কোন অপশক্তি রামুর সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে পারবেনা

পিবিএ, রামু,কক্সবাজার: গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল বলেছেন,হাজার বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষ সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বসবাস করে আসছে। দেশে কক্সবাজার- রামু সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত। মাঝে মাঝে কিছু দুষ্কৃতকারী সম্প্রীতি বিনষ্ট করার অপচেষ্টা করে, তাদের চিহ্নিত করে সামাজিক ভাবে বয়কট করতে হবে। তিনি বলেন, কোন অপশক্তিকে রামুর সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে দেয়া হবেনা। এমপি কমল বিহারের উন্নয়নে অনুদান প্রদানের ঘোষনা দেন।
রামু উপজেলার উত্তর মিঠাছড়ি প্রজ্ঞামিত্র বনবিহারে অনুষ্ঠিত ৩৪ তম স্বর্গপূরী উৎসব ও বৌদ্ধ মহাসম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) দিন ব্যাপী পুণ্যানুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক একুশে পদকে ভুষিত, বাংলাদেশের বৌদ্ধদের মান্যবর উপ-সংঘরাজ, রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারের অধ্যক্ষ পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের।
এতে প্রধান ধর্মদেশক ছিলেন- চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার সুচিয়া সুখানন্দ বৌদ্ধ. বিহারের অধ্যক্ষ অতুলানন্দ মহাথের। বিশেষ ধর্মদেশক ছিলেন রাঙ্গুনীয়া ঘাটচেক বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ বিজয় রক্ষিত মহাথের, উখিয়া বৌদ্ধ ভিক্ষু সমিতির সভাপতি ধর্মপাল মহাথের, চন্দনাইশের শীলরক্ষিত মহাথের, চকরিয়া মানিকপুর নব বিজয়া বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ এম প্রজ্ঞামিত্র ভিক্ষু।
বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদ সভাপতি প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আয়োজনে ধর্মদেশনা করেন -উত্তর মিঠাছড়ি বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র ও একশ ফুট সিংহশয্যা গৌতম বুদ্ধ মুর্তির প্রতিষ্ঠাতা করুনাশ্রী থের, প্রজ্ঞাবোধি থের প্রমুখ ভিক্ষু সংঘ।

স্বর্গপূরী উৎসব ও বৌদ্ধ মহাসম্মেলন উদযাপন পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা, প্রজ্ঞামিত্র বনবিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত সারমিত্র মহাথের স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে বিহার অধ্যক্ষ ভদন্ত সারমিত্র মহাথেরকে আজীবন অধ্যক্ষ ও বড়ুয়া পাড়ার সমাজপতি বাবুল বড়ুয়াকে সম্মাননা স্বারক ও ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে বরণ করা হয়।
এ উপলক্ষে উদযাপন পরিষদের গৃহিত কর্মসূচীর মধ্যে ছিল ভোরে প্রভাত ফেরিসহকারে বুদ্ধপুজা, সকালে অষ্টপরিস্কারসহ মহাসংঘদান, মহতী ধর্মসভা, প্রয়াত প্রজ্ঞামিত্র মহাথের’র প্রতিবিম্ব উদ্বোধন ও উৎসর্গ, ভিক্ষু সংঘের পিন্ডদান, অতিথি ভোজন, দুপুরে স্বর্গপুরী উদ্বোধন, বিকালে স্বর্গপূরী মেলা, ধর্মালোচনা সভা, সন্ধ্যায় স্বর্গপূরী উৎসর্গ ও প্রয়াত ধর্মগুরু প্রজ্ঞামিত্র মহাথের’র নির্বাণ সুখ কামনা ও বাংলাদেশসহ বিশ্বশান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনা। রাতে অনুষ্ঠিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

স্বর্গপূরী উৎসব ও বৌদ্ধ মহাসম্মেলন উদযাপন পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা, প্রজ্ঞামিত্র বনবিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত সারমিত্র মহাথের জানান- স্বর্গপুরী উৎসব এটি কালে সংস্কৃতির একটি সমৃদ্ধ অংশে পরিণত হয়েছে। এই উৎসবের মাধ্যমে মানুষকে মূলত জীবদ্দশায় মানুষ যে কর্ম করে সেই কর্ম অনুযায়ী বিভিন্ন কুলে তার জন্মান্তর ঘটতে পারে এমন ধারণা দেওয়া হয়। সংসারে মানুষ জন্ম-মৃত্যুর গোলকধাধাঁয় পড়ে ভবচক্রে ঘুরতে ঘুরতে কখনো স্বর্গও লাভ করতে পারে। কিন্তু সেখান থেকেও নির্দিষ্ট একটা সময়ের পরে তাকে চ্যুত হতে হয়। নিজ নিজ কর্মগুণে বা কর্মদোষে মানুষ বিভিন্ন কুলে জন্ম গ্রহণ করছে এমন বৌদ্ধিক ধারণা থেকেই বিগত ৩৪ বছর পূর্বে বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু প্রয়াত প্রজ্ঞামিত্র মহাথের উক্ত স্বর্গপুরী উৎসবের সূচনা করে ছিলেন। সে থেকে আজ পর্যন্ত বাংলা নববর্ষে বৈশাখের প্রথম সপ্তাহের শুক্রবার এ স্বর্গপূরী উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। উৎসবে বৌদ্ধদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের অংশগ্রহন স্বর্গপূরী উৎসব এবছরও সম্প্রীতির মহামিলন মেলায় পরিনত হয়েছে। তিনি জানান, বন বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত প্রজ্ঞামিত্র মহাথের ২০০৭ সালে প্রয়ানের পর উত্তর মিঠাছড়িবাসির সার্বিক সহযোগীতায় এ মহতী উৎসবের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে।

আয়োজকরা জানান, প্রতিবছর রামু-কক্সবাজার ছাড়াও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা, আলীকদম ও সূদুর রাঙামাটি থেকেও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ উৎসবে যোগ দেন। এবছরও তার কমতি হয়নি। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে হাজার হাজার নরনারীর অংশ গ্রহনে স্বর্গপূরী উৎসব সম্প্রীতির মিলন মেলায় পরিনত হয়েছে। এ ছাড়া উৎসবে বিভিন্ন বৌদ্ধপল্লী থেকে দলীয় ভাবে বিভিন্ন সাজে সজ্জিত হয়ে নেচে গেয়ে বৌদ্ধ কীর্তন সহকারে স্বর্গপুরী উৎসবে অংশ নিয়ে স্বর্গের কাল্পনিক রূপ ফুটিয়ে তোলা হয়।
এদিকে ঐতিহ্যবাহী স্বর্গপুরী উৎসব ও বৌদ্ধ মহাসম্মেলন উৎসব মুখর ও শান্তিপুর্ন ভাবে সমাপ্ত হওয়ায় সকল পুন্যার্থী ও পুলিশ প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ।

পিবিএ/এনবিআর/হক

আরও পড়ুন...