ২০১৭ সালের ২০ মার্চ অনুষ্ঠিত সোনাগাজী পৌরসভা নির্বাচনে প্রভাব খাটিয়ে ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন মাকসুদুল। এরপর থেকেই তিনি পৌর এলাকায় একের পর এক জায়গা দখল করতে থাকেন। স্থানীয়ভাবে পরিচিতি পান ‘ভূমিখেকো’ হিসেবে। এসব অপকর্মে তার নিত্যসঙ্গী ভাই হেলাল ও সবুজ। এতদিন তিন ভাইয়ের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে এলাকার মানুষ মুখ খুলতে সাহস পায়নি।
নুসরাত হত্যা মামলায় মাকসুদুল ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার ব্যাপারে নানা তথ্য বেরিয়ে আসছে। সোনাগাজী বাজারের ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন কাঞ্চন বলেন, এক সময় মাকসুদুল বাজারে টোকাইয়ের কাজ করতেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সোনাগাজী মেইন রোডের পশ্চিমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মালিকানাধীন একটি জায়গা ইজারাদার নুরুল করিম শিল্পীর কাছ থেকে দখল করে নিয়েছেন মাকসুদুল। তিনি ২০১৭ সালে ২৫ সেপ্টেম্বর শিল্পী স্টিল করপোরেশনের জায়গাটি দখলের পাশাপাশি ১৫ লাখ টাকা মূল্যের মালামাল লুট করে নেন।
এ ঘটনায় নুরুল করিম শিল্পী মামলা করেন। কিন্তু মাকসুদুলদের ক্ষমতার দাপট আর অব্যাহত হুমকির কারণে তাকে সোনাগাজী ছেড়ে পালাতে হয়। পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মামলাটি তদন্ত শেষে মাকসুদুল ও তার সহযোগী আবুল কালাম ভোলাকে অভিযুক্ত করে ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়।
আরও জানা যায়, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার পাশে আবদুর রবের জায়গা দখলের পাশাপাশি চরগণেশ মান্ডব বাড়িতে জায়গা দখল করে ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেছেন মাকসুদুল। সেই সাথে সোনাগাজী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় প্রবাসী আবু সুফিয়ানের স্ত্রী শাহানা আক্তারের জায়গাও দখল করেছেন তিনি। এছাড়া প্রবাসী আবু তাহেরসহ অনেকের সম্পত্তি দলীয় প্রভাব খাটিয়ে দখল করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে এ কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে।
আবু সুফিয়ান বলেন, তিনি মামলা করতে চাইলে সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন তাকে মাকসুদুলের সাথে সমঝোতায় যাওয়ার কথা বলে মামলা নেননি।
সবশেষ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা ও মাদরাসার ঠিকাদারি পাওয়ার আশায় অধ্যক্ষের অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন মাকসুদুল। অধ্যক্ষের নির্দেশে মাদরাসাছাত্রী নুসরাতকে হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. রুহুল আমিন ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মাকসুদুলকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে, যদিও রুহুল আমীনের বিরুদ্ধেও নুসরাত হত্যায় ইন্ধন দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। ১৫ এপ্রিল আদালত নুসরাত হত্যা মামলায় তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
তথ্য সূত্র: ইউএনবি
পিবিএ/এএইচ
